লাখ টাকা গুনে এখন অকূল পাথারে ক্যানসার রোগীরা
স্বাগতা মিত্র জানেন না তাঁর আয়ু আর ঠিক কত দিন। বড় হাসপাতালে চিকিৎসা হলে রোগ সেরে যাবে এই আশায় আক্ষরিক অর্থেই ঘটি-বাটি বিক্রি করে ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছিল তাঁর পরিবার। রেডিওথেরাপির জন্য দেড় লক্ষ টাকার ‘প্যাকেজ’ও স্থির হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২৭ বছরের এই ক্যানসার রোগিণী সেই চিকিৎসা পেয়েছেন মাত্র ১ দিন। ৮ ডিসেম্বর রাতের দুর্ঘটনা অনেকগুলো প্রাণ যেমন কেড়ে নিয়েছে, তেমনই অনিশ্চিত করে তুলেছে আরও বহু জীবনকে।
জরায়ু মুখ ক্যানসারের তেমনই এক রোগিণী এমওয়ে আয়ে। মায়ানমারের মিয়াঙ্গো শহর থেকে চিকিৎসা করাতে এসে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে ৩৬ বছরের এই গৃহবধূর। ক্যাথিটার পরা অবস্থায় কোমরে দড়ি বেঁধে দমকলকর্মীরা কাচ ভেঙে নামিয়েছিলেন তাঁকে। তখন প্রাণে বাঁচলেও চোখে অন্ধকার দেখছেন এই ‘স্টেজ থ্রি’ ক্যানসার রোগিণী। সবে রেডিয়েশন শুরু হয়েছিল তাঁর। আমরির যে নতুন ভবনে আগুন লাগে, সেখানেই ছিল রেডিওথেরাপি বিভাগ। অগ্নিকাণ্ডের পরেই ভবনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমওয়েকে তখন সরানো হয় পুরনো ভবনে। কিন্তু মঙ্গলবার পুরনো ভবনটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁকে এখন পাঠানো হয়েছে মুকুন্দপুর আমরিতে। সেখানে আবার রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা নেই। আমরির সল্টলেকের হাসপাতালেও রেডিওথেরাপি হয় না।
মায়ানমারের রোগিণী এমওয়ে আয়ে। নিজস্ব চিত্র
মুকুন্দপুর কর্তৃপক্ষ ওই বিদেশিনিকে জানিয়েছেন, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে তাঁর রেডিয়েশন নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু কবে সেখানে ‘ডেট’ পাওয়া যাবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এনআরএসের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের হাসপাতালে প্রবল চাপ। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কোনও রোগীকে ফেরানোও মানবিকতার কাজ নয়। দেখা যাক কত দূর কী হয়।” এ দিন দোভাষীর মাধ্যমে এমওয়ে বারবার বলছিলেন, “রেডিয়েশনের ডেট পাওয়ার আগেই না ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়!”
আমরির নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম রেডিয়েশন নেওয়ার আগের দিনের মধ্যে সব রোগীকেই রেডিওথেরাপির পুরো টাকা জমা করে দিতে হয়। সেই অঙ্কটা পঞ্চাশ হাজার থেকে দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত। বিপর্যয়ের পরে ঢাকুরিয়া আমরির আশপাশের গেস্ট হাউসগুলো ঘুরে এমন বহু রোগীর খোঁজ মিলেছে, যাঁরা এই মুহূর্তে অকূল পাথারে পড়ে। কাটোয়ার এক রোগীর ছেলে সলিল দত্ত বললেন, “সব টাকা আগাম জমা দিয়েছিলাম। আমাদের এমন আর্থিক অবস্থা যে গেস্ট হাউসে থাকার টাকাও জোগাড় করতে পারছি না। চিকিৎসা তো দূর অস্ত্।” তাঁদের মতো অনেকেই এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু সব জায়গাতেই ভিড়। আগেই বলে দেওয়া হয়েছে, অপেক্ষা করতে হবে। মাস কাবারও হতে পারে!
সমস্যা হল, যাঁরা আমরিতে রেডিয়েশনের জন্য ভর্তি ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই কলকাতার বাইরে থেকে এসেছেন। এ শহরে তাঁদের থাকার জায়গাও নেই। রেডিয়েশন নেওয়ার খরচ জোগাড় করতেই তাঁরা প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে দিয়েছেন। যেমন স্বাগতার রেডিওথেরাপি চলার কথা ছিল দেড় মাস। ৮ তারিখ শুরু হওয়ার পরেই অগ্নিকাণ্ড সব ওলটপালট করে দিয়েছে। নদিয়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা স্বাগতাকে নিয়ে পরিবারের লোকেরা থাকছিলেন আমরির কাছেই একটা গেস্ট হাউসে। সেখান থেকেই রোজ রেডিয়েশন নিতে যেতেন তিনি। আপাতত সব বন্ধ। স্বাগতার ভাই শুভময়ের প্রশ্ন, “সব কিছু বিক্রি করে ওই টাকাটা জোগাড় করেছিলাম। এখন কী হবে? দিদির চিকিৎসা আর করানো যাবে বলে মনে হয় না।” প্রযুক্তিগত পার্থক্যজনিত অসুবিধার কথাও বলছে কোনও কোনও সরকারি হাসপাতাল। যেমন, আমরি-তে ‘রে’ দেওয়া হত ‘লিনিয়র অ্যাক্সিলেরেটর’ যন্ত্র থেকে। সরকারি হাসপাতালে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘কোবাল্ট’ ব্যবস্থা রয়েছে। দু’টি প্রযুক্তি আলাদা। ফলে রোগীদের চিকিৎসা দু’টি প্রযুক্তিতে ভাগ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা।
অগ্নিকাণ্ডের সময় আমরির নতুন ভবনে বেশ কয়েক জন ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু আমরি কর্তৃপক্ষ এখনও তাঁদের পুরো তালিকা জানাতে পারেননি। দায়িত্ব এড়াচ্ছেন চিকিৎসকেরাও। হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগের প্রধান কল্যাণ ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তাঁর অধীনে কত জন রোগীর রেডিয়েশন চলছিল সেটা তাঁর মনে নেই!
আমরির মেডিক্যাল সুপার সুমন ঘোষ অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, রেডিয়েশনের জন্য যে রোগীরা টাকা জমা দিয়েছিলেন, তাঁরা সেই টাকা ফেরত পাবেন। কিন্তু কবে? কী ভাবে? সুমনবাবু বলেন, “এ বিষয়ে নির্দিষ্ট এক জনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই এটা জানিয়ে দেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.