|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসাত |
নেই বৈদ্যুতিক চুল্লি |
দহনে দূষণ |
সত্যজিৎ চক্রবর্তী |
চারপাশে গড়ে উঠছে একের পর এক বহুতল, শপিং মল। পাল্টে যাচ্ছে আকাশরেখা। তবে আধুনিকতার ছোঁয়া যতই লাগুক না কেন, বারাসত এলাকার কোনও শ্মশানেই কোনও বৈদ্যুতিক চুল্লি নেই। পাশাপাশি, নিউ ব্যারাকপুর ও মধ্যমগ্রাম সীমানা এলাকার সাজিরহাটে একটি বৈদ্যুতিক চুল্লি থাকলেও আর্থিক সমস্যার জেরে সেটি দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে। বিপাকে পড়ে সাধারণ মানুষ মৃতদেহ দাহ করতে নিয়ে আসছেন খোলা শ্মশানে কাঠের চিতায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর জেরে শ্মশান থেকে আসা ধোঁয়া, দুর্গন্ধ ও ছাইয়ে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। যদিও এই সমস্যার সুরাহা সম্পর্কে কোনও পুরসভাই আশার কথা শোনাতে পারেনি।
বস্তুত, গঙ্গা দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে কেন্দ্রীয় সরকারি পরিকল্পনা আছে, তার অধীনেই এই কাজগুলি করার কথা কেএমডিএ-র। তারা ইতিমধ্যেই গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের অধীনে অনেকগুলি পুর এলাকায় বৈদ্যুতিক চুল্লিও করেছে। কেএমডিএ-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই সব পুর এলাকায় সমীক্ষার কাজ চলছে। সমীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরে ঠিক করা হবে, কোথায় কোথায় বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরি করা হবে। |
|
ঘোষণাই সার। বন্ধ রয়েছে বৈদ্যুতিক চুল্লি। ছবি: সুদীপ ঘোষ। |
বারাসতের বড়বড়িয়া ও কাজিপাড়া এলাকায় বহু দিনের পুরনো দু’টি শ্মশান রয়েছে। দু’টিতেই মৃতদেহ দাহ করা হয় কাঠের চিতায়। বড়বড়িয়া শ্মশানটি আবার গত কয়েক দশক ধরে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। এই শ্মশানে পুরসভার তরফে কোনও কর্মী নেই। ফলে, এখানে মৃতদেহ দাহ করতে এলে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ বা বৈধ কাগজপত্র দেখে নেওয়ারও কেউ নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কোনও রকম কাগজপত্র ছাড়াই এখানে মৃতদেহ দাহ করা হয়। শ্মশান চত্বরে নানা রকম অসামাজিক কাজকর্মও চলে বলে অভিযোগ।
আবার, কাজিপাড়া শ্মশানের ৩০ ফুটের মধ্যে রয়েছে সুবর্ণপত্তন প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে ক্লাস চলাকালীন কোনও মৃতদেহ দাহ করা হলে পড়াশোনা শিকেয় ওঠে। মৃতদেহ পোড়ানোর দুর্গন্ধ এবং ধোঁয়া, দু’য়ের চোটেই অস্থির হয়ে পড়ে পড়ুয়ারা। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দুর্গন্ধের ফলে অনেক সময়েই নাক চেপে ক্লাস করতে হয় পড়ুয়াদের। ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করে। দুর্গন্ধে খেতে না পারায় অনেক সময়েই মিড-ডে মিল বাড়ি নিয়ে যায় পড়ুয়ারা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রিয়তোষ দেব বলেন, “ধোঁয়া, ছাই এবং দুর্গন্ধ বেশি হলে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আমরা স্কুল প্রাঙ্গণের শেষ প্রান্তের গাছতলায় আশ্রয় নিই। বারাসত পুরসভাকে বহু বার চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। পুরসভা শ্মশানটির চার দিকে পাঁচিল দিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া আর কিছুই করেনি।” |
|
মধ্যমগ্রাম সাজিরহাট শ্মশান |
স্কুলেরই ছাত্র দ্বৈপায়ন চক্রবর্তীর কথায়: “মৃতদেহ পোড়ানোর সময় স্কুলে থাকা যায় না। দুর্গন্ধে শরীর খারাপ লাগে।” এলাকাবাসীদের দাবি, পুরসভাকে এই সমস্যার কথা জানানো হলেও তারা হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। খোলা শ্মশান অবিলম্বে বন্ধ করে বৈদ্যুতিক চুল্লি সমেত শ্মশান তৈরি করা হোক। স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ চক্রবর্তীর কথায়: “পুরসভা চাইলে শ্মশানটিকে কোনও খাল বা নয়ানজুলির পাশে সরিয়ে নিতে পারত। অথবা শ্মশানে চিমনি লাগালে হয়তো এই দূষণ ঠেকানো যেত।”
বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, “বারাসত শহরটি গঙ্গার কাছাকাছি হওয়ায় বাসিন্দারা গঙ্গা সংলগ্ন শ্মশানেই শবদাহ করতে নিয়ে যান। স্কুল তৈরির আগে থেকেই এখানে শ্মশানটি ছিল, তাই এখন আর সেটি অন্যত্র সরানোর উপায় নেই। তবে স্কুলের স্বার্থে শ্মশানটিতে চিমনি লাগানোর পরিকল্পনা করা যেতে পারে।” তাঁর বক্তব্য: “বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরি করা যথেষ্ট ব্যয়সাধ্য। সারা দিনে দু’-একটি শবদাহের টাকা দিয়ে বৈদ্যুতিক বা গ্যাসচালিত চুল্লি চালাতে পুরসভাকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলেই তা তৈরি করা হয়নি।”
|
|
বারাসত কাজিপাড়া শ্মশান। |
মধ্যমগ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের রথীন ঘোষের কথায়: “বাসিন্দাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে সাজিরহাট শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরি করা হয়েছিল। তবে অল্পসংখ্যক বাসিন্দা মৃতদেহ দাহ করতে আসেন। তাতে যে টাকা আয় হয়, তা দিয়ে বৈদ্যুতিক চুল্লি চালানো সম্ভব নয়। তাই চুল্লিটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।” এই একই কারণে নিউ ব্যারাকপুর পুরসভা এলাকায় কোনও বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরি করা হয়নি বলে জানান নিউ ব্যারাকপুরের চেয়ারম্যান তৃণমূলের নির্মিকা বাগচী।
পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার বলেন, “বিষয়টি পুরসভার দেখার কথা। আমার কাছে এখনও কেউ এ নিয়ে অভিযোগ করেননি। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ জানালে পুরসভাগুলির সঙ্গে কথা বলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।”
গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় যদি বিভিন্ন পুর এলাকায় কেএমডিএ-র বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির কথা থাকে তা হলে এই সব পুর এলাকায় তা নির্মাণ হয়নি কেন? কেএমডিএ-র চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার বিবেক ভরদ্বাজ বলেন, “জাতীয় গঙ্গা অববাহিকা কর্মসূচি উপলক্ষে এ ব্যাপারে সমীক্ষা চালাচ্ছে কেএমডিএ। ওই সব পুর এলাকাতেও সমীক্ষা চলছে। সমীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরে ঠিক করা হবে, কোথায় কোথায় বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো হবে।”
|
|
|
|
|
|