বিনোদন প্রাচীনতম নাট্যমেলায় শহরে এ বার ইজরায়েল
হরের মঞ্চে এ বার ইজরায়েল। নাটকের নাম, ফিনল্যান্ড। স্বল্পদৈর্ঘ্যের এই প্রযোজনাটির মধ্য দিয়েই প্রথম বার ইজরায়েলি নাট্যশৈলীর সঙ্গে পরিচয় ঘটবে কলকাতার। নান্দীকার আয়োজিত ২৮তম নাট্যমেলার অন্যতম আকর্ষণ মিকা দ্ভির-এর এই নাটক।
মিকা এর আগে কলকাতায় আসেননি। শুধু মিকা নন, ইজরায়েলের কোনও নাটকই এর আগে কখনও কলকাতায় এসেছে বলে মনে করতে পারছেন না রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। এর আগে নান্দীকারের উৎসবে এসেছে জার্মানি, সুইডেন, নরওয়ে, সুইৎজারল্যান্ডের প্রযোজনা। ইজরায়েল এই প্রথম।
মিকা নিজেই এ বারের উৎসবে আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানালেন রুদ্রপ্রসাদ। মিকা-র প্রশিক্ষণ তেল আভিভ-এর নাট্যচর্চাকেন্দ্রে। তার পরে বেশ কয়েক বছর তেল আভিভে টানা অভিনয় করে গিয়েছেন তিনি। মিকা নিজে নাটক লেখেন, অভিনয় করেন, নির্দেশনাও তাঁর। এবং মিকা দ্ভির এই বছর থেকে ভারতেরই বাসিন্দা। মিকা এবং তাঁর বন্ধুরা মিলে কেরলের থিরুনেলভেলিতে গড়ে তুলেছেন একটি শিল্পচর্চা কেন্দ্র। সেটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য একটি স্বনির্ভর প্রকল্পও চালায়, সেই সঙ্গে শিল্প-সংস্কৃতির নানা মাধ্যম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গবেষণার কাজ করে। ‘ফিনল্যান্ড’ নাটকটি প্রসঙ্গে মিকা নিজে জানিয়েছেন, অতীত এবং তার নানা চিহ্ন তাঁর প্রিয় বিষয়।
‘ফিনল্যান্ড’ নাটকের একটি দৃশ্য
ঘটনাচক্রে অতীত এবং ইতিহাসের অনুষঙ্গ ১৬ই শুক্রবার থেকে ১০ দিনের উৎসবে একাধিক প্রযোজনায় ঘুরেফিরে আসছে। থাকছে সিন্ধু সভ্যতার পতন এবং বহিরাক্রমণের কিংবদন্তী ঘিরে মুম্বইয়ের নাটক ‘মহেঞ্জোদাড়ো’। মহাভারতের কাহিনিসার নিয়ে ভোপালের প্রযোজনা ‘হস্তিনাপুর’। থাকছে ওড়িশার পরিচালক সুবোধ পুরকায়স্থের নাটক, ‘শোসা’। কাশ্মীর থেকে রশি রশিদ নিয়ে আসছেন নাটক ‘আরচেকাল’, কাশ্মীরের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিক্ষোভ যার উপজীব্য। রবীন্দ্রনাথের ‘স্ত্রীর পত্র’ অবলম্বনে সীমা বিশ্বাসের অভিনয় দেখার সুযোগ আরও এক বার পাবেন শহরবাসী। বাংলাদেশের ‘আরণ্যক’ নাট্যগোষ্ঠী ‘রাঢ়াং’ নামে যে নাটকটি আনছে, তার গল্প দেশভাগ-পরবর্তী সময়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং জমি-জঙ্গলের অধিকার আন্দোলনকে ঘিরে। উদ্বোধনী নাটক দেবেশ চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘দেবী সর্পমস্তা’ ইতিমধ্যেই বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সে নাটকের সময়কাল আরও আরও পিছনে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যুগে।
নান্দীকার নাট্যোৎসবও তো কম প্রাচীন হল না। রুদ্রপ্রসাদ বলছিলেন, ১৯৮৪ সালে নান্দীকারের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রথম বার আয়োজন হয়েছিল এই উৎসবের। প্রতি বার উৎসব করার পরিকল্পনা তখন মোটেই ছিল না। কিন্তু দর্শকের প্রবল চাহিদাতেই বন্ধ করা গেল না উৎসব। উৎসবের অতীত আর বর্তমানে কোনও তফাত হয়েছে কি? রুদ্রপ্রসাদের কথায়, “আগে লোকে নাটক দেখে ভাল-মন্দ বিচার করত। এখন দর্শক আগে থেকেই হিসেবি।”
দেখতে গেলে নান্দীকারের নাট্যোৎসবই কিন্তু প্রথম কলকাতায় বসে সারা ভারতের নাট্যচর্চার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছিল। পৃথ্বী থিয়েটার ছাড়া তখন জাতীয় স্তরেও এমন উৎসব ছিল বিরল। এনএসডি-র ‘ভারত রঙ্গ মহোৎসব’ শুরু হয়েছে অনেক পরে, ১৯৯৯ থেকে। কেরলের আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব শুরু হয়েছে ২০০৮-এ। রুদ্রপ্রসাদ মনে করিয়ে দেন, শ্রীরাম লাগু, বিজয় তেন্ডুলকর, হাবিব তনবীরের মতো নাট্যব্যক্তিত্বেরা তাই যত বারই এখানে এসেছেন, একটা কথাই বলেছেন: সরকারি অনুষ্ঠান নয়, এই উৎসব নাটকের মানুষদের নিজস্ব উৎসব। পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায় তাই মুখিয়ে আছেন ‘সর্পমস্তা’ নিয়ে। শহরের মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় তো হচ্ছেই এ নাটকের। তবু নান্দীকার উৎসবে অভিনয় করাটা আলাদা প্রাপ্তি বলে মনে হচ্ছে তাঁর। কেন? “মিনার্ভা রেপার্টরির ছেলেমেয়েদের কাছে এটা বিরাট সুযোগ। ওরা এতদিন নান্দীকার নাট্যমেলার গল্প শুনেছে। এ বার অ্যাকাডেমি মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেই উৎসবে অভিনয় করাটা ওদের কাছে একটা স্বপ্নের মতো।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.