যে বিলে সমর্থন ছিল বিরোধীদের, সরকারের ‘অসাংবিধানিক’ পদ্ধতির প্রতিবাদ জানিয়ে সেই বিলের সময়েই ওয়াক আউট করল বিরোধীরা। শেষ পর্যন্ত বিরোধীশূন্য বিধানসভাতেই বুধবার অবশ্য স্বাস্থ্য পরিষেবা আইনের সংশোধনী সংক্রান্ত বিলটি পাশ হয়ে গিয়েছে।
নতুন নতুন মেডিক্যাল কলেজ খোলা হলেও সেখানে পড়ানোর জন্য উপযুক্ত চিকিৎসক পাওয়া যে কঠিন, এই ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে একমত বিরোধীরা। বামফ্রন্টের আমলেই এই সমস্যা সামাল দিতে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) বাইরেও নিয়োগের জন্য অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে দীর্ঘসূত্রিতা কাটানোর চেষ্টা হয়েছিল। সেই জন্য সরকারের আনা এ বারের বিলে সমর্থনের কথা আগাম ঘোষণা করেছিল বিরোধী শিবির। কার্যক্ষেত্রেও এ দিন তা-ই হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই তারা ‘আবিষ্কার’ করে, এই সংক্রান্ত একটি অর্ডিন্যান্স রাজ্য সরকার জারি করেছিল গত ২৭ মে। তার পরে বিধানসভার দু’টি অধিবেশন হয়ে গেলেও সরকার কেন বিল আকারে তা পেশ করল না এবং এখন পুরনো তথ্য না-জানিয়ে কেন ‘মৃত’ অর্ডিন্যান্সকে ‘বৈধতা’ দেওয়ার চেষ্টা হল, এই প্রশ্নেই প্রতিবাদ করেছে বাম শিবির।
বিরোধী দলনেতা এবং প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র আপত্তি তোলেন অর্ডিন্যান্স পেশের প্রক্রিয়া নিয়ে। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত পরিষদীয় মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে টিকাটিপ্পনি-সহ সরকারের বক্তব্য জানাতে থাকায় তেতে ওঠে বিরোধী বেঞ্চ। প্রবল হইচই করে তাঁরা স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে ধরেন ‘পয়েন্ট অফ অর্ডার’ তুলতে দেওয়ার দাবিতে। স্পিকার রাজি না-হওয়ায় স্লোগান দিতে দিতে সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান বাম বিধায়কেরা। পরে স্পিকার বলেন, “মন্ত্রীর বক্তব্যের পরে বিল নিয়ে যখন ভোট শুরু করছি, সেই সময় পয়েন্ট অফ অর্ডার তোলা যায় না।”
সভাকক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে এসে বিরোধী দলনেতা বলেন, “বিলে আমাদের সমর্থন ছিল। কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘন করা হল। এক তাড়া কাগজের মধ্যে আমরা এটা খুঁজে পেলাম যে, ২৭ মে অর্ডিন্যান্স করা হয়েছিল। তার পরে দু’টি অধিবেশনেও সেটি পেশ করা হল না। দুর্ভাগ্যজনক যে, সভার অভিভাবক হয়েও স্পিকার আমাদের প্রতিবাদের অধিকার দিলেন না।” স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন সভায় আসেননি, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সূর্যবাবু। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর হাতে এতগুলি দফতর। তিনি কেন বিধানসভা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, জানি না! মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র (কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার) দফতর, আজ স্বাস্থ্য দফতরের বিল পেশ হল। তিনি সভায় নেই। বৃহস্পতিবার ভূমি দফতরের বিলেও থাকবেন কি না, জানি না। ওঁরা কথায় কথায় ৩৪ বছর বলেন। ৩৪ বছরে মন্ত্রী ছাড়াই এ ভাবে একের পর এক বিলের নজির দেখাতে পারবেন?”
বিতর্কের পরে সভার বাইরে মন্ত্রী সুব্রতবাবু বলেন, “বাম আমলে কম করেও বার চারেক রাজ্য স্বাস্থ্য পরিষেবা আইনটি সংশোধন করা হয়। শেষ সংশোধনীর মেয়াদ শেষ হয়ে যায় চলতি বছর ২৪ মে। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০ মে। ২৫ ও ২৬ তারিখ সরকারি ছুটির দিন থাকায় কিছু করা যায়নি। সংশোধনী-সহ যে অর্ডিন্যান্স এ দিন সভায় পেশ হয়, সেটি কার্যকর হয়েছে ২৭ মে থেকে। এতে বিরোধীদের বলার কিছু থাকে না! তবু ওঁরা হইহল্লা করে বেরিয়ে গেলে কী করার আছে?” |