উৎসব বাড়ির চেহারা
আগুন লাগলে ভরসা ‘কলের’ জল
হরের কোনও ব্যস্ত মোড়ে একটু ভাল জায়গায় বাড়ি আর পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স, এ দু’য়ের ভরসায় অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়ার রমরমা ব্যবসা চলছে বহরমপুর জুড়ে। সেখানে নিরাপত্তা, তা নিয়ে বাবার অবকাশ কোথায়?
বহরমপুর শহরে এখন প্রায় খান ত্রিশ অনুষ্ঠান বাড়ি রয়েছে। আগুন যার কোনওটিতেই অগ্নিকাণ্ড সামাল দেওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থা রয়েছে এমন দাবি কেউ করবেন না। এমনকী সামান্য ফোম বোঝাই সিলিন্ডারও চোখে পড়বে না কোনও বাড়িতে। রাজ্য পর্যটন দফতরের ট্যুরিস্ট লজ বা মৎস্য দফতরের সিরাজবাগেও অবস্থাটা একটুও অন্য রকম নয়।
সব ক্ষেত্রেই বহরমপুর পুরসভা অবশ্য ‘ট্রেড লাইসেন্স’ দিয়েই দায় সেরেছে। পুরসভার নিজস্ব অনুষ্ঠান বাড়ি ‘শুভদৃষ্টি’তেও নেই কোনও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্যের কথায় তা স্পষ্ট, “পুরসভার অনুষ্ঠান বাড়িতে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা তেমন না থাকলেও প্রতিটি তলায় প্রয়োজনীয় কলের জলের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে দমকল দফতরের অনুমোদন লাগে না বলেই প্রয়োজনীয় সতর্কতাটুকুও অবলম্বন করা হয়নি। এটা আমাদের ত্রুটি।”
অনুষ্ঠান বাড়িতে খোলা পড়ে বিদ্যুতের তার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
উৎসব বা অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভাড়া নেওয়া ওই সব বাড়িগুলিতে হালফিলে আতসবাজি প্রদর্শনীর চল শুরু হয়েছে। আতসবাজির ফুলকি থেকেও আগুন লেগে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আরও বেশি করে যেখানে সতর্ক ও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন, তার বদলে অনুষ্ঠান বাড়ির মালিকদের মধ্যে উদাসীনতা রয়েছে বলে অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দমকল দফতরের এক অফিসার বলেন, “উৎসব বা অনুষ্ঠান বাড়িতে রান্না করেন, সাধারণত তাঁরা প্রশিক্ষিত নন। এ দিকে ৪-৫টি গ্যাস সিলিন্ডারের পাশেই পড়ে থাকতে দেখা যায় তেল-ঘিয়ের শিশি। এমনকী যে উনুনে রান্না হয়ে থাকে তা নামী কোনও কোম্পানীর তৈরি নয়। স্থানীয় ভাবে তৈরি কম দামি ওই উনুনে রান্না করা হয়। সেই সঙ্গে গ্যাসের উনুন ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে সতর্কতা বা সচেতনতা প্রয়োজন তার অভাব থাকে। এতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।”
এর পাশাপাশি বাহারি ও ঝলমলে আলো দিয়ে সাজাতে গিয়ে বাড়তি বিদ্যুতের ‘লোড’ নেওয়ায় অনুষ্ঠান বাড়িগুলিতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়। এ ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের অভিযোগ, বাড়ি ভাড়া যাঁরা নিচ্ছেন, অনেক সময়ে তাঁদের বাড়তি বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রবণতা থাকে। তাঁদের এ ব্যাপারে সচেতন করেও লাভ হয় না। বহরমপুরের এক অনুষ্ঠান বাড়ির মালিক সঞ্জয় সিংহ বলেন, “যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানে এখন আতসবাজির চল শুরু হয়েছে। আমাদের অনুষ্ঠান বাড়িতে আতসবাজি প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং নিয়মাবলীর মধ্যে তা উল্লেখও রয়েছে। কিন্তু অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়া নেওয়ার পরেই অনেকে আছেন যাঁরা বাজি ফাটানোর জন্য জেদ করেন। এক্ষেত্রে তাঁরা কারও নিষেধ শোনে না।” অনুষ্ঠান বা উৎসব বাড়িতে আতসবাজি প্রদর্শনীর রুখতে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। হাতে গোনা কয়েকটি অনুষ্ঠান বাড়ি ছাড়া প্রায় সব বাড়িতেই যাতায়াতের একটি মাত্র পথ এবং তাও সংকীর্ণ। তার মধ্যে বাড়ির উপরের তলায় রান্না ব্যবস্থাও থাকে না। বদ্ধ ঘরের মধ্যে রান্নার জায়গাতেই চলে বিড়ি-সিগারেট খাওয়া। অনুষ্ঠান বাড়ির এক মালিক প্রদীপ ঠাকুর বলেন, “দমকল দফতরের এনওসি নেওয়ার বিষয়টিই আমাদের জানা ছিল না। কেননা, এ ব্যাপারে আমাদের কেউই সচেতন করেনি। আমরি’র ঘটনার পরে আমরাও স্থির করেছি, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখার।” তবে একটি অনুষ্ঠান থেকে পরের অনুষ্ঠানের মাঝে বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে জেনারেটর ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হয় না।
রাজ্য পর্যটন দফতরের বহরমপুর ট্যুরিস্ট লজের ম্যানেজার প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, “উৎসব-অনুষ্ঠানে আমাদের লজ ভাড়া দেওয়া হলেও অগ্নিনির্বাপক কোনও ব্যবস্থা নেই। অনুষ্ঠান চলাকালীন আগুন লাগার ঘটনা ঘটলে দমকল দফতরের উপরে নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই।”
দেরিতে হলেও বহরমপুর পুরসভার অবশ্য টনক নড়েছে। তারা অনুষ্ঠান বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেলা চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি অজয় সিংহ বলেন, “দমকল দফতরের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট ছাড়া অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়া দেওয়া উচিত নয়। পুরসভা বা প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.