সারারাত মেঝেয় মূক-বধির যুবক
সংরক্ষিত আসন চাওয়ায় হেনস্থা
দার্জিলিং মেলে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে। টিকিট কেটে ওঠার পরেও এক প্রতিবন্ধী যুবককে সেখানে বসার আর্জি জানালে তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাতে ওই যুবক শিয়ালদহ থেকে দার্জিলিং মেলে ওঠেন। বুধবার সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে তিনি কর্তব্যরত রেল পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে জিআরপি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ জানায়, অভিযোগকারী যুবকের নাম মুন্না ভকত। তিনি মূক ও বধির। তাঁর অভিযোগ, প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত ৪ আসনের বিশেষ কামরায় তাঁরা উঠেছিলেন। আসন ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও তাদের সেখানে বসতে দেননি কর্মব্যরত রেল পুলিশ কর্মীরা। বরং তাঁদের সামনেই অর্থের বিনিময়ে সাধারণ যাত্রীদের কাছে আসনগুলি বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ। নিরুপায় হয়ে কামরায় মেঝেয় শুয়ে বসে রাত কাটাতে হয়েছে মূক ও বধির ওই যুবক ও তাঁর সঙ্গী দেবাশিস চক্রবর্তীকে।
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে জিআরপি’র আইসি অচিন্ত্য গুপ্ত তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন বলে মুন্নাবাবু দাবি করেছেন। ঘটনার কথা শুনেছেন শিলিগুড়ির রেল পুলিশ সুপার শ্যামল ভট্টাচার্যও। রেল পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা প্রতিবন্ধী যুবকের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সুব্রত হাজং প্রতিবন্ধী যুবকের হেনস্থার অভিযোগ ওঠা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “পুলিশ কর্মীদের সকলেরই মানবিকতা থাকা দরকার। প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকা সত্ত্বেও কেন তাদের জায়গা দেওয়া হল না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” জলপাইগুড়ি স্বপ্ন তোরণ সোসাইটির সম্পাদক দেবাশিসবাবু। মূক এবং বধির মুন্না ভকত ওই সংস্থার সদস্য। তাঁরা ২ জনে কলকাতায় গিয়েছিলেন একটি প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের হাতের কাজের সামগ্রী দেখাতে। দেবাশিসবাবুরা জানান, কাজ সেরে মঙ্গলবার রাতে দার্জিলিং মেল ট্রেনের সাধারণ কামরার টিকিট কাটেন তাঁরা। নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশনে পৌঁছে সাধারণ কামরায় উঠতে লাইনে দাঁড়ান। তখন জানতে পারেন সাধারণ কামরাটি ইঞ্জিনের কাছে রয়েছে। এর পর ভিড়ে ঠেলাঠেলির মধ্যে সাধারণ কামরায় উঠতে চেষ্টা করেন। কিন্তু মুন্না অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে নিয়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত ৪ আসনের বিশেষ কামরায় যান। অভিযোগ, দুই কনস্টেবল তাদের কামরায় উঠতে প্রথমে বাধা দেন। পরে অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী বলে শংসাপত্র দেখানোর পর অপর এক জিআরপি অফিসার কামরায় উঠতে দেন। তবে সিটের বদলে তাঁদের মেঝেতে বসতে বলা হয়। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত আসনগুলি ফাঁকা দেখে ফের অনুরোধ জানিয়েও লাভ হয়নি। উল্টে সাধারণ যাত্রীদের কাছে টাকার বিনিময়ে ২ টি আসন জিআরপি কর্মীরা বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ। দেবাশিসবাবু জানান, তিনি সুস্থ সমর্থ তাই অন্তত অসুস্থ মুন্নার জন্য একটা বসার জায়গা চেয়েছিলেন। কিন্তু দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরা কোনও মতেই জায়গা দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “ওই কামরায় অর্থের বিনিময়ে আমাদের সামনে ২ জনকে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসন দিয়ে দেন। অন্য দুটি আসনে পুলিশ কর্মীরা ঘুমোন। কম টাকা নিয়ে আরও তিনজনকে ওই কামরায় তোলা হয়েছিল। তারা মেঝেতে বসেন। মালদহে একটি আসন ফাঁকা হলে ফের অনুরোধ করেছি। তাতেও সামান্য মানবিকতা বোধ জাগেনি পুলিশ কর্মীদের মনে। প্রতিবাদ করলে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কটূক্তি করেন। তাতে আর মুখ খুলতে সাহস পাইনি। মন থেকে মানতে পারছি না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.