আমার ছেলেবেলা আর আজকের যুগের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ বছরের তফাত। আজকের কলকাতার বুকে হাঁটলে বোঝা যায় মধ্যবিত্তের আর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। হাতে টাকা আর বাজারে দিশি-বিদেশি সামগ্রীর বাহুল্য প্রকট ভাবে চোখে পড়ে। অনেকেই এখন গাড়ি করে যাতায়াত করেন, ঘরে ঘরে টেলিভিশন। এই কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের যুগে আমরা বেশির ভাগ সময়টাই বসে কাটাই। অঢেল খাবারের দোকান, ফোন করে অর্ডার দিলেই হল, সোফায় বসেই টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া সেরে নেওয়া যায়। আজ বিরিয়ানি, কাল চাইনিজ আর পরশু দিন মোগলাই‘অল্পেতে খুশি হবে দামোদর শেঠ কি? মুড়কির মোয়া চাই, চাই ভাজা ভেটকি’ গত পঞ্চাশ বছরেই অনেকটা বদলেছে মানুষের স্বভাব, বদলেছে খাবারের ধরন। তা হলে খাদ্য ক্রমবিবর্তন কী ভাবে ঘটেছে? প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ কী খেত? তখন তো আনাচে-কানাচে রোল-এর দোকান, পিৎজা আর কোকাকোলা মিলত না! আজ থেকে ৪০ লক্ষ বছর আগে বর্তমান মানুষের পূর্বপুরুষ হাতের কাছে যা পেত তাই নির্মম ভাবে খেত। কিন্তু প্রায় ২০ লক্ষ বছর আগে (প্যালিয়োলিথিক যুগে) আমরা পাথরের ব্যবহার শিখি। তারই সঙ্গে দেখা যায় যে মানুষ পশু পাখির মাংস খেতে শুরু করে। ধারালো পাথর দিয়ে শিকার করা যায় আর মাংস কাটা যায়। তাই মাংস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। প্রধানত মাংস আর তার সঙ্গে কাঁচা ফলমূল, এই ছিল প্যালিয়োলিথিক পথ্য। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের চল ছিল না একেবারেই। তাই অনাদিকাল ধরে আমাদের জেনোম প্রধানত মাংসের প্রোটিন প্রোসেস করার জন্যে বিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু বিবর্তনের নিয়ম হল পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে চলা। আমাদের পরিবেশে যে খাবার মেলে আমরা তাই খেতে শিখি আর আমাদের জেনেটিক ম্যাপ সেই ভাবে স্থাপিত হয়। আজ থেকে প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে মানুষ মাছ খেতে শেখে। আর মাত্র ১০ হাজার বছর আগে চাষবাস আর পশুপালন শুরু হয়। তখন থেকে আমাদের দৈনন্দিন খাবারে কার্বোহাইড্রেট, শস্য, চিনি এবং দুধ জাতীয় দ্রব্য আসতে শুরু করে। তাই মানুষের ক্রমবিবর্তনের ৪০ লক্ষ বছরের ইতিহাসে কৃত্রিম ভাবে তৈরি খাবার কিন্তু তুলনামূলক ভাবে আধুনিক। কৃষি বিপ্লবের সঙ্গে তাল রেখে আমাদের জেনোম-এর মিউটেশন হতে আরম্ভ করে। দুধ, শস্য আর স্টার্চ হজম করতে সাহায্য করে যে সব জিন, তাদের প্রাধান্য বাড়তে থাকে। অথচ যে সব উপজাতি, যেমন উত্তর নরওয়ের ‘সামি’ অথবা সাইবেরিয়ার ‘এভেনকি’ উপজাতি যারা বরফ জমা অঞ্চলে বসবাস করে, যাদের এখনও প্রধানত মাংস খেয়েই জীবন ধারণ করতে হয়, কারণ ওই সব এলাকায় গাছপালা গজায় না, তাদের জেনোম-এ কিন্তু এখনও মাংস প্রসেস করার জিন অটুট আছে। তরিতরকারি বা দুধ জাতীয় খাবার খাওয়ার জিন ক্রমবিবর্তনের ছকে নির্বাচিত হয়নি। যদিও সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ অত্যধিক মাংস খেলে কিডনিতে ইউরিক অ্যাসিড জমে পাথর হয়, সামি উপজাতির মানুষের মধ্যে কিন্তু এই রোগ সচরাচর দেখা যায় না। অন্য দিকে অত্যধিক মাত্রায় প্রোটিন খেলে ভারতীয়দের সাধারণত কিডনি স্টোন হয়। কারণ, গত কয়েকশ বছর ধরে ভারতীয়রা, বিশেষত হিন্দুরা প্রধানত নিরামিষ খাবারে অভ্যস্ত। আমাদের জেনোম সেই ভাবেই তৈরি হয়ে উঠেছে। তাই ভারতীয় জেনোম-এ চর্বি জাতীয় খাবার হজম করার জিন সাধারণ ভাবে বিকশিত হয় না। তবে বিরিয়ানি খাওয়ার আগে কি আর এই সব মনে থাকে? খিদের মুখে গরম রোলের গন্ধ অগ্রাহ্য করে কি আর গাজর খেতে ইচ্ছে করে?
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকালে ভারতে শতকরা ৬৬ ভাগ লোক দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়েছিল। ফলে খাবার মেলা অত্যন্ত কঠিন ছিল। গর্ভবতী মেয়েরা পরিমাণ মতো বা পুষ্টিকর খাবার পাননি। সদ্যোজাত শিশুরা পাশ্চাত্য দেশের শিশুদের তুলনায় অনেক রুগ্ণ ছিল। গত ৩০০ বছর ধরে ভারতীয়রা এই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলেছে। এই সময়ে ভারতে পুরুষ মানুষের ক্রমবৃদ্ধি গড়পড়তায় প্রায় ২ সেন্টিমিটার কমে গিয়েছে প্রতি ১০০ বছরে। তাই হঠাৎ করে আমাদের শিশুরা যদি প্রচুর ফ্যাট আর শুগার দেওয়া খাবার খেতে শুরু করে, তবে এরা সহজেই ওবিজ বা অতিরিক্ত মোটা হয়ে উঠবে, বাড়বে ডায়াবিটিস আর হৃদরোগ। দক্ষিণ ভারতে বিশেষ ভাবে এটাই ঘটেছে। যদিও প্রায় গোটা দেশেই ডায়াবিটিস-এর প্রভাব প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। ভারত আজকে দুনিয়ার ডায়াবিটিস রাজধানী! বিগত পঞ্চাশ বছরে ভারতে এই রোগ দশ গুণ বেড়েছে। যদিও প্রধানত শহর ও শহরতলিতেই এই রোগ বেশি দেখা যায়, গ্রামেও এর প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। কেরলের এর্নাকুলাম অঞ্চল থেকে গত ৩০ বছরে অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করতে গিয়েছেন। ফলে অর্থনৈতিক উন্নতি অবশ্যই হয়েছে, কিন্তু সঙ্গে এসেছে ডায়াবিটিস। আজকে এর্নাকুলামে শতকরা ২০ ভাগ লোক এই রোগে ভুগছেন। আসলে পৃথিবীর যে প্রান্তেই ঘটেছে অর্থনৈতিক উন্নতি সেখানেই অনিবার্য ভাবে এসেছে এই অসুখ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ আমাদের দিয়েছিল দুর্ভিক্ষ, গ্লোবালাইজেশন আমাদের দিল ডায়াবিটিস। |
ভারতে শতকরা ৯০ ভাগ ডায়াবিটিসই হল টাইপ-টু। যে রোগের কোনও আরোগ্য নেই অথচ যা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমরা যখন খাই, শরীরের মধ্যে চিনি আর স্টার্চ জাতীয় খাবার ভেঙে গ্লুকোজ তৈরি হয়, যা হল শরীরের প্রধান জ্বালানি। ইনসুলিন-এর কাজ হল রক্তের মধ্যে থেকে এই গ্লুকোজ নিয়ে জীবকোষের ভেতরে পাচার করা। জীবকোষ এই গ্লুকোজ ভাঙিয়ে শরীরে শক্তি উৎপাদন করে। তবে এর একটা মাত্রা আছে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ যত বেশি হবে, ইনসুলিনের পক্ষেও জীবকোষের ভিতরে প্রবেশ করা ততটাই কঠিন হবে। যে খাবারে যত বেশি চিনি অথবা স্টার্চ থাকবে (যেমন সাদা পাউরুটি, আতপ চাল বা রসের মিষ্টি) সে খাবার থেকে তত বেশি গ্লুকোজ তৈরি হবে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, যে যেহেতু গ্লুকোজ শরীরের জ্বালানি, তাই এই গ্লুকোজ খরচা না হলে (যেমন সারা দিন বসে বসে টিভি দেখলে) রক্তে গ্লুকোজ জমে থাকবে। রক্তে জমে থাকা গ্লুকোজ হল টাইপ-টু ডায়াবিটিসের প্রধান ইঙ্গিত। খাবার থেকে উৎপন্ন গ্লুকোজ দু’রকম ভাবে মাপা হয়। এক হল গ্লিসারিন ইনডেক্স: ময়দার চেয়ে আটার গ্লিসারিন ইনডেক্স কম এই ভিত্তিতে ময়দার রুটি আর আটার রুটির তুলনামূলক বিচার। অন্যটা হল গ্লিসারিন লোড: কতটা খাবার, এক হাতা ভাত না চার হাতা ভাত। তবে মনে রাখতে হবে যে কম গ্লিসারিন ইনডেক্সের খাবারও অতিমাত্রায় খেলে গ্লিসারিন লোড বেশি হয়ে ক্ষতি একই হবে। যেমন ব্রাউন ব্রেডের গ্লিসারিন ইনডেক্স কম বলে চার টুকরো ব্রাউন ব্রেড খেয়ে ফেললে কোনও লাভ হবে না। আবার বেশি গ্লিসারিন ইনডেক্সের খাবার নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খেলে ক্ষতি এড়ানো যাবে। যেমন আতপ চাল (যার গ্লিসারিন ইনডেক্স হাই) কম করে খেলে কিন্তু গ্লিসারিন লোড কম হবে।
আমাদের দেশে এখন প্রায় ৫ কোটি লোক এই রোগে ভুগছেন। কে জানে আরও কত লোকের অসুখ ধরাই পড়েনি। আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৮ কোটিতে দাঁড়াবে বলে বলা হচ্ছে। তার মানে গোটা পৃথিবীর ২০-২৫ শতাংশ ডায়াবিটিস রোগীর ঠিকানা হবে এই দেশ। অথচ এই অসুখ কিন্তু এত দিন কেবল বড়লোক পশ্চিমি দেশগুলোতেই হত।
এ কথা অনস্বীকার্য যে আমাদের দুর্দান্ত অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। আমরা এখন পাশ্চাত্য সভ্যতার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারি। তবে ডায়াবিটিস আর হৃদরোগ যদি বৈভবের চিহ্ন হয় তা হলে সেটা গর্বের কথা নয়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ মেলে মরিশাসের ভারতীয়দের থেকে। ১৮৩০ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকালে ভারতীয়দের মরিশাস নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আখের খেতে কাজ করবার জন্য। ক্রমশ চিনির ব্যবসায়ে অসামান্য সাফল্য লাভের ফলে ১৯৮০-র দশকে মরিশাসের ভারতীয়রা বেশ বর্ধিষ্ণু হয়ে ওঠে। তারই সঙ্গে দেখা দেয় ডায়াবিটিসের প্রকোপ। শতকরা ১৪% ভাগ ভারতীয়ের মধ্যে এই রোগ ধরা পড়ে। তুলনায় সেখানে বসবাসকারী ইউরোপীয়দের মধ্যে কিন্তু এই অসুখ ততটা ধরা পড়েনি। মরিশাসের পার ক্যাপিটা বা মাথাপিছু রোজগার আমাদের দেশের তুলনায় চার গুণ। ডায়াবিটিসে আক্রান্তের সংখ্যাও চার গুণ! শতকরা প্রায় চব্বিশ ভাগ মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
পাশ্চাত্য দেশে ও সমাজে ইদানীং এই রোগ কিন্তু ইদানীং গরিবের অসুখ। কারণ, শিক্ষিত সমাজে ১৯৮০-র দশক থেকে এই রোগ নিয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ায় হ্যামবার্গার আর পিৎজা খাওয়ার চল অনেক কমে গেছে। ভারতে কিন্তু আমরা ঠিক উল্টো পথে চলেছি। গরিবের তুলনায় শিক্ষিত ও বিত্তবান লোকেদের মধ্যে ডায়াবিটিসের আক্রমণ ১০ গুণ বেশি। অথচ বিস্ময়ের কথা এই যে ভারতে শহরবাসীদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ লোক ডায়াবিটিস কাকে বলে জানে না।
ভারতে ডায়াবিটিস ছড়ানোর মধ্যে একটা বিশেষত্ব আছে। এত দিন জানা ছিল যে এই রোগ মধ্যবয়স্কদের মধ্যেই বেশি দেখা দেয়। এরা বর্ধিষ্ণু সরকারি বা বেসরকারি কোম্পানির এক্সিকিউটিভ। সন্ধেবেলা হুইস্কি অথবা রেস্তোঁরা বা ক্লাবে ভালোমন্দ খাওয়াটা চলেই থাকে, তাই এঁদের মধ্যে ডায়াবিটিস ছড়ানো আশ্চর্য নয়। অথচ দেখা যাচ্ছে যে ভারতে তরুণদের মধ্যেও সাংঘাতিক ভাবে ডায়াবিটিস ধরা পড়ছে। এরা ১৭ থেকে ২৫ বছরের যুবক-যুবতী। এই ঘটনা আগে কোনও দেশে এত ব্যাপক ভাবে দেখা যায়নি। তবে শুধু ভারতের মাটিতেই নয়, ব্রিটেনে বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যেও পাশ্চাত্যের তরুণ-তরুণীদের তুলনায় ডায়াবিটিসের আক্রমণ ৫ গুণ বেশি। পাশ্চাত্যে যদিও ডায়াবিটিস ওবিজ বা অতিরিক্ত মোটা লোকেদের মধ্যেই বেশি, ভারতীয়দের ক্ষেত্রে কিন্তু স্থূলতার সঙ্গে ডায়াবিটিসের সম্পর্ক অনেক কম। আর একটা বৈশিষ্ট্য হল যে ভারতীয়দের মধ্যে তুলনামূলক ভাবে ডায়াবিটিসের সঙ্গে সম্পর্কিত হৃদরোগ বা করোনারি রোগ অনেক বেশি দেখা যায়। পাশ্চাত্য দেশে ডায়াবিটিসের ফলে প্রধানত চোখের রোগ (অন্ধত্ব) আর কিডনির অসুখ দেখা যায়। মোদ্দা কথা হল ভারতীয় শারীরিক গঠন ও জেনোমের আধুনিক কৃত্রিম খাবার বা হাই প্রোটিন পথ্য সহ্য করার কোনও কলকাঠি নেই। একই সঙ্গে টেলিভিশন ও কম্পিউটারের সামনে সারা দিন বসে থাকার ফলে গ্লুকোজ শুধু জমেই চলেছে, খরচ আর হচ্ছে না। খেটে খাওয়া মজদুর ও কৃষকের মধ্যে ডায়াবিটিস কিন্তু অনেক কম।
ডায়াবিটিসের ফলে শুধু শারীরিক নয়, অর্থনৈতিক লোকসানও ব্যাপক হারে হচ্ছে। এই দশকে ভারতে আনুমানিক ১৫০ লক্ষ কোটি টাকার লোকসান হবে শুধু ডায়াবিটিস রোগ সামলাতে। এর মধ্যে সরাসরি ৯ হাজার কোটি টাকা খরচা হবে চিকিৎসার খাতে। প্রত্যেক রোগীর চিকিৎসায় প্রতি বছর শহরের হাসপাতালে প্রায় ১৫,০০০ টাকা লাগে আর গ্রামেগঞ্জে লাগে ৮,০০০ টাকা। রোগ যত দিন থাকবে খরচাও বেড়ে চলবে। গড়পড়তায় রোজগারের প্রায় ৩০% প্রতি বছর খরচা হয় শুধু ডায়াবিটিসের চিকিৎসায়।
এক সময় ফাস্ট ফুড খাওয়া বিত্তবান পাশ্চাত্য দেশের প্রতীক ছিল। চটপটে খাবার সস্তায় মেলে বলে আর রঙিন বিজ্ঞাপনের প্রভাবে এই ধরনের দোকান সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে গিয়েছে। এক সময়ে হ্যামবার্গার আর কোলা হাতে নিয়ে মনে হত হলিউডি স্বপ্ন বাস্তবে ভোগ করছি। আজ সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে। খোদ পশ্চিমে এখন ফাস্ট ফুডের রমরমা কমেছে, ফল সবজি খাওয়ার চলন বেড়েছে। মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়, পশ্চিমে ব্যবসা মার খাচ্ছে বলে কি ফাস্ট ফুডের কোম্পানিগুলো আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে? যেমন সিগারেটের কোম্পানিগুলো করেছে। পশ্চিমে এখন সিগারেটের বিক্রির হাল খারাপ। সেই ক্ষতি পূরণ করতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দ্বিগুণ মাত্রায় সিগারেট বেচতে হয়। তামাক বিড়ি থেকে সিগারেটে ‘ওঠার’ মতো দিশি খাওয়া থেকে ফাস্ট ফুডে যাওয়াও এখন আমাদের দেশে ক্লাস সিম্বল বা সচ্ছলতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। আমরা এখন সদ্য উপার্জিত অর্থনৈতিক স্বাধীনতা উপভোগ করছি। এত দিন খরচা করার ক্ষমতাও ছিল না, আর বিভিন্ন সামগ্রীও মিলত না। এখন সব আছে। কিন্তু বেহিসাবি খরচা করলে রাজার ধন ও নিমেষে ফুরিয়ে যায়, তাই চিন্তা করার সময় এসেছে। টাকা জমাবেন না গ্লুকোজ জমাবেন যাতে জলের মতো টাকা খরচ হবে?
আমরা আধুনিক মানুষেরা আমাদের পূর্বসূরিদের থেকে এসেছি। তাঁরা যুগযুগান্ত ধরে যা খেয়েছেন তাই আমাদের শরীর গঠনে বহন করছি। মুশকিল হল তাঁরা যা খাননি, আজকাল আমরা তাই মাত্রাহীন ভাবে খেয়ে চলেছি। আমাদের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস আর আমাদের জেনেটিক বিবর্তনের ছক আমরা ভুলে গিয়েছি। সে ধরনের খাবার শরীরের প্রয়োজন তার উল্টোটা আমরা তাকে দিচ্ছি।
তবে প্রত্যেক সপ্তাহে বিরিয়ানি খাওয়ার আগে কি আর এই কথা মনে পড়বে? নাকি মাটন রোল আর চাউমিনের গন্ধে সব হিসেব গোলমাল হয়ে যাবে! |