হলিউডের প্রয়াত অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলর-এর বিখ্যাত এবং খুবই কাঙ্ক্ষিত একটি হিরের লকেট নিলামে বিক্রীত হইয়াছে অবিশ্বাস্য অর্থমূল্যে। ভারতীয় মুদ্রায় ৪৭ কোটি টাকা। এই হিরেটি অভিনেতা রিচার্ড বার্টন তাঁহার স্ত্রী লিজ টেলর-এর চল্লিশতম জন্মদিনে তাঁহাকে উপহার দিয়াছিলেন। প্রেমের প্রতীক স্বরূপ এই হিরেটি উপহার দেওয়ার সময় রিচার্ড বার্টন বলিয়াছিলেন যে, তিনি তাঁহার স্ত্রীকে আসলে দিতে চাহিয়াছিলেন আস্ত তাজমহলটিই, কিন্তু সেটি উড়াইয়া আনিবার মূল্য বড় বেশি, তাই তিনি এই ‘তাজমহল’ হিরেটি উপহার দিলেন। তখনই এই হিরেটিতে নূতন মহিমা অর্পিত হইয়া গেল। ইতিপূর্বে এলিজাবেথ টেলর-এর গহনা বহু বহু মূল্যে নিলামে বিক্রয় হইয়াছে। এই বারেও তাহার ব্যত্যয় ঘটিল না।
নিলামে একটি হিরে তাহার উপযুক্ত বাজার মূল্যের তুলনায় এত বেশি দামে বিক্রয় হইল কেন? নিছক বিনিয়োগ হিসাবে? ভবিষ্যতে উহা আরও বেশি দরে বিক্রয় করিয়া লাভ হইবে বলিয়া? ইহা উত্তর হইতে পারে, কারণ নহে। প্রকৃত কারণটি সম্ভবত ইহাই যে, মূল্যটি হিরের নয়, আকাঙ্ক্ষার। যাহা বিশ্বের অনন্য এক অভিনেত্রী, অধরা এক সুন্দরী দেহে ধারণ করিয়াছেন, যাহা সেই হিরের রূপ ও সম্মানকে কয়েকশো গুণ বাড়াইয়া দিয়াছে, তাহাকে আয়ত্ত করাই তো আসল প্রাপ্তি, আকাঙ্ক্ষার পূর্তি বলিয়া গণ্য হয়। যদি রানা প্রতাপ সিংহের পুরানো জং ধরা তলোয়ার নিলামে উঠে, তবে তাহার দামও আকাশ ছুঁইবে, সন্দেহ নাই। জং-ধরা তলোয়ারের দাম নয়, উহা রানা প্রতাপের শৌর্যের দাম। তাঁহার শৌর্যকে ছুঁইতে পারার পূর্ণতাবোধ।
এই পূর্ণতা লাভ করিবার ইচ্ছাটি আর আকাঙ্ক্ষায় সীমাবদ্ধ থাকে না। তাহা উচ্চাকাঙ্ক্ষায় রূপান্তরিত হয়। সাধারণ ভাবে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বলিলে বুঝায় সাধারণ মানের তুলনায় উচ্চ কোনও লক্ষ্য বা কর্মে উপনীত হওয়ার চাহিদা। যে সকল মানুষ কৃতী ও বড় হইয়াছেন তাঁহারা নিজেদের লক্ষ্য স্থির করিয়া আগাইয়া গিয়া উদাহরণ স্থাপন করিয়াছেন। কিন্তু এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার সহিত অঙ্গাঙ্গি জড়িত রহিয়াছে অন্য এক প্রকার উচ্চাকাঙ্ক্ষা। এই দ্বিতীয় প্রকার উচ্চাকাঙ্ক্ষাটি উৎসারিত হয় প্রথম ধরনটিকে ছুঁইবার নিমিত্ত। অর্থাৎ, হয়তো রাজরাজড়াদের ন্যায় বিত্ত উপার্জন করিয়াও তাঁহাদের মতো শৌর্য উপার্জন করা গেল না। বিপুল ঐশ্বর্য হস্তগত করিয়াও খ্যাতির সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানো গেল না। এই দ্বিতীয় প্রকার খেদ মিটাইতে উৎসারিত হয় দ্বিতীয় প্রকার উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রথম ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা যাঁহাদের প্রাপ্তি হইয়াছে, তাঁহাদের সহিত সম্পৃক্ত কোনও বস্তু নিজের নিকট রাখিলে যদি সেই কৃতির স্পর্শ কিয়ৎ সান্ত্বনা পুরস্কারস্বরূপও লাভ হয়, তাহাই প্রাপ্তি। নিলাম সেই সুবিধাটুকু করিয়া দিয়াছে। বহুল অর্থ ব্যয় করিয়া যদি এলিজাবেথ টেলরের অধরা রূপ ও বেপরোয়া সাহসের কিয়ৎ আঁচ অর্জন করা যায়, তাহাই বা কম কী! আয়ত্ত করিতে হইলে তো এমন কিছু আয়ত্ত করা উচিত, যাহা অন্যে পারিবে না। উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রাথমিক শর্ত তো তাহাই। |