এতদিনে বোধহয় রাজ্য সরকার সাবালক হল!
গত কয়েক বছরে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ১ টাকা বা সামান্য মূল্যে জমি নিয়ে কলকাতায় হাসপাতাল তৈরি করেছে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা। শর্ত হিসেবে ১৫-২০ শতাংশ শয্যায় নিখরচায় গরিব রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে বলে চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু আদতে তারা কত জন দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা করেছে, তার কোনও হিসাব নেই স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। এমনকী, সরকারের আর্থিক লাভও হয়নি ওই হাসপাতালগুলি থেকে। এমতাবস্থায় সরকারি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্বে (প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপ বা পিপিপি) যাওয়ার শর্ত বদলাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।
নতুন সরকার ঠিক করেছিল, মৃতপ্রায় সরকারি হাসপাতালগুলি চালানোর দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হবে। তার বদলে ওই হাসপাতালে ২০ শতাংশ শয্যায় গরিব রোগীদের নিখরচায় চিকিৎসা দিতে হবে। কিন্তু সেই শর্ত এ বার পাল্টাতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর। ঠিক হয়েছে, গরিব রোগীর নিখরচায় চিকিৎসার বদলে ওই সব সংস্থার কাছে থেকে আয়ের একটা অংশ চাইবে সরকার। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, যে ভাবে অতীতে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে জমি দেওয়া হয়েছে, তাতে সরকারের লাভ হয়নি। উল্টে বদনামের ভাগী হয়েছে। প্রথমে প্রথমে কোথাও কোথাও স্বাস্থ্য দফতর চিকিৎসার জন্য রোগী পাঠাতো। কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার পরে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, “ওই সব জমি কিংবা পুরনো হাসপাতাল বিভিন্ন সংস্থার কাছে বিক্রি করলে তাতে রাজ্য সরকারের লাভ হত। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন নীতি নিচ্ছি।”
কয়েক মাসে আগে মৃতপ্রায় হাসপাতালগুলি বেসরকারি হাতে দেওয়ার সময় এই সমস্যাগুলির ব্যাপারে তাঁরা জানতেন না? এর জবাবে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, সেই সময় এই বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখেননি। পরে সকলের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে লোকসানের কথা জানা যায়। তার পরেই শর্ত বদলের সিদ্ধান্ত নেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে নতুন চুক্তি কী হবে? স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র বলেন, “হাসপাতাল চালানোর বিনিময়ে বেসরকারি সংস্থাকে বাৎসরিক আয়ের নির্দিষ্ট অংশ স্বাস্থ্য দফতরের অ্যাকাউন্টে দিতে হবে। সরকারি হাসপাতাল থেকে কোনও গরিব মানুষকে ওই হাসপাতালে পাঠানো হলে সরকারি অ্যাকাউন্টে জমা সেই টাকা দিয়েই তাঁর চিকিৎসা হবে। এতে কোন হাসপাতাল কত গরিব মানুষের চিকিৎসা করছে তারও হিসেব থাকবে।”
কিন্তু যে সব বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে এখন সরকারের চুক্তি রয়েছে সেগুলির ক্ষেত্রেও কি একই নিয়ম বলবৎ হবে? স্বাস্থ্যকর্তারাই বলছেন, মউ বা মেমোর্যান্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং মানে দুই পক্ষের সম্মতিতে হওয়া চুক্তি। অর্থাৎ এই চুক্তি বদলাতে গেলেও দু’পক্ষের সম্মতি প্রয়োজন। তাই ইতিমধ্যে হয়ে যাওয়া মউ বদলানো মুশকিল। নতুন নিয়মে মউ করতে চাইলে কি বেসরকারি হাসপাতালগুলি রাজি হবে?
বেসরকারি হাসপাতালগুলির অনেকেই সরকারি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন। তাঁদের মতে, এই প্রস্তাব অনেক বাস্তবসম্মত। ক্যালকাটা মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা কলকাতা হাসপাতালের তরফে রূপক বরূয়া বলেন, “এটাই এখন সবচেয়ে আধুনিক ও গ্রহণযোগ্য মডেল।” রুবি জেনারেল হাসপাতালের তরফে সিইও স্বরাজব্রত পুরকায়স্থ বলেন, “সরাসরি গরিব রোগীদের চিকিৎসা করার পরিবর্তে আয়ের একাংশ সরকারকে দিয়ে দেওয়া অনেক ভাল।” |