রানিগঞ্জের সবচেয়ে পুরনো বেসরকারি হাসপাতালের করুণ দশা দেখে এলেন দমকলের ওসি, পুরপ্রধান, আসানসোল মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম ও পুলিশের প্রতিনিধিরা। একই অবস্থা দেখা গেল দমকল কেন্দ্র থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে একটি নার্সিংহোমেরও। এনএসবি রোড বাই লেনে রামবাগানে একটি , ডিএভি বিদ্যালয়ের কাছে একটি, পাঞ্জাবি মোড়ের কাছে একটি নার্সিংহোমেও তাঁরা পরিদর্শনে যান।
বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ দলটি প্রথমেই ঢোকে নেতাজি মূর্তির কাছে ছ’তলায় মাড়োয়ারি রিলিফ সোসাইটির হাসপাতালে। দেখা যায়, ওঠা-নামার জন্য রয়েছে একটিই সরু সিঁড়ি। লিফ্ট সিঁড়ির পাশেই। অর্থাৎ, আগুনের কারণে সিঁড়ির পথ রুদ্ধ হলে লিফ্ট ব্যবহার করাও মুশকিল। বিপদকালে বের হওয়ার জন্য দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই। কয়েকটি অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার থাকলেও বহু দিন আগেই সেগুলির মেয়াদ ফুরিয়েছে। |
রানিগঞ্জের নার্সিংহোমে পরিদর্শন। নিজস্ব চিত্র |
ছ’তলায় উঠে কয়লার আঁচে রান্না হচ্ছে। ডিসপেনসারিতে প্লাগ পয়েন্টে সরাসরি তার গুঁজে হিটার চালানো হচ্ছে। কাছে-পিঠে কোনও জলাধার নেই। তা বানানোরও জায়গা নেই। মিটারের ঘরেও খোলা ঝুলছে বিদ্যুতের তার। দমকলের ওসি পরিমল ঘোষ অবিলম্বে কয়লা জ্বেলে রান্না বন্ধ করতে বলেন। বিকল্প রাস্তা তৈরিরও প্রস্তাব দেন। পুরপ্রধান অনুপ মিত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলেন, “আপনারা নকশা জমা দিন। খতিয়ে দেখে দ্রুত অনুমোদন দেব।”
রানিগঞ্জ পুরসভার হিসেবে, রানিগঞ্জে নার্সিংহোম আছে খান পনেরো। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পরিমলবাবুর দফতরের কাছেই একটি নার্সিংহোমে ঢোকে দলটি। করিডরে রাখা ছিল একটি অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার। যা দেখে দমকলের ওসি বলে ওঠেন, “আরে, এটা তো একটা ছোট গাড়িতে ব্যবহার করার সিলিন্ডার!” নার্সিংহোমের এক কর্মকর্তা তথা চিকিৎসক উজ্জ্বল খান পাল্টা বলেন, “এত দিন আপনারা কী করছিলেন?” এখানেও মোটে এক মিটার চওড়া একটিই সিঁড়ি। বিকল্প রাস্তাও নেই। নার্সিংহোম ছেড়ে আসার আগে ওসি বলেন, “এখানে কী করণীয় তা আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাব।” উজ্জ্বলবাবু বলেন, “বিজ্ঞপ্তি পাঠান। দেখব, কত দূর কী করা যায়।”
বাকি তিনটি নার্সিংহোম কিছুটা খোলামেলা। বিকল্প রাস্তা, বিদ্যুতের লাইন ঠিকঠাক, বেশ কিছু অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডারও আছে। তবে জলাধার বা ফায়ার অ্যালার্ম নেই। তাঁদেরও বিজ্ঞপ্তি দেবে দমকল। মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক অরিতা সেন চট্টরাজ বলেন, “বেশ কিছু স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে। তাদের শুধরোতে হবে। আমাদের পরিদর্শন চলবে।” পরিমলবাবু জানান, আমরা বলার পরেও যদি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমগুলি যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, আমরা আইনের রাস্তা নেব।” |