বক্সিং ডে টেস্ট শুরুর আগেই নাটকীয় আবহ তৈরি হয়ে গেল টিম ইন্ডিয়াকে ঘিরে। এক দিকে, প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে নেমে মাঠে ব্যর্থ ভারতীয় টপ অর্ডার। অন্য দিকে, জোরালো বিতর্ক লেগে গেল টিম ইন্ডিয়ার সিদ্ধান্তকে ঘিরে।
সোমবার থেকে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান একাদশের বিরুদ্ধে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে নেমে পড়ল টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু মাঠে নামার আগেই একদফা নাটক হয়ে গেল ম্যাচকে ঘিরে। ক্যানবেরায় সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। ৫০ ওভারের বেশি গড়াওয়নি ম্যাচ। কিন্তু মানুকা ওভালের আউটফিল্ডের অবস্থা দেখে ফ্লেচারের মেজাজ এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, কোচ সোজা জানিয়ে দেন টিম মাঠে নামবে না। ম্যাচ না খেলেই ক্যানবেরা ছাড়বে। বদলে মেলবোর্নে গিয়ে প্র্যাক্টিস করবে টিম। অস্ট্রেলিয়ায় অবশ্য ভারতীয় দলের ‘ওয়াকআউটের’ ঘটনা নতুন নয়। ’৮১-তে মেলবোর্ন টেস্টেই আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে মাঠ ছাড়তে চেয়েছিলেন সুনীল গাওস্কর।
এ দিন যদিও শেষ পর্যন্ত ‘ওয়াকআউট’ করেনি টিম ইন্ডিয়া। তবে অবস্থা সামাল দিতে মানুকা ওভালের পিচ কিউরেটর ব্র্যাড ভ্যান ডামকে মঞ্চে নামতে হয়। ব্র্যাডের বক্তব্য অনুযায়ী, ফ্লেচার প্রথমে এসে তাঁর কাছে জানতে চান ম্যাচ কখন শুরু হতে পারে? আবহাওয়াই বা কেমন? “ওঁকে বললাম, আবহাওয়া ঠিক হয়ে যাবে। আর ম্যাচ কখন শুরু হতে পারে, সেটা আম্পায়ারের কাছে জানতে হবে,” বলেছেন ব্র্যাড। তিনিই জানিয়েছেন, ফ্লেচার এক সময় সত্যিই টিম তুলে নিতে চেয়েছিলেন। টিম ইন্ডিয়াও ঠিক করে ফেলেছিল, ম্যাচ খেলবে না তারা। বদলে মেলবোর্নে আগেভাগেই পৌঁছে বক্সিং ডে টেস্টের জন্য নেট শুরু করে দেবে।
শেষ পযন্ত ক্যানবেরাতেই বিতর্ক ঘাড়ে নিয়ে নেমে মাঠে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি ভারতীয় দল। বীরেন্দ্র সহবাগ (১২), গৌতম গম্ভীর (২৪), অজিঙ্ক রাহানে (১৫), ভিভিএস লক্ষ্মণ (১৫)সবাই ব্যর্থ। উজ্জ্বল শুধু দুই তরুণ। বিরাট কোহলির (৫৫ ব্যাটিং) হাফসেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে। সঙ্গে আছেন রোহিত শর্মা (৩৮ ব্যাটিং)। দিনের শেষে ভারত ১৬২-৪। |
এ দিন রান পাননি। কিন্তু ভিভিএস লক্ষ্মণ খোলসা করে দিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর ভাল পারফরম্যান্সের রসায়নটা ঠিক কী। বলছেন, “আপনি সব সময়ই চাইবেন সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিজের সেরাটা বের করে আনতে। যে ক’টা অস্ট্রেলিয়ান টিমের বিরুদ্ধে আমি খেলেছি, প্রত্যেক টিমেই কিছু দুর্দান্ত ক্রিকেটার ছিল। ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা তাই উপভোগ করতাম। সেরাটা আপনাআপনিই তাই বেরিয়ে আসে।” মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়াকে অতীতের অস্ট্রেলিয়ার মতো ভয়ঙ্কর না দেখালে কী হবে, লক্ষ্মণ সে তথ্যে খুব বেশি পাত্তা দিচ্ছেন না। বরং বলেছেন, “অস্ট্রেলিয়ার আসল ব্যাপারটা হল ওদের লড়াকু মনোভাব। কোনও অবস্থাতেই হাল ছেড়ে দেয় না ওরা। আর সেটাই বাকিদের চেয়ে অস্ট্রেলিয়াকে আলাদা করে দেয়। এমনকী অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়েও ওদের মধ্যে এই স্পিরিটটা দেখা যায়।” বিরাট কোহলি আবার সন্তুষ্ট প্রস্তুতি ম্যাচে রান পেয়ে। জানাচ্ছেন, তাঁর আর রোহিতের মধ্যে কোনও প্রতিদ্বন্দিতা তো নেই-ই উল্টে তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতের জাতীয় দলে দু’জনের জায়গাই থাকবে। আসন্ন ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজকে ঘিরে বেটিংও চালু হয়ে গিয়েছে। জুয়ারিদের দর ভারতের দিকে। যা খবর, তাতে এই প্রথম নিজেদের দেশ ভারতের মোকাবলিা করতে নেমে জুয়াড়িদের খাতায় ব্যাকফুটে অস্ট্রেলিয়া।
সচিন তেন্ডুলকর, তিনি কী করছেন? প্র্যাক্টিস ম্যাচে নেই। তাঁকে থামানোর টোটকা বের করতে যখন গ্রেগ চ্যাপেলের দ্বারস্থ অস্ট্রেলিয়া, তখন সচিন ডুবে প্র্যাক্টিসে। এক ক্রিকেট-উৎসাহীর সঙ্গে! যাঁর কি না একটাও প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু ভারতীয় বোর্ড নিযুক্ত রাঘবিন্দ্র অক্লান্ত ভাবে ‘থ্রো-ডাউন’ দিয়ে যাচ্ছেন সচিন এবং দ্রাবিড়কে। যা দেখে অস্ট্রেলিয়ার কাগজে লেখালেখি চালু হয়ে গিয়েছে। ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ যেমন লিখেছে, “রাঘবিন্দ্রকে স্রেফ অস্ট্রেলিয়া উড়িয়ে আনা হয়েছে ওর থ্রো-ডাউন দেওয়ার ক্ষমতার জন্য। মনে করা হচ্ছে, ওর নাম প্রস্তাব দ্রাবিড় আর সচিনই করেছেন।”
|
বোলিংই ভারতের দুর্বল দিক: ওয়ার্ন
সংবাদসংস্থা • মেলবোর্ন |
ব্যাটিং নয়, বোলিংকেই ভারতের দুর্বল দিক বলে মনে করছেন কিংবদন্তি লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন। তাঁর মনে হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া এই ব্যাপারটার ফায়দা তুলতে পারলে বেকায়দায় ফেলা যাবে ভারতকে। “ইংল্যান্ড কিছু দিন আগেই ওদের ৪-০ হারিয়েছে। দুর্দান্ত কিছু বাটসম্যান ভারতীয় দলে আছে ঠিকই কিন্তু আমার মনে হয়, ওদের দুর্বল দিকটা হল বোলিং,” বলেছেন ওয়ার্ন। সঙ্গে যোগ করেছেন, “আর যদি জাহির খান এবং ইশান্ত শর্মার চোট পুরোপুরি না সেরে থাকে, তা হলে তো মনে হচ্ছে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের সু-সময় আসছে।” এ দিকে, শন মার্শ প্রথম টেস্ট খেলতে পারেন। তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। |