|
|
|
|
দমকলকেন্দ্রের ভবনের ভগ্নদশা |
আগুন নেভাবেন যাঁরা তাঁরাই ভোগেন আতঙ্কে |
নির্মল বসু • বসিরহাট |
আমরির অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে সব ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে দমকল বিভাগের ছাড়পত্র রয়েছে কি না। খতিয়ে দেখা হচ্ছে দমকল কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও। কিন্তু কোনও অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা প্রতিরোধে যাঁদের ঘাড়ে দায়িত্ব পড়ে সেই দমকল বিভাগের আগুন নেভানোর পরিকাঠামো কতটা উন্নত? আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দমকল বিভাগের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে গিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমায় চোখে পড়ল দমকল বিভাগের বেহাল অবস্থা।
১৯৬৯ সালে চালু হয়েছিল বসিরহাট দমকল বিভাগ। বদরতলায় খালের পাশে একটি দোতলা বাড়িতে খোলা হয়েছিল মহকুমার একমাত্র দমকল বিভাগ। নীচের তলায় তিনটি ও উপরের তলায় দু’টি ঘর ও গ্যারাজ-সহ কয়েকটি ছোট ঘরও রয়েছে। কেন্দ্রে রয়েছেন ৩ জন অফিসার, ৫০ জন দমকলকর্মী। মাঝেমধ্যে সামান্য মেরামতি ও রঙ করা হলেও পাকাপাকি সংস্কারের অভাবে বর্তমানে দমকল কেন্দ্রের বাড়িটির শোচনীয় অবস্থায়। যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। দেওয়াল জুড়ে চওড়া ফাটল। ছাদের একটি অংশ-সহ ভেঙে পড়েছে দেওয়ালের বিম। খালের ধারে বাড়িটির একতলার মেঝের বেশ কিছুটা অংশ ধসে গিয়েছে। নীচের দিকে তাকালে খালের জল নজরে আসে। কখনও ভুল করে পা ফেললে সোজা খালে গিয়ে পড়তে হবে। দিনের বেলায় ঘরের মধ্যে তবু দেখেশুনে হাঁটাচলা করা যায়। |
|
ঘরের মেঝে ধসে গিয়ে নেমে গিয়েছে খালে। দেওয়াল জুড়ে বিপজ্জনক ফাটল।-নিজস্ব চিত্র। |
রাতে বিশেষ করে লোডশেডিং হলে বড় বিপদের আশঙ্কায় সেখানে থাকেন না দমকলকর্মীরা। এ হেন অবস্থায় ক্ষুব্ধ দমকলকর্মীদের বক্তব্য, যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যদের নিরাপত্তা দেওয়া তাঁদের কাজ, তখন দফতরের মধ্যে তাঁদের দিন কাটছে নিরাপত্তাহীনতায়। তাঁদের অভিযোগ, পরিস্থিতি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু লাভ যে হয়নি বলাইবাহুল্য। পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরি করা হবে বলে খালি প্রতিশ্রুতিই পাওয়া যাচ্ছে।
দমকলকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, সংস্কারের অভাবে ভেঙে পড়েছে চালকের ঘর-সহ সরঞ্জাম রাখার গুদাম ও তিনটি ঘর। খালের ধারের মাটি ভাঙতে ভাঙতে বাড়ির দেওয়াল ছুঁয়ে যাওয়ায় ফাটল ধরেছে গ্যারাজের দেওয়ালে। যেখানে থাকে জলভর্তি বড় গাড়ি এবং একটি ছোট গাড়ি। আরও তিনটি গাড়ি থাকলেও সেগুলি খারাপ। মাটি আলগা হয়ে গ্যারাজের মেঝের কিছু অংশ নীচে ধসে যাওয়ায় যে কোনও সময় ছাদ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতার অভাবে আবর্জনার পাশে ভগ্নপ্রায় শৌচাগার। পাশে ঝোপঝাড় থাকায় রাতবিরেতে সাপখোপের আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটে দমকলকর্মীদের। বাড়ির ভগ্নদশার বিষয়ে ফায়ার অপারেটর সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, “বাড়ির যা পরিস্থিতি তাতে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়।” স্টেশন অফিসার সুনীলবরণ মাহাতোর অবশ্য দাবি, “দেওয়ালে ফাটল ধরলেও অতটা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। শীঘ্রই বাড়িটি ভেঙে নতুন ভবন তৈরি করা হবে।”
মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের বিরুদ্ধে লড়তে একটি মাত্র দমকল কেন্দ্র এবং সাকুল্যে দু’টি গাড়ি। একদিকে দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা, হিঙ্গলগঞ্জ, লেবুখালি, হাসনাবাদের বিশপুর, বাদুড়িয়ার রুদ্রপুর, বসিরহাটের ঘোজাডাঙা, মিনাখাঁর ঘটকপুকুর, হাড়োয়ার গাজিতলা, স্বরূপনগরের তরণীপুর--দূরত্বের কারণে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যেতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। সে জন্য টাকি, স্বরূপনগর ও বাদুড়িয়ার মধ্যে আরও দু’টি দমকলকেন্দ্র করার পরিকল্পনা নেওয়া হলেও সেই কাজ বিশেষ এগোয়নি। ফলে চাপ পড়ে গিয়েছে বসিরহাট দমকলকেন্দ্রের উপর। তা সত্ত্বেও সেখানে পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। যেখানে সর্বক্ষণ ১৮ জন কর্মী থাকার কথা, সেখানে রয়েছেন মাত্র ১৩ জন।
দমকল বিভাগের মহকুমা দফতরের ওসি রঞ্জিত মণ্ডল বলেন, “দমকলের বাড়িটির অবস্থা খুবই খারাপ। তার মধ্যেই কর্মীদের কাজ করতে হচ্ছে। নতুন বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে টেন্ডার হচ্ছে না।” তবে একই সঙ্গে তিনি জানান, যে ভাবে মহকুমায় লোকসংখ্যা বাড়ছে, বাজার দোকানপাট বাড়ছে, তাতে আরও দু’টি দমকলকেন্দ্র হলে ভাল হয়। |
|
|
|
|
|