বাড়ির নীচে গাদা গাদা শয্যা। সেখানে রোগী ভর্তি হচ্ছে। ঘরের সামনে তেলের ব্যারেল। চলছে জেনারেটর।
এটি একটি নার্সিংহোম।
কাটোয়া শহরের কাছারি রোড ও স্টেশন রোডের কাছে ওই নার্সিংহোমের হাল দেখে চক্ষু চড়কগাছ দমকল ও স্বাস্থ্যকর্তাদের। শুধু ওই নার্সিংহোম কেন, কাটোয়া শহর ও দাঁইহাটে চলা ৬টি নার্সিংহোমেরই এক হাল। কারওই দমকলের ছাড়পত্র নেই। কার্যত মুনাফা ছাড়া
কাটোয়া হাসপাতালের অবস্থাও তথৈবচ। দমকলের ছাড়পত্র নেই সরকারি এই হাসপাতালেরও। আমরি কাণ্ডের পরে তড়িঘড়ি ২৭টি অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র কিনেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটবে না বলেই মনে করছেন দমকল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের মূল ভবনে পুরুষ, মহিলা, শিশু ও প্রসূতি ওয়ার্ড রয়েছে। দু’শো শয্যার এই হাসপাতালে নার্স, চিকিৎসক ও রোগীর আত্মীয় স্বজন নিয়ে সব সময় প্রায় ৪০০-৪৫০ লোক থাকে। কোনও কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে রোগীর আত্মীয় স্বজনদের বেরোনোর কোনও বিকল্প রাস্তা নেই। |
কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের কর্মীদের আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ দমকলের। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় |
এখানেই শেষ নয়, হাসপাতালের এক তলায় রয়েছে ‘স্টোর রুম’। সেখানে দাহ্য পদার্থের ছড়াছড়ি। দোতলার একটি ঘরে ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে কাগজ ও গদির স্তূপ। দমকলের কাটোয়ার ওসি দিলীপকুমার দাস হাসপাতালের ভিতর থেকে দাহ্য পদার্থ সরানোর পরামর্শ দিয়েছেন সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায়কে।
কাটোয়ার দমকল বিভাগের কর্তারা অবশ্য মনে করেন, তাঁদের পরামর্শ মেনে সরকারি হাসপাতাল থেকে এখনই স্টোর রুম বা রেকর্ড রুম অন্য জায়গায় সরানো সম্ভব নয়। তাই আচমকা শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লাগলে চিকিৎসক বা নার্সরা কী ভাবে তার মোকাবিলা করবেন, বুধবার দুপুরে তা নিয়ে হয়ে গেল একটি মহড়া। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে এমন মহড়া আগে কখনও হয়নি। হাসপাতালের কর্মীরা ছাড়া নার্স ও চিকিৎসকেরাও সেখানে অংশ নেন। দমকলের ওসি জানান, অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র তো থাকলেই হবে না। অধিকাংশ লোকই তা ব্যবহার করতে জানে না। তাই এই প্রশিক্ষণ।
কাটোয়ার কোনও নার্সিংহোমে তো নয়ই, সরকারি হাসপাতালটিতেও পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা নেই। মঙ্গল ও বুধবার কাটোয়ার স্বাস্থ্য দফতর ও দমকল বিভাগের কর্তারা যৌথ ভাবে নার্সিংহোমগুলি পরিদর্শন করেন। কোনও নার্সিংহোমে সিঁড়ির উপরে একফালি ঘরে রয়েছে গ্যাসের সিলিন্ডার, কোথাও বা দাহ্য পদার্থ। অপারেশন থিয়েটরগুলির অবস্থা সঙ্গীন। বেশিরভাগ নার্সিংহোমে অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র পর্যন্ত নেই।
প্রতিটি জায়গায় সিঁড়ি খুবই সরু। কারও বিকল্প বেরনোর পথ নেই। বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের তারের জটলা। দমকলের কাটোয়া বিভাগের স্টেশন অফিসার দেবীপ্রসাদ দাস বলেন, “দু’মাস আগে আমরা এক বার পরিদর্শন করেছিলাম। সেই সময় নার্সিংহোমগুলির অবস্থা একই ছিল। মৌখিক ভাবে তখন কিছু নির্দেশ দিয়েছিলাম। সেগুলো কেউ মানেনি।”
নার্সিংহোমগুলির অবশ্য দাবি, দমকল বিধি মানাটা যে আবশ্যক, তা তাঁরা আগে জানতেন না। কিন্তু এ বার? কাটোয়া ডাকবাংলো মোড়ে একটি নার্সিংহোমের কর্তা তো বলেই ফেললেন, “এখন তো রোগীরা প্যাকেজে ভর্তি হন। বেশির ভাগ টাকা চিকিৎসকেরাই পান। নার্সিংহোম পায় মাত্র ১০ শতাংশ টাকা। তবু আমাদেরই সব নিয়ম মানতে হবে।”
ফলে মানুষ আমরি-কাণ্ড বিস্মৃত হলেই দমকলের এই সব পরামর্শ কতটা কার্যকর করা হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। |