সরকারি অনুমোদন রয়েছে দু’শো শয্যার। কিন্তু দিনে গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় তিনশো জন। ওয়ার্ডের পাশেই রান্নাঘর। গুদামের পরিবর্তে গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করে রাখা থাকে সেখানেই। কিন্তু আশপাশে নেই কোনও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। অপারেশন থিয়েটর এবং এক্স-রে ঘরের কাছে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দিন তাতে গ্যাস ভরা হয় না। কর্মীদের জানা নেই, প্রয়োজনের সময়ে এই যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে কী ভাবে। দুর্দশার এমন চিত্র কালনা মহকুমা হাসপাতালের।
বর্ধমান, হুগলি ও নদিয়া জেলার বেশ কিছু প্রান্তের লক্ষাধিক মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য এই হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল। বুধবার হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রসূতি বিভাগের লনে সার দিয়ে শয্যা পাতা। সব ক’টি ভর্তি। স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতেও রয়েছেন কয়েক জন রোগী। ভিড় জমিয়েছেন রোগীর আত্মীয়েরা। ওয়ার্ডের মাঝামাঝি জায়গায় নার্সদের ঘর। এত রোগীকে পরিষেবা দিতে তাঁদের দম ফেলার সময় নেই।
ওই ওয়ার্ডের গা ঘেঁষেই রয়েছে হাসপাতালের রান্নাঘর। কয়েক বছর আগে থেকে গুল কয়লার পরিবর্তে গ্যাসে রান্না চালু করেছে এই কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থা। সেখানেই মজুত অতিরিক্ত গ্যাস সিলিন্ডার। আশপাশে অবশ্য অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র চোখে পড়েনি। ঠিকা সংস্থার কর্মীরাও স্বীকার করে নেন, বড় ধরনের আগুন লেগে যেতে পারে যে কোনও সময়ে। |
রান্নাঘরে মজুত গ্যাস সিলিন্ডার। নিজস্ব চিত্র |
হাসপাতালে, দু’টি এক্স-রে ঘর-সহ যে সাতটি জায়গায় অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রয়েছে, সব ক’টিই অকেজো। হাসপাতাল সূত্রেই জানা যায়, সেগুলিতে শেষ বার গ্যাস ভরার কাজ হয়েছিল চার বছর আগে। সেগুলি কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা-ও তাঁদের জানা নেই বলে জানিয়েছেন কর্মীরা। হাসপাতালের প্রথম দরজা দিয়ে খানিকটা এগোলেই চোখে পড়ে এক্স-রে ঘর। তার মেঝে বেশ খানিকটা নিচু। অতিবৃষ্টিতে ওই ঘরে জল ঢুকে যায়। সেক্ষেত্রে যে কোনও সময়ে শর্ট সার্কিটের সম্ভাবনা থেকেই যায়।
হাসপাতাল ভবনের মাঝামাঝি জায়গায় অপারেশন থিয়েটর। গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটিতে সারা দিনই ব্যস্ততা থাকে। সেখানে অপারেশনের দরকারে রাখা হয় অক্সিজেন-সহ নানা দাহ্য পদার্থ। এই বিভাগেও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। কিন্তু সেগুলিতে গ্যাস শেষ হয়ে গিয়েছে অনেক দিন আগেই। তাই কোনও ভাবে আগুন লাগলে তা ভয়াবহ আকার নেওয়ার সম্ভাবনা। সেক্ষেত্রে অবশ্য কোনও কাজেই আসবে না ওই সব অগ্নি নির্বাপকগুলি।
হাসপাতালে রান্নার কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থার কর্মী কর্ণধার মাইতি জানান, সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী গ্যাসের সিলিন্ডার রান্নাঘর থেকে ৫০ ফুট দূরে রাখার কথা। সে জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গুদামঘরের ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু তা এখানে হচ্ছে না।
কর্ণধারবাবুর দাবি, “উপযুক্ত পরিকাঠামো দেওয়ার কথা হাসপাতালের। আমরি-কাণ্ডের পরে আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে রান্নাঘরের আশপাশে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছি।” প্রসূতি বিভাগে ভর্তি এক রোগীর আত্মীয় পরেশ সেন বলেন, “রান্নাঘরে আগুন লাগলে দ্রুত তা ওয়ার্ডের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। এই হাসপাতালে এখন যা পরিস্থিতি, তেমন ঘটনা ঘটলে বাঁচার জন্য একমাত্র ভগবানই ভরসা।”
গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা যে বেহাল, তা স্বীকার করেছেন কর্তৃপক্ষ। সুপার অভিরূপ মণ্ডল বলেন, “হাসপাতাল থেকে রান্নাঘরটি পৃথক করা জরুরি। পাশাপাশি, অগ্নি নির্বাপণ সিলিন্ডারগুলি ‘রিফিল’ করাও প্রয়োজন। এ সবের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কী ভাবে মিলবে, তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করা হয়েছে।”
এত দিন পরে কেন উদ্যোগ শুরু হল, এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। |