বিষ মদ কাণ্ড নিয়ে সোমবার বিধানসভার ভিতরে সরকার কী বলে, তা দেখেই সর্বদল বৈঠকে যাওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বাম পরিষদীয় দল।
পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, সিপিএম ‘পরিকল্পনা’ করে চোলাই মদে রাসায়নিক বিষ মিশিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিষ মদ কাণ্ড নিয়ে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, তখন পার্থবাবু কী করে আগ বাড়িয়ে ওই অভিযোগ করলেন সোমবার বিধানসভার অধিবেশন শুরুর পরেই বামফ্রন্ট একযোগে এই প্রশ্ন তুলবে। সরকারের তরফে ওই প্রশ্নের কী জবাব দেওয়া হয়, পার্থবাবু তাঁর অভিযোগ প্রত্যাহার করেন কিনা, সামগ্রিক ভাবে রাজ্য সরকারের মনোভাব কী, সে সব দেখেই পরেই বাম পরিষদীয় দল সর্বদল বৈঠকে যাওয়া, না-যাওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
সর্বদল বৈঠকে যাওয়ার ব্যাপারে শরিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে শনিবার সন্ধ্যায় আলিমুদ্দিনে বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। বৈঠকে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বিধানসভার বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, সরকার নানা ভাবে বিধানসভার ‘অমর্যাদা’ করছে। বিরোধীদেরও ‘মর্যাদা’ দিচ্ছে না। বৈঠকে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, আরএসপির ক্ষিতি গোস্বামী, ফরওয়ার্ড ব্লকের হাফিজ আলম সৈরানি, সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শরিক নেতারা বলেন, তাঁরা সাধারণ ভাবে সর্বদল বৈঠক বয়কটের পক্ষে নন। কিন্তু পরিষদীয় মন্ত্রী আগ বাড়িয়ে সিপিএমের উপরে দোষ চাপালে বৈঠকে যাওয়া অর্থহীন। তখনই ঠিক হয়, সোমবার সকাল ১১টায় বিধানসভার অধিবেশন শুরু হলেই তাঁরা একযোগে পার্থবাবুর বক্তব্যের ‘প্রতিবাদ’ জানাবেন।
সাধারণত সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরের দিন। সেই সূত্রেই বাম নেতারা ভেবেছিলেন, তাঁরা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই বিষয়টি জানতে চাইবেন। কিন্তু মাতৃবিয়োগের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ওই দিন বিধানসভায় যাবেন না। ফলে বিষয়টি পার্থবাবুর কাছেই জানতে চাইতে পারেন বাম বিধায়করা। শরিক দলের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, “বিধানসভা বসবে ১১টায়। আর সর্বদল বৈঠকে ডাকা হয়েছে দুপুর ২টোয়। ফলে সরকারের কী অবস্থান, তা বৈঠকের আগেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। সেই মতোই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” শুক্রবার বাম পরিষদীয় দল ঠিক করেছিল, তারা স্পিকারের সর্বদল বৈঠকে যাবে। অতীতে তৃণমূলের মতো বৈঠক বয়কটের পথে হাঁটবে না। বরং বৈঠকে গিয়ে বাম নেতৃত্ব তাঁদের প্রতিবাদ জানানোর পরে সরকার পক্ষের সুর ‘নরম’ হলে তাঁরা নিজেদের মতামত জানাবেন। নইলে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন।
বামেদের মধ্যে একাংশের অভিমত ছিল, অতীতে সব সময়ে তারা সর্বদল বৈঠকে গিয়ে সরকারকে মতামত জানিয়েছে। কিন্তু এ বার পরিষদীয় মন্ত্রী আগ বাড়িয়ে বিষ মদে মৃত্যুর পিছনে সিপিএমকে দায়ী করায় সর্বদল বৈঠকে গিয়ে লাভ নেই। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মূলত সূযর্বাবুর অনুরোধেই এ দিন বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকের পরে বিমানবাবু অভিযোগ করেন, “বিষ মদ কাণ্ডে মৃত্যুর খবর জানার পরেও ঠিক সময়ে রাজ্য সরকার ব্যবস্থা নেয়নি। মেডিক্যাল টিম পাঠাতেও দেরি হয়েছে। ঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে এত গরিব মানুষের জীবনহানি হত না।” বিমানবাবু জানান, বামফ্রন্ট রাজ্য সরকারের এই ‘অবহেলার’ দৃষ্টিভঙ্গির নিন্দা করছে। আগামী সোম থেকে বুধবার তিন দিন রাজের সর্বত্র বামফ্রন্ট এ ঘটনা নিয়ে প্রচার করবে। সর্বদল বৈঠখে যাওয়া নিয়ে বিমানবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সর্বদল বৈঠকে যোগ দেওয়া বা না-দেওয়ার ব্যাপারে আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। বৈঠকে পরিষদীয় দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারাই সোমবার সিদ্ধান্ত নেবে।” পার্থবাবুর অভিযোগ সম্পর্কে বিমানবাবু বলেন, “আমি কোনও মন্তব্য করব না। মুখ্যমন্ত্রী সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা চাই সিআইডি তদন্ত করে এ ঘটনার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়া হোক।”
প্রসঙ্গত, বামফ্রন্টের বৈঠকে চাষিদের কৃষিপণ্যের দাম না-পাওয়ার বিষয়টিও আলোচিত হয়। বিমানবাবু বলেন, “ধান, পাট, আলুর দাম পড়ে গিয়েছে। জেসিআই পাট কিনছে না। রাজ্য সরকারও ধান কিনছে না। লক্ষ লক্ষ কৃষক চরম সঙ্কটে। রাজ্য সরকার অবিলম্বে ধান না-কিনলে সঙ্কট আরও বাড়বে।” তাঁর আরও অভিযোগ, নতুন জোট সরকার এসেছে সাত মাস। এর মধ্যেই রাজ্যে সাত জন কৃষক অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যা করেছেন। |