রক্তের অভাবে রোগীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। আবার অনেকে মারাও যান। তাই পাড়ায় রক্ত দানের শিবির হচ্ছে শুনে তাঁরা আর বাড়িতে থাকতে পারলেন না। সকাল সকাল চলে এলেন স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে। তাঁরা বলতে মুসলিম পরিবারের বধূ লনা ববি, পিঙ্কি বিবি। এই প্রথম রক্ত দিলেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, “এই প্রথম রক্ত দিলাম। আমাদের রক্ত যদি কারও কাজে লাগে তা হলে তৃপ্তি পাব।”
বুধবার সিউড়ি পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাতোড় পাড়ায় স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির হয়। যেখানে রক্তদান শিবির হয়েছে ওই পাড়াটি পাড়াটি মুসলিম অধ্যুষিত। সেখানে ওই দুই বধূ রক্তদান করেছেন। তাঁদের রক্তদান করার কথা কেউ বলেননি। আবার অনেকে আছেন যাঁরা এসেও রক্ত দিতে পারেননি। রক্ত দিতে না পেরে মনে কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন পরিচারিকা ফতেমা খাতুন। তাঁর ক্ষোভ, “রক্ত দেব বলে গেলাম। অথচ চিকিৎসকেরা শিরা খুঁজে পেলেন না। অথচ সহকর্মী রেশমা খাতুন রক্ত দিলেন।” এ দিনের শিবিরে ৮ জন মহিলা ও ২৮ জন পুরুষ রক্ত দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন দিনমজুর। শিবিরের বাইরে কাপড়ের ব্যানারে লেখা রয়েছে ‘ইমাম হাসান হোসেনের নামে রক্তদান শিবির...বুকের রক্ত মাটিতে আর নয়। এ বার?’ |
ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় |
এই রক্তদান শিবিরের আয়োজক সোনাতোড় পাড়া মহরম কমিটি। মহরমের জন্য তোলা চাঁদার টাকা বাঁচিয়ে এই শিবিরের আয়োজন করেছেন উদ্যোক্তারা। ওই টাকা থেকে মঙ্গলবার ১০০ জন দুঃস্থ মানুষকে কম্বল দান করেছেন তাঁরা। কমিটির সম্পাদক শেখ বাবুলাল, অন্যতম সদস্য ইবরাল আলি বলেন, “কম্বল দান ও রক্তদান শিবিরের কথা আমরা কাউন্সিলর ইয়াসিন আখতারকে বলেছিলাম। তিনি সম্মতি দিতে আয়োজন করেছি। আমাদের মনে হয়েছে মহরমের মতো শোক দিবসে হৈ হুল্লোড় করে উৎসব না করে মানুষের জন্য কিছু করা উচিত। সেই ভাবনা এই শিবিরের আয়োজন।” কাউন্সিলর বলেন, “এমনিতে এখনও রক্তদানের প্রতি মানুষের উৎসাহ কম। মুসলিমদের তো আরও কম। কিন্তু এই শিবিরে মুসলিম পুরুষদের সঙ্গে মহিলারাও যে ভাবে এগিয়ে এলেন তাতে আমরা আশাবাদী, যে ভবিষ্যতে আরও অনেকে এগিয়ে আসবেন।”
এই শিবির করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন সিউড়ি সদর হাসপাতাল সুপার মানবেন্দ্র ঘোষ। |