বিষ-মদ চলছেই, মৃত্যু হতেই শুরু হল রাজনীতি
ছরের পর বছর বিষ-মদের রমরমা ব্যবসা চলে দিব্যি! কিন্তু বুধবার মগরাহাটে বিষ-মদ খেয়ে এক ধাক্কায় বহু মানুষের মৃত্যু ঘটার পরে সেই ঘটনার ‘ফায়দা’ তুলতে যথারীতি ময়দানে নেমে পড়লেন রাজনীতির কারবারিরা! সমস্যার সমাধানের কোনও ইঙ্গিত যথারীতি মিলল না। মৃত্যু নিয়ে শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক হইচই!
বিষ-মদে মৃত্যু নিয়ে বিধানসভায় সরব হল বিরোধী বামফ্রন্ট। সিপিএম এবং শাসক-জোটের শরিক কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা বিন্দুমাত্র কালক্ষেপ না-করে ঘটনাস্থলে চলে গেলেন! রাজ্য আবার এক ধাপ এগিয়ে বিষ মদে মৃতদের পরিবারপিছু দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে দিল! সাধারণত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা বা পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হলে সরকার মৃতদের পরিবারপিছু ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে। বিষ-মদে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত রাজ্যের ইতিহাসে সম্ভবত নজিরবিহীন। যার জেরে রাজ্য মন্ত্রিসভারই এক সদস্যের আশঙ্কা, এর পরে এই ধরনের ঘোষণার ‘অপব্যবহার’ হতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য পরে সন্ধ্যায় টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ওই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, “যাঁরা মদ খেয়ে মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারগুলি অসহায়। তাই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ওদের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। যাতে তারা দোকান বা ওই জাতীয় কিছু করে সংসার চালাতে পারে।” একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি চোলাই মদের ঠেক ভেঙে দেওয়ার পক্ষে। চোলাই মদে আসক্তিকে ‘সামাজিক ব্যাধি’ হিসাবে অভিহিত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পুরোটাই বেআইনি। আইনি করলে সরকারের হাতে টাকা আসবে। কিন্তু তাতে সমাজের সঙ্গে বেইমানি হবে! তাই সকলের সাহায্যে ওগুলি ভাঙতে চাই।” তবে ওই ধরনের মদের ঠেক ভাঙতে সরকার যে ‘বাড়াবাড়ি’ করতে চায় না, তা-ও মুখ্যমন্ত্রীর কথা থেকে স্পষ্ট। তিনি বলেন, “এক সঙ্গে সব ভাঙতে গেলে অবশ্য দাঙ্গা হবে! সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষও হতে পারে।”
ওই ঘটনা নিয়ে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে বিরোধীরা। এ রকম ঘটনা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে বিরোধীরা হইচই করেন। ভারপ্রাপ্ত পরিষদীয় মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিধানসভায় জানান, মগরাহাটের সংগ্রামপুর অঞ্চলে বিষাক্ত মদ খেয়ে ৮ জনের (পরে সংখ্যা অনেক বেড়েছে) মৃত্যু হয়েছে। আরও ৮৫ জন অসুস্থ হয়ে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের মধ্যে ৫ জন গুরুতর অসুস্থ। চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা দাবি করেন, বিষাক্ত মদের ঘটনায় দুপুরেই অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ও শতাধিক মানুষ অসুস্থ। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে তাঁরা মগরাহাটে যাচ্ছেন। যদিও সিপিএম-ই গত ৩৪ বছর রাজ্যের প্রধান শাসক দল ছিল। তখন শাসক দলের ছত্রছায়াতেই রাজ্য জুড়ে বেআইনি মদের ব্যবসার রমরমা হয়েছে বলে অভিযোগ। বিভিন্ন সময়ে পুলিশ নানা এলাকার বেআইনি মদের ভাটি ভাঙতে গেলে স্থানীয় দুষ্কৃতী ও ওই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বাধায় পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে।
অসুস্থদের ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে দেখতে যান আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে কংগ্রেস নেতৃত্ব, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায় ও সিপিএমের নেতারা। মুকুলবাবু বলেন, “৩৫ বছরে বাম সরকার চোলাই মদের শিল্প তৈরি করেছে! এ বার দেখছি, কী করা যায়। নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সিপিএমের প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, “যা ছিল, তা বেড়ে ৩ গুণ হয়েছে তৃণমূল আসার পরে। সংগ্রামপুর স্টেশন সংলগ্ন ঠেকটি পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। ওটা দেখতে ৭ মাস লাগে না!” বিধানসভায় সুব্রতবাবু বলেছিলেন, “এটা সামাজিক ব্যাধি। কোনও সরকারের দায়বদ্ধতা নয়। এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনা আগেও ঘটেছে। বিরোধীদের অনুরোধ, আসুন, একসঙ্গে আলোচনা করি কী ভাবে এই ব্যাধি কমাতে পারি।” হাসপাতালে গিয়ে সরকারের শরিক প্রদেশ সহ-সভাপতি দেবপ্রসাদ বসু বলেন, “অসুস্থদের অনেকের পরিবার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ করেছেন। এই ঘটনায় অসুস্থদের চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই জেলার হাসপাতালগুলিতে।”
আবেদন-অনুরোধ অবশ্য আগেও হয়েছে। কিন্তু তাতে মৃত্যু আটকায়নি। বন্ধ থাকেনি রাজনৈতিক চাপানউতোরও। যেমন অব্যাহত এ দিনও!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.