রাজনৈতিক ছাতা বদলে রাজপাটে বহাল ‘বাদশা’
খোঁড়া বাদশা।
‘খোঁড়া বাদশা’ কার? যে ‘ক্ষমতা’য় তার। চোলাই ব্যবসার ‘চাঁই’ ‘খোঁড়া বাদশা’ ওরফে নুর ইসলাম ফকির সম্পর্কে এমন নানা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে মগরাহাট এলাকায়। আর তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, চোলাইয়ের নেশা বাড়ানোর জন্য বুধবার মগরাহাটের একটি ভাটিতে চোলাইয়ে কীটনাশক মিশিয়েছিল ‘বাদশা’। ‘ভুল করে’ তার প্রথম স্ত্রী
নুরজাহান বিবি ওই চোলাইয়েই ফের কীটনাশক মেশানোয় ঘটে ‘বিভ্রাট’।
শনিবার ওই বিষমদ-কাণ্ডে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে। সব মিলিয়ে শনিবার রাত পর্যন্ত ওই ঘটনায় মৃত ১৭০। আর এই ঘটনার নেপথ্যে ‘বাদশা’ রয়েছে জানাজানির পরেই শুরু হয় রাজনৈতিক চাপান-উতোর। ‘বাদশা’ কোন পক্ষে, তা নিয়ে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব বলতে শুরু করেন, “কে না জানে বাদশা কাদের হাত ধরে বাদশা হয়েছে? বাদশার উত্থান তো পুরোটাই বাম-জমানায়।” পক্ষান্তরে দলীয় মুখপত্রে সিপিএমের অভিযোগ, ‘তৃণমূলের মদতেই খোঁড়া বাদশার সাম্রাজ্য’। যদিও এলাকাবাসী এবং জেলা পুলিশের একাংশ বলছেন, শুধু ‘আশ্রয়দাতা’ বদলেছে ‘বাদশা’। চোলাই ব্যবসার স্বার্থে এক দিন সে যে পক্ষে ছিল, ‘হাওয়া খারাপ’ বুঝে তাদের বিপরীত পক্ষের ‘ঘনিষ্ঠ’ হতে তার সময় লাগেনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, বোমা বানানোয় দক্ষ ছিল নুর ইসলাম ফকির। ১৯৯০-এ বোমা ফেটেই তার ডান পা উড়ে যায়। ‘পেশা’ বদলে চোলাই বিক্রি শুরু করে সে। পরে ভাটি খোলে। অপরাধ জগতে ক্রমশ তার ‘পরিচিতি’ হয় ‘খোঁড়া বাদশা’ নামে। ১৮-২০ বছরের অপরাধ-জীবনে ‘রাজনৈতিক ছাতা’র অভাব হয়নি ‘বাদশা’র। বিষমদ-কাণ্ডে ইতিমধ্যেই ১৩ জনকে ধরেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, ন’টি ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার ‘বাদশা’র।
তার দুই স্ত্রীর এক জন মামুদপুর, অন্য জন বারুইপুরের বাসিন্দা। বছর পঞ্চাশের ‘বাদশা’ নিজের শ’পাঁচেক ঠেক আর তিনটি ভাটি নিয়মিত দেখাশোনা করে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, নব্বইয়ের দশক থেকেই ‘বাদশা’র সঙ্গে সিপিএমের ‘ঘনিষ্ঠতা’। সিপিএমের মগরাহাট পূর্ব জোনাল কমিটির এক নেতার সঙ্গে তার ‘ওঠাবসা’ ছিল বলে নিয়মিত অভিযোগ করত সে সময়ের বিরোধী দল তৃণমূল। বছর দু’য়েক আগে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই নেতাকে। সম্প্রতি সিপিএম থেকেও বহিষ্কার করা হয়। ওই প্রাক্তন জোনাল নেতার বিরুদ্ধে ‘দলবিরোধী’ কাজকর্ম এবং ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ আছে বলে জানিয়েছেন সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী। যদিও ঠিক কী কারণে সরানো হল ওই জোনাল নেতাকে, স্পষ্ট উত্তর দেননি তিনি। সিপিএম সূত্রের খবর, ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় দলের ‘ভরাডুবি’র পরে দলীয় পুনর্মূল্যায়নে ‘বাদশা’র সঙ্গে দলীয় নেতার ‘ঘনিষ্ঠতা’র প্রসঙ্গ ওঠে। জেলা সিপিএমের আরও কিছু শীর্ষ নেতার নানা কর্মসূচিতেও বাদশা ও তার লোকজনকে দেখা যেত বলেও ওঠে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই ‘খোঁড়া বাদশা’র সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের ‘দহরম-মহরম’ শুরু। মগরাহাট পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক নমিতা সাহার বাড়ির কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই চোলাইয়ের এই বড় কারবারির বাড়ি। যদিও ‘খোঁড়া বাদশা’র নাম শুনে নমিতাদেবীর প্রতিক্রিয়া, “এমন কারও নামই শুনিনি!” মগরাহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের খইরুল হকের সঙ্গেও বাদশার ‘মেলামেশা’ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে সিপিএমের। খইরুল বলেন, “ওই নামে এক জন ব্যবসা করে বলে শুনেছি। ওকে চিনি। কিন্তু আমাদের দলের কোনও কর্মসূচিতে ও বা ওদের কেউ থাকে না।”
এত দিন ‘বাদশা’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন? জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কী করা যাবে? আগে ওকে বাঁচাতে এক দলের ফোন আসত। এখন ওর ব্যবসায় যাতে অসুবিধা না হয়, দেখতে বলে অন্য দল। পরিস্থিতি বদলাল কোথায়?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.