রাজ্যের দুই প্রাক্তন মন্ত্রী নিরুপম সেন ও গৌতম দেবের জন্য বরাদ্দ দু’টি ঘরের ‘বুকিং’ বাতিল করে দিয়েছে পূর্ত দফতর। বিধি মেনে লিখিত আবেদন জানিয়ে আগাম ‘বুকিং’ পাওয়ার পরেও আচমকা তা বাতিল হওয়ায় বিস্মিত দার্জিলিং জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। পূর্ত দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন, “পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সী আসবেন বলেই আগের বুকিং বাতিল হয়েছে।”
এই ঘটনা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠতে পারে, তা আঁচ করেছেন দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবও। বুধবার দুপুরে পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সীর সঙ্গে একই ট্রেনে আলিপুরদুয়ারের উদ্দেশে রওনার সময়ে ঘটনাটি তিনি জানতে পারেন। গৌতমবাবু বলেন, “পূর্তমন্ত্রী ঘটনাটি জানার পরে ট্রেন থেকেই বুকিং বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। একটি ঘর রেখে বাকিগুলি আবেদনকারীদের দিতে বলা হয়েছে।” কিন্তু সিপিএমের তরফে যিনি ঘর ‘বুক’ করেছিলেন, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সেই সদস্য জীবেশ সরকারের দাবি, রাত পর্যন্ত পূর্ত দফতর কিছু জানায়নি। |
শিলিগুড়ির হাসমি চকে পূর্ত দফতরের সেই বাংলো। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক |
নিরুপম সেন, গৌতম দেব এবং সীতারাম ইয়েচুরির জন্য শিলিগুড়ি শহরের হাসমি চক লাগোয়া পূর্ত দফতরের বাংলোয় তিনটি ঘর ‘বুক’ করা হয়েছিল। ইয়েচুরির ঘরের বুকিং শুধু বাতিল হয়নি। ঘটনা হল সুব্রতবাবু আজ, বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে পৌঁছবেন এবং সন্ধ্যায় কলকাতায় ফেরার ট্রেনে উঠবেন। আলিপুরদুয়ারেও তাঁর জন্য সার্কিট হাউস ও পূর্ত দফতরের বাংলো ‘বুক’ করা হয়েছে। সুতরাং মন্ত্রীর জন্য কতগুলো ঘর দরকার, তা বুঝে উঠতে পারছেন না সিপিএম নেতারা।
সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “মন্ত্রী থাকাকালীন ওই বাংলোয় মাঝেমধ্যে বৈঠক করতে হত। সেই সময় বিরোধী দলের কারও বুকিং বাতিলের দরকার পড়েনি। বৈঠক থাকলেও বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ঘর দেওয়ার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এখন তো সৌজন্যের রাজনীতি নিয়ে হইচই হচ্ছে। এটা কী ধরনের সৌজন্য, তা মানুষই বিচার করবেন।” জীবেশবাবু বলেন, “বাম আমলে বিরোধী দলের নেতাদের বুকিং দিয়ে বাতিল করার মতো ঘটনা ঘটেনি। এখন আবার শুনছি, ঘর দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। গোটা বিষয়টি অত্যন্ত অপমানজনক।”
বুধবার থেকে সিপিএমের জেলা সম্মেলন শুরু হয়েছে শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে। চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। সেখানে যোগ দিতে আসার কথা সীতারাম ইয়েচুরি, শ্যামল চক্রবর্তী, প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন, প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব এবং প্রাক্তন বিধায়ক রবীন দেবের। তাঁদের জন্য পূর্ত দফতরের বাংলোর ৩টি ঘর চেয়ে আবেদন করেছিলেন জীবেশবাবু। ঘর দেওয়া হবে বলে তাঁকে জানানো হয়েছিল। সম্প্রতি পূর্তমন্ত্রী আসার খবর জানিয়ে দু’টি ঘরের বুকিং বাতিল করে দেওয়া হয়।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পূর্তমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে আলিপুরদুয়ারে পৌঁছে দু’টি সেতুর উদ্বোধন করে থেকে রাতের ট্রেনে কলকাতা ফিরবেন। আলিপুরদুয়ারে সার্কিট হাউস, পূর্ত দফতরের বাংলো তাঁর জন্য রাখা হয়েছে। হাসমি চকের বাংলোয় সব মিলিয়ে ১১টি
ঘর রয়েছে। তৎসত্ত্বেও দুই প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘরের বুকিং বাতিল করা হলে যে সৌজন্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের জেলা নেতাদের একাংশও তা স্বীকার করেছেন। তৃণমূলের একাধিক নেতার কথায়, “আমাদের দলনেত্রী সৌজন্যের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সেখানে এমন ঘটনা
কী ভাবে ঘটল, সেটা স্পষ্ট হওয়া দরকার।” |