হাসপাতাল থেকে নাসির্ং হোম, বহুতল থেকে শপিং মল, কেউই যে দমকল আইনের ধার ধারে না, দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান নিজেই তা পরোক্ষে স্বীকার করে নিলেন। তাঁর নিজেরই কথায়, “পুরোপুরি অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা দেখতে গেলে ৯৯% সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালই বন্ধ করে দিতে হয়। তা সম্ভব নয়।” আমরির ঘটনায় ওই হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। পরে নাইটিঙ্গল হাসপাতালের অগ্নি নিরোধক ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে সেখানে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশে দিয়েছে দমকল দফতর। প্রশ্ন উঠেছে, যে যুক্তিতে নাইটিঙ্গলে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে, সেই একই যুক্তিতে কেন সরকারি হাসপাতাল এবং ইতিমধ্যে পরিদর্শন করা বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?
দমকলমন্ত্রীর যুক্তি, “নাইটিঙ্গলের আগুন নেভানোর ব্যবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তাই নির্দিষ্ট সময় দিয়ে সেখানে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উডল্যান্ডস, ফর্টিস হাসপাতালের অবস্থা অতটা খারাপ নয়। তাই তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে শুধরে নেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হবে।” সরকারি হাসপাতালের হয়ে খানিকটা সাফাই গেয়েছেন মন্ত্রী। তাঁর মতে, বেসরকারির চেয়ে সরকারি হাসপাতালের অবস্থা তুলনামূলক ভাবে ভাল। কলকাতার সরকারি হাসপাতালগুলিতে প্রবেশ-প্রস্থানের পথ বেশ প্রশস্ত। রয়েছে আগুন নেভানোর মতো পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা। আগুন নেভানোর ব্যবস্থাও তুলনামূলক ভাবে উন্নত। তবে অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রগুলি কাজ করে না, স্মোক ডিটেক্টর ও ফায়ার অ্যালার্ম অচল। মন্ত্রী জানান, খুব দ্রুত এই ব্যবস্থাগুলি সচল করে তোলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া সরকার ঠিক করেছে, হাসপাতাল-সহ রাজ্যের যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে তেজস্ক্রিয় পদার্থ রাখা হয় সেখান থেকে কোনও বিকিরণ ছড়াচ্ছে কিনা তা জানতে ন্যাশনাল ভেরিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রোন সেন্টারকে (এনভিসিসি) দিয়ে সমীক্ষা করাবে। বুধবার মহাকরণে পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার জানান, তাঁর সঙ্গে এনভিসিসি-র ডিরেক্টর আর কে ভাণ্ডারীর এ নিয়ে কথা হয়েছে।
কিন্তু বছরের পর বছর ধরে অব্যবস্থা বজায় থাকলেও কেন সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হবে না? এখানেই দমকলমন্ত্রীর যুক্তি, “তা হলে তো ৯৯% সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালই বন্ধ করে দিতে হয়। তা সম্ভব নয়। সরকারি হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেলে গরিব মানুষ যাবেন কোথায়? সেখানকার ডাক্তার-নার্স-কর্মী-সাপ্লায়ারদেরই বা কী হবে?” হাসপাতাল-বহুতল-শপিং মলগুলি জতুগৃহ হয়ে থাকা সত্ত্বেও কী করে তারা দমকলের লাইসেন্স পায়? দফতরের দায় স্বীকার করে নিয়েও জাভেদ পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, “৩৪ বছর এই প্রশ্ন তোলা হয়নি। এখন কেন তোলা হচ্ছে?”
প্রাক্তন দমকলমন্ত্রী প্রতীম চট্টোপাধ্যায় বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ‘দ্বিচারিতা’-র অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর কথায়, “অগ্নিবিধি না মানা সত্ত্বেও অধিকাংশ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে আমরা সমঝোতা করেছি। সমঝোতা করতে হবে বলেই দমকল প্রতিরোধ আইনে ‘রাম্প’ আবশ্যিক করা হয়নি। কিন্তু এখনকার দমকলমন্ত্রী কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, কারও বিরুদ্ধে নয়এটা দ্বিচারিতা।” |