প্রায় একমাস ধরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই) ট্যাপকলে নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত জল সরবরাহ হওয়ায় রায়গঞ্জ পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অশোকপল্লি এলাকায় বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছেন। ওয়ার্ডের বেশিরভাগ বাড়িতে নলকূপ থাকলেও সেগুলি দিয়ে ঘোলা জল বার হয়। বাসিন্দাদের তাই জলের খোঁজে পাশের ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে দূষিত জল ব্যবহার করে অনেকে পেটের রোগে ভুগছেন। ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রিয়তোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সমস্যার কথা কয়েকবার পিএইচই দফতরকে জানানো হলেও দফতরের তরফে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশ দূষিত জল ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের ব্যাপারে ব্যবস্থা না হলে বাসিন্দাদের নিয়ে শহরের প্রধান রাস্তা অবরোধ করা হবে।” উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “সমস্যার কথা শুনেছি। পিএইচই দফতর থেকে যেন দ্রুত ওই ওয়ার্ডে পানীয় জল সরবরাহের কাজ করে সেটা দেখা হচ্ছে” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জলের রিজার্ভার থেকে ট্যাপকলগুলিতে জল সরবরাহের প্রধান পাইপ লাইনের কোনও একটি অংশে ফাটল ধরায় পানীয় জল দূষিত হয়ে পড়ছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৪ হাজার বাসিন্দা রয়েছে। তারমধ্যে ১৯০ টি পরিবার বিপিএল তালিকাভূক্ত। বাসিন্দাদের পানীয়জল সরবরাহের জন্য ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় পিএইচই-র ৬০ টি ট্যাপকল আছে। ওয়ার্ডের প্রায় ৬০০টি পরিবারের নিজস্ব নলকূপ বা রানিং ওয়াটারের ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরা সরকারি ট্যাপকলে সরবরাহ করা জলের ওপর নির্ভরশীল। যে সমস্ত বাসিন্দাদের বাড়িতে নলকূপ রয়েছে তাঁরাও পিএইচই-র জলের উপরে ভরসা করে থাকেন। কারণ, বাড়ির নলকূপ থেকে ঘোলা জল বার হয়।
পিএইচই-র কলে প্রতিদিন সকাল ৭টা, বেলা ১১টা এবং বিকেল ৪টায় জল সরবরাহ করা হয়। বাসিন্দারা লাইন দিয়ে জল সংগ্রহ করেন। ওয়ার্ডের প্রবীণ বাসিন্দা তথা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী নিরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “ওয়ার্ডের অনেক বাসিন্দার বাড়িতে নলকূপ নেই। অনেকের নিজস্ব নলকূপ থাকলেও কাজে লাগে না। সেই কারণে ওয়ার্ডের ৯০ শতাংশ বাসিন্দা পিএইচই-র জল ব্যবহার করেন। প্রায় একমাস থেকে ট্যাপকল দিয়ে ঘোলা ও দুর্গন্ধযুক্ত জল বার হচ্ছে। পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে বাধ্য হয়ে দূষিত জল ব্যবহার করছে। ফলে পেটের রোগ দেখা দিচ্ছে।” বাসিন্দাদের অনেকে সংলগ্ন বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করছেন। ঘটনার কথা কয়েকবার স্থানীয় কাউন্সিলার এবং প্রশাসনের কর্তাদের জানানো পরেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না তা শান্তি ভট্টাচার্যের মতো প্রবীণদের অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না। শান্তি দেবী বলেন, “স্বামী নেই। ছেলে মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার। এত দিন জলের অভাব ছিল না। এখন তাও বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। সরকারি কলের জল দিয়ে রান্না করলে পেটের রোগে ভুগতে হচ্ছে।” |