করলা নদীতে বিষ মেশানোর অভিযোগে রবিবার ভবেশ বিশ্বাস নামে ৬৫ বছরের কৃষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে পরিবেশ রক্ষা আইন এবং ফৌজদারি ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ দায়ের করে মামলা শুরু করেছে পুলিশ। করলা নদীতে বিষ কান্ডে পুলিশের এই পদক্ষেপে সরকারি মহলেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জলপাইগুড়ি শহরের ইন্দিরা কলোনি এলাকায় করলা নদীবক্ষের ১৫ ফুট চওড়া, ২০ ফুট লম্বা এলাকায় বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেছিলেন ধৃত কৃষক। নদীতে মাছের মড়কের অব্যবহিত পরেই জলপাইগুড়ির একটি কলেজের তরফে সমীক্ষা করে সেই ধানে কীটনাশক দেওয়ার কারনেই মাছের মড়ক হয়েছিল বলে জানানো হয়। যদিও পরে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সমীক্ষা করে জানিয়ে দেয়, নদীবক্ষের একটি ছোট্ট এলাকায় ধান চাষ করে কীটনাশক দেওয়ায় নদী জুড়ে বিষক্রিয়া অসম্ভব। কৃষি দফতরের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সমীক্ষা করে জেলাশাসককে রিপোর্ট দিয়ে একই কথা জানান। তার পরেও পুলিশের ওই কৃষককে গ্রেফতার করার ঘটনায় বিস্মিত সরকারি আধিকারিক থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সমস্ত মহলই। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “তদন্ত চলছে। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বিষ মেশানোর ঘটনায় আরও অনেকেই জড়িত রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সকলকেই গ্রেফতার করা হবে।” মাছের মড়কের পরে করলা নদীর জল পরীক্ষা করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানায়, নদীতে প্রচুর পরিমাণে এন্ডোসালফান নামে নিষিদ্ধ কীটনাশক মেশানো হয়েছিল। মরা মাছের পেটেও এন্ডোসালফান পাওয়া গিয়েছে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বোরো ধানের বীজতলায় সাধারণত এন্ডোসালফান দেওয়া হয় না। তা ছাড়া নদীবক্ষে যে ছোট্ট এলাকায় ভবেশবাবু ধান চাষ করেছিলেন, তাতে বেশি পরিমাণে এন্ডোসালফান দিলে ধানের চারাই পুড়ে যেত। করলা নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে বিষক্রিয়া হয়েছিল। হাজার হাজার মাছের মড়ক হয়েছিল। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “নদীর এত বড় এলাকা জুড়ে বিষক্রিয়ার জন্য ১০-১২ হাজার টাকার এন্ডোসালফান প্রয়োজন। এক জন কৃষক এক চিলতে জমিতে ধান চাষের জন্য এত টাকা দিয়ে কীটনাশক কিনবেন কেন?” কৃষি দফতরের শস্য রক্ষা আধিকারিক তপন সরকার বলেন, “আমরা সমীক্ষা করে জেলাশাসককে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছে, কোনও মতেই ওই ছোট এলাকায় ধান চাষের জন্য নদী জুড়ে বিষক্রিয়া তৈরি হতে পারে না।” ধৃত ভবেশ বিশ্বাসের আইনজীবী অনিন্দ্য মুন্সী বলেন, “ভবেশ বাবু নদীতে ধান চাষ করেছিলেন। বীজতলায় এন্ডোসালফানের মতো কীটনাশক দিলে ধানেরই ক্ষতি হবে। অত পরিমাণ কীটনাশক কেনার সামর্থ্য তাঁর নেই।” এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে শুরু করে কৃষি দফতর এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষা চালিয়ে যে কৃষককে ‘ক্লিনচিট’ দিয়েছিলেন তাঁকে পুলিশ কেন গ্রেফতার করল। |