এমনিতেই সারা বছর নদী ভাঙনের আশঙ্কায় দিন কাটে বাসিন্দাদের। বহু এলাকায় বছরের পর বছর ধরে ভাঙন চললেও কাজ হয় না। অথচ গত এক মাস ধরে অবৈধ ভাবে মহানন্দার পাড় কেটে মাটি বিক্রি করে দেওয়া হলেও কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পাড়ের মাটি কেটে তা বিক্রির ঘটনায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে মালদহের চাঁচলের মহানন্দা পাড়ের গ্রাম রামদেবপুর এলাকা। নদী পাড়ের মাটির পাশাপাশি নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি তুলে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বিরুদ্ধে। পাড়ের মাটি কাটায় গোটা এলাকাটি বর্ষায় ভাঙনে বিপন্ন হবে বলে আতঙ্কে ভুগছেন বাসিন্দারা। নিষেধ করায় উল্টে ওই হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগে পুলিশ, প্রশাসন, ভূমিসংস্কার দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের অভিযোগ পেয়েই মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দিয়ে তদন্তে নেমেছে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। চাঁচল-১ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তাপস কুমার বলেছেন, “ওই এলাকায় সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে মহানন্দা পাড়ের মাটি কাটা হচ্ছে! বালি তোলা হচ্ছে অবৈধ ভাবে। এভাবে পাড়ের মাটি কাটা যায় না। পাড়ের মাটি কাটায় ভাঙনের আশঙ্কা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। দফতরের কর্মীরা এলাকায় গিয়েও কাউকে পাননি। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। যারা ওই ঘটনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহানন্দা নদীর পাড় বরাবর রয়েছে চাঁচলের ভগবানপুর পঞ্চায়েতের রামদেবপুর এলাকাটি। নদীর ওপারেই উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার এলাকা। বাসিন্দারা জানান, গত বছরও একই ভাবে নদী পাড়ের মাটি কেটে ফেলা হয়। কিন্তু ভূমি সংস্কার দফতর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ফের এবছরও একই ভাবে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। জেসিপি মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে তা পাচার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। চাঁচলের বিভিন্ন এলাকায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরির কাজে নিযুক্ত ঠিকাদাররা ওই মাটি কিনে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর স্থানীয় পঞ্চায়েত কিংবা ভূমি সংস্কার দফতর ব্যবস্থা না নেওয়ায় পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ভাঙনের আশঙ্কায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা বাধা দিলে তাদের বৈধ অনুমতি রয়েছে বলে পাল্টা হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। শুধু পাড়ের মাটি নয়, নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবৈধ ভাবে বালিও তোলা হচ্ছে। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে ওই বালি তোলা হলেও ভূমি সংস্কার দফতর নীরব বলে অভিযোগ। এমনকী ভূমিসংস্কার দফতরের একশ্রেণীর অসাধু কর্মীর মদতে ওই কাজ চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা। কারণ, দফতরের তরফে তদন্তের কথা বলা হলেও কাজ কিছু হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। ওই অভিযোগ মানতে চাননি দফতরের কর্তারা। আব্দুল কাইয়ুম, আইয়ুব আলিদের অভিযোগ, “যে ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে তাতে ভাঙন হলে গ্রাম তলিয়ে যাবে। প্রত্যেকেই দেখছি দেখব বলে দায় সারছেন।” এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রত্না বর্মন জানান, তাঁরাও উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “আমরা কী করতে পারি? যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা তো ভূমি সংস্কার দফতরকেই নিতে হবে।” |