জল-কর প্রশ্নে অনড়
বিদ্যুৎ মাসুলে ‘নমনীয়’ হওয়ার ইঙ্গিত মমতার
রাজকোষের বিপুল ঘাটতি মেটাতে কর বসিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানো নিয়ে তাঁর ‘অনড়’ মনোভাব খানিকটা ‘নমনীয়’ করার ইঙ্গিত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এমনিতে মমতা সাধারণ মানুষের উপর কোনও ‘বাড়তি চাপ’ দিতে রাজি নন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কয়লার দাম বৃদ্ধির পর তাঁকে বিদ্যুতের মাসুল বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। নইলে রাজ্যে লোডশেডিং-জমানা ফিরে আসার সমূহ সম্ভাবনা। ঠিক যেমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে জল-কর বসানো নিয়েও। তিনি কি সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন?
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “আমি মানুষের উপর চাপ দিতে পারব না। আমি এবং আমার টিম (মন্ত্রী এবং অফিসারদের নিয়ে) সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই সরকার চালাচ্ছি। বাজেটে বলেছিলাম, ৩০ শতাংশ রাজস্ব আদায় বাড়াব। সেটা ২১ শতাংশ পর্যন্ত করতে পেরেছি।” এর মধ্যে কেন্দ্র সম্প্রতি কয়লার দাম ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। যে জন্য রাজ্যকে দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ফলে বাড়তি লাভের গুড়ও নিয়ে যাচ্ছে ভর্তুকির পিঁপড়ে। এবং রুগ্ণ রাজকোষের উপর চাপ কমার বদলে বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
মমতা এ দিন জানান, কয়লার মূল্যবৃদ্ধির পর বিদ্যুতের মাসুল বৃদ্ধি নিয়ে তিনি কিছু ‘চিন্তাভাবনা’ করছেন। তাঁর কথায়, “সাধারণ মানুষের উপর চাপ না-দিয়ে যদি কিছু করা যায়! সমস্ত সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখব।” পাশাপাশিই তাঁর মন্তব্য, “ব্যবসার জন্য যাঁরা শপিং মল বা ওই ধরনের জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেন, তাঁরা কিন্তু বাড়তি মাসুল দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে হয়তো তাঁরা চায়ের দাম এক টাকা বাড়িয়ে দিলেন। কারণ, তাঁদেরও তো রক্ষণাবেক্ষণের দিকটা দেখতে হবে! কিন্তু সাধারণ মানুষ তো তা দিতে পারবেন না। গরিব, দিন-আনা-দিন-খাওয়া মানুষের উপর কর চাপানো আমি পছন্দ করি না।”
তবে তিনি যে জল-কর বসাতে এখনও নারাজ, তা-ও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “জল-কর আমি বসাতে দিতে চাই না।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পুরসভা আলাদা ভাবে জল-কর নেয়। তা নিয়ে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। তবে সাধারণ মানুষের উপর তিনি জল-কর বসানোর বিরোধী। কলকাতা-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি পুরসভার নির্বাচনে জল-করা না-বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা। তিনি মনে করেন, এখন সেই কথার ‘খেলাপ’ করা তাঁর পক্ষে অনুচিত। তবে ওই বিষয়েও মমতাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, শহরের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ পেতে গেলে তাদের ‘শর্ত’ অনুযায়ী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশিই গৃহস্থ বাড়িতেও জল-কর বসাতে হবে। এখন দেখার, সে ক্ষেত্রে মমতা কী ‘বিকল্প’ রাস্তা বার করেন।রাজ্য প্রশাসনের একাংশ মনে করছে, মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যে এই ইঙ্গিত রয়েছে যে, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দিতে যে সব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বিদ্যুতের ‘বাণিজ্যিক সংযোগ’ নেবে বা নেবেন, সে সমস্ত ক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে বর্ধিত মাসুল চালুর কথা ভাবতে পারে সরকার।
মুখ্যমন্ত্রিত্বে ছ’মাস অতিবাহিত করার পর এ দিন ‘স্টার আনন্দে’ ওই সাক্ষাৎকারে মমতার কথায় যেমন ঘুরে ফিরে এসেছে সাম্প্রতিক আমরি-কাণ্ড বা মগরাহাটের বিষয়, তেমনই এসেছে পাহাড় ও জঙ্গলমহল প্রসঙ্গও। কিন্তু আগামী দিনে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে সব চেয়ে বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ সম্ভবত রাজস্ব বৃদ্ধি করে রাজকোষের ঘাটতি মেটানো এবং রাজ্যে শিল্প সম্ভাবনা তৈরি করা। আরও সরাসরি বললে, শিল্পের জন্য জমির বিষয়টি।
নিজের সরকারের খসড়া জমিনীতিতে মমতা জানিয়েছেন, শিল্পপতিদের নিজেদেরই শিল্পের জন্য জমি কিনে নিতে হবে। সরকার তাঁদের কোনও জমি অধিগ্রহণ করে দেবে না। সে বিষয়ে শিল্পমহলের একাংশের মধ্যে ইতিমধ্যেই খানিকটা ‘সংশয়’ দেখা দিয়েছে। যেমন একাংশের ‘উদ্বেগ’ রয়েছে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন নিয়েও। মমতা অবশ্য এ দিন সাফ বলেছেন, “জমির ঊর্ধসীমা আইন তোলার কথা ভাবা হচ্ছে না।” তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, “জমি কম আছে। জমি নিয়ে যা ইচ্ছে তা-ই হয়েছে। কেউ কেউ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ফেলে রেখে দিয়েছে। ওই সব জমিতে উগ্রপন্থীদের আমোদখানা হতে দেব না! তাই জমির ঊর্ধ্বসীমা রাখা হয়েছে।” তবে তৃণমূলেরই একাংশের ব্যাখ্যা, ওই আইনের ফলে শিল্প আটকাবে না। কারণ, ওই আইন সত্ত্বেও টাটা গোষ্ঠী সিঙ্গুরে প্রায় হাজার একর জমি পেয়েছিল। সে ক্ষেত্রে অবশ্য জমিটি ‘লিজ’ নিতে হয়েছিল।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) গড়ার ক্ষেত্রেও যে তাঁর আপত্তি আছে, সাক্ষাৎকারে মমতা সে কথা জানিয়ে বলেছেন, “জমি নিয়ে কেউ কেউ এসইজেড গড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু শিল্পের জন্য যে জমি চেয়েছে, আমি করে দিয়েছি।” শিল্পের জন্য যাঁরা জমি নিয়েছেন, তাঁদের প্রকল্প ধরে ধরে জমি সংক্রান্ত ‘সমস্যা’ মেটানোর চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান। উদাহরণ হিসেবে জিন্দল এবং বুধিয়াদের জমি-সমস্যা মেটানোর বিষয় উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন এবং এসইজেড নিয়ে তাঁর মন্তব্যে স্পষ্ট, যে জমি আন্দোলনকে ‘হাতিয়ার’ করে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন, সেই জমির প্রশ্নে নিজের অবস্থান তিনি বদলাতে রাজি নন। রাজ্যে শিল্প প্রসারের ক্ষেত্রে তাঁর ‘উদ্যোগের’ কথা বোঝাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি রেলমন্ত্রী থাকাকালীনই রাজ্যে রেলের ১৭টি প্রকল্প হয়েছিল। বেশ কয়েকটির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ডানকুনি, নিউ জলপাইগুড়ি, বজবজে রেলের কারখানা হচ্ছে। দু’এক বছরের মধ্যে সেখানে কর্মসংস্থানও হবে।” রাজ্যে শিল্পের জন্য ইতিমধ্যেই ৫৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে জানিয়ে মমতা বলেন, শিল্প পরিকাঠামো গড়তে ‘ক্যাবিনেট কমিটি’ও করা হয়েছে।
নন্দীগ্রাম-উত্তর পর্বে বর্ধমানের কাটোয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় (তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় তৃণমূলের একাংশও ছিল) তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ থমকে যায়। কাটোয়ার কথা উল্লেখ করেননি তিনি। তবে রাজ্যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, “আদ্রায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির জন্য আগ্রহী লারসেন অ্যান্ড টুবরো। জঙ্গলমহলেও হাজার একর জমিতে তাপবিদ্যুৎ গড়ার জন্য ওই সংস্থাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।” জমির অপ্রতুলতা। তাই কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাভুক্ত এলাকার জমি চেয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহনকে চিঠি দেন তিনি মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বিষয়টি বন্দরমন্ত্রীকে জানিয়েছেন।” বন্দরের জমি দরকার কেন? মমতা বলেন, “ওখানে ‘নলেজ সিটি’ করা হবে। সে জন্য স্যাম পিত্রোদার নেতৃত্বে কমিটিও করা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.