স্কুল নির্বাচন
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাঁকুড়ায়, পুরুলিয়ায় ভাল ফল কংগ্রেসের
স্কুল পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে বাঁকুড়ায় জয়ের ধারা অব্যাহত রাখল তৃণমূল। পাশাপাশি বেশ কিছু ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে এসেছে। পুরুলিয়ার স্কুল নির্বাচনেও বামেদের হার চলছে। সেখানে তুলনায় ভাল ফল করেছে কংগ্রেস। তবে এই জেলার অনেক স্কুলেই কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের জোটসঙ্গী তৃণমূলের মুখোমুখি লড়াই হয়েছে।
রবিবার বাঁকুড়ার পাঁচটি স্কুলে ভোট হয়। প্রতিটিতেই জয়ী হয়েছেন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। ওই দিন পাত্রসায়র ব্লকের হদল নারায়ণপুর হাইস্কুলে অভিভাবক প্রতিনিধির ৬টি আসনে নির্বাচন হয়। পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের গোষ্ঠী এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম সিংহের গোষ্ঠী পৃথক ভাবে ৬ জন করে মোট ১২ জন প্রার্থী দেয়। ৬টি আসনের ৫টিতে স্নেহেশবাবুর মনোনীত প্রার্থীরা বড় ব্যবধানে জিতেছেন। একটি মাত্র আসন গিয়েছে অন্য গোষ্ঠীর ঝুলিতে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অচলকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “মোট ভোটার ছিলেন ১২৫৬। ভোট পড়েছে ১০৫০। তৃণমূলের একটি প্যানেলের পাঁচ জন, অন্য প্যানেলের এক জন জয়ী হয়েছেন।”
এই ভোটকে ঘিরে রবিবার দুপুরে ধগড়িয়া এলাকায় তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর ‘আশ্রিত’ দুুষ্কৃতীরা বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ। স্নেহেশবাবুর দাবি, “সিপিএমের দালাল এক নেতা দুষ্কৃতীদের নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছিলেন। আমাদের অফিসিয়াল প্যানেলের প্রার্থীদের জিতিয়ে অভিভাবকেরা ওই নেতা ও তাঁর অনুগামীদের উচিত শিক্ষা দিয়েছেন।” পার্থপ্রতিমবাবুর সঙ্গে এ দিন বারবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
একই ছবি দেখা গিয়েছে সিমলাপাল ব্লকের কুকরাকন্দর হাইস্কুলে। ওই স্কুলেও অভিভাবক প্রতিনিধির ৬টি আসনে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী ১২ জনের পাশাপাশি সিপিএম সমর্থিত ৬ জন প্রার্থী ছিলেন। ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও ৬টি আসনেই জয়ী হয়েছেন সিমলাপাল ব্লক তৃণমূল সভাপতি সনৎ দাসের সমর্থিত প্রার্থীরা। ব্লক সভাপতির বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা অশোক ষন্নিগ্রহীর অনুগামীরা পরাস্ত হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই স্কুলের পরিচালন সমিতি সিপিএমের দখলে ছিল। ব্লক সভাপতির গোষ্ঠীর নেতা দিলীপ পণ্ডার বক্তব্য, “এলাকার মানুষ যে সিপিএম এবং সিপিএমের ‘বি টিম’-এর নেতাদের পছন্দ করছেন না, তা এই ভোটের ফল থেকেই স্পষ্ট।” অশোকবাবুর অবশ্য দাবি, “আমি কোনও গোষ্ঠীর নেতা নই। দলের কেউ কেউ স্থানীয় স্তরে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এটা তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। দলের প্রার্থীরা জিতেছেন এটাই বড় কথা।”
হিড়বাঁধ ব্লকের দেউলি হাইস্কুলের পরিচালন সমিতিও সিপিএমের হাতছাড়া হয়েছে। তৃণমূল ৫টি এবং সিপিএম ১টি আসন পেয়েছে। এই স্কুলে সিপিএম, তৃণমূল, ঝাড়খণ্ড পার্টি ও নির্দল মিলিয়ে ৬টি আসনে মোট ২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অজিত পতির দাবি, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পেরেছি, এটাই বড় কথা। ভোটে হারজিত থাকেই।” শালতোড়া ব্লকের তিলুড়ি কৃপাময়ী হাইস্কুল ও শ্যামপুর হাইস্কুলেও ৬টি আসনেই সিপিএম মনোনীত প্রার্থীদের হারিয়ে জয়ী হয়েচে তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। কৃপাময়ী হাইস্কুলে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল সিপিএম। এ বারই প্রথম তা তাদের হাতছাড়া হল। শ্যামপুর অবশ্য তৃণমূলের দখলেই ছিল।
অন্য দিকে, পুরুলিয়াতেও স্কুল-নির্বাচনে সাফল্য বজায় রেখেছে তৃণমূল ও কংগ্রেস। রবিবার বাঘমুণ্ডি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট হয়। ৬টি আসনের মধ্যে ৫টিতে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থীরা। বাকি আসনটি পেয়েছে বামফ্রন্ট। এখানে লড়াই ছিল ত্রিমুখী। প্রার্থী দিয়েছিল কংগ্রেস, তৃণমূল ও বামফ্রন্ট। ঝালদা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬টি আসনের সব ক’টিতেই জিতেছে কংগ্রেস। এখানেও কংগ্রেস-তৃণমূল সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। একই ভাবে পুরুলিয়ার শহরের হাইমাদ্রাসার নির্বাচনে কংগ্রেস, তৃণমূল ও বামফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই হয়েছিল। কংগ্রেস একাই ৬টি আসন দখল করেছে। শহরের রাজস্থান বিদ্যাপীঠে অবশ্য লড়াই ছিল বামেদের সঙ্গে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের। জোট পেয়েছে সব ক’টি আসন।
প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই সিপিএমের দখলে থাকা বান্দোয়ানের রাজগ্রাম হাইস্কুলের পরিচালন সমিতি এ বার দখল করেছে তৃণমূল। ৬টি আসনেই তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা জিতেছেন। বান্দোয়ান ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি জগদীশ মাহাতোর অভিযোগ, “এত দিন হুমকি দিয়ে সিপিএম অন্য দলকে প্রার্থী দিতে দিত না। এ বারই প্রথম ওই স্কুলের ভোটারেরা স্বচ্ছভাবে মত প্রকাশের সুযোগ পেয়েছেন।” বান্দোয়ানের দায়িত্বে থাকা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কৃষ্ণপ্রসাদ সিংহদেও অবশ্য বলেন, “আমরা অভিভাবকদের সে ভাবে বোঝাতে পারিনি। এ ছাড়া পরিবর্তনের হাওয়াও খানিকটা কাজ করেছে।”
জয়পুর ব্লকের সিধি উচ্চ বিদ্যালয়ে চারটি আসন পেয়েছে তৃণমূল। দু’টি বামফ্রন্ট। এখানেও কংগ্রেস ও তৃণমূল ৬টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছিল। একই ভাবে ত্রিমুখী লড়াইয়ের মধ্যেও বলরামপুরের উরমা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতি দখল করেছে তৃণমূল। একটি আসন পেয়েছে কংগ্রেস। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সুন্দরাবাঁধ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬টি আসনই অবশ্য গিয়েছে বামফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীদের ঝুলিতে। এখানেও লড়াই ছিল ত্রিমুখী।
সাঁতুড়ি ব্লকের বেড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়েও জিতেছে বামফ্রন্ট। সাঁতুড়ি গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির ৮টি আসনের সব ক’টিতেই জয়ী হয়েছে বাম সমর্থিত প্রার্থীরা। তবে এই দু’টি নির্বাচনের ফলেই দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রভাব ফেলেছে বলে আড়ালে মানছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.