নির্দেশ দিয়েও হাসপাতালের ক্যান্টিনে রান্না করা বন্ধ করতে পারলেন না কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মেডিক্যাল কলেজের এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের ক্যান্টিনে রীতিমতো গ্যাসের উনুন জ্বালিয়ে রান্না করার ব্যবস্থা রয়েছে। তার জন্য দমকলের কোনও অনুমতিই নেওয়া হয়নি। সাম্প্রতিক আমরি-কাণ্ডের পরে ওই ক্যান্টিনের দিকে নজর পড়ে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের। তাঁদের মনে হয়, ওই ক্যান্টিন যে কোনও দিন বড় বিপদ ডেকে আনবে। তাই মঙ্গলবার সেই ক্যান্টিন তিন দিনের মধ্যে খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ উৎপল দত্ত। সেই সঙ্গে তিনি এ-ও জানিয়ে দেন, ওই ক্যান্টিনে অবিলম্বে রান্না করা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু বুধবারেও দেখা গেল, ক্যান্টিনে রান্না চলছে রমরমিয়ে।
রাজ্যের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের মতো কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেরও ‘ফায়ার লাইসেন্স’ নেই। তাই ক্যান্টিন চালানোর জন্য দমকলের কাছে আলাদা ভাবে অনুমতিও নেয়নি হাসপাতাল। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজের ওই ক্যান্টিন বন্ধের নোটিসে বলা হয়েছে, রোগীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের একতলায় এ ধরনের ক্যান্টিন চলতে দেওয়া যায় না। তাই মঙ্গলবার থেকেই ক্যান্টিনে রান্না বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বুধবারও ওই ক্যান্টিনে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচটি গ্যাস সিলিন্ডার জ্বালিয়ে রান্না করছেন কর্মীরা। কোথাও কোনও অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। ক্যান্টিনের ভারপ্রাপ্ত কর্মী মহম্মদ আফসারুল হক বলেন, “দীর্ঘ ন’বছর ধরে এ ভাবেই চলছে ক্যান্টিন। এত দিন কারও টনক নড়েনি।” |
মেডিক্যালের ক্যান্টিন। নিজস্ব চিত্র |
মেডিক্যাল কলেজের ওই ক্যান্টিনটি চালায় ইন্ডিয়ান কফি হাউস। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে ক্যান্টিন চালানো নিয়ে হাসপাতাল এবং কফি হাউসের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তির মেয়াদ এ বছরের ২৪ জুন শেষ হয়ে গিয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যে হেতু চুক্তির নবীকরণ হয়নি, তাই ওই চুক্তি এবং তার শর্তাবলীও বর্তমানে প্রযোজ্য নয়। সেই নির্দেশ অনুসারে, আজ, বৃহস্পতিবার মেডিক্যাল কলেজের ওই ক্যান্টিন খোলা রাখার শেষ দিন।
কফি হাউসের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার দীপঙ্কর দাশগুপ্ত জানান, তাঁরা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন, যাতে ক্যান্টিনটি এমসিএইচ বিল্ডিং থেকে সরিয়ে হাসপাতাল চত্বরের নিরাপদ কোনও জায়গায় নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। কারণ, ওই ক্যান্টিন বন্ধ হলে বহু কর্মীর কাজ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
কিন্তু এ ভাবে হাসপাতাল চত্বরে আগুন জ্বেলে রান্না করা যায় কি? দমকল সূত্রের উত্তর, হ্যাঁ যায়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে উপযুক্ত অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা (জলাধার, পাইপের সাহায্যে জল দেওয়ার বন্দোবস্ত) এবং দমকলের ছাড়পত্র প্রয়োজন। কফি হাউস কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, বিকল্প ব্যবস্থা হলে তাঁরা এ সব ব্যবস্থা করতে রাজি। যদিও উৎপলবাবুর দাবি, এমন কোনও প্রস্তাবের বিষয়ে কিছু জানা নেই। এখনই বিকল্প ব্যবস্থা করা যাবে না বলেও জানান তিনি। অধ্যক্ষ আরও বলেন, “যে হেতু কফি হাউসের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে, তাই নতুন করে দরপত্র ডাকা হবে। তখনই নতুন ক্যান্টিনের জায়গা ভাবা হবে এবং দমকলের ছাড়পত্র নেওয়া হবে।” |