আর্মান্দো কোলাসো যখন যুবভারতীতে সাত সকালে অনুশীলন শেষ করে টিম বাসে উঠছেন, তার কাছাকাছি সময়ই বন্ধ হয়ে গেল ট্রেভর মর্গ্যানের ক্লাবের সিংহদরজা! ইস্টবেঙ্গল মাঠে শুরু হয়ে গেল নজিরবিহীন ‘ক্লোজড ডোর’ অনুশীলন!
দরজা যখন খোলা হল তখন লাল-হলুদের ব্রিটিশ কোচ হাসছেন, “চাপটা ওদের। আমরা তো তাড়া করছি।” যার পাল্টা হিসাবে টিম বাসের জানলা খুলে ডেম্পো কোচের জবাব, “আমাকে চাপে ফেলে লাভ হবে না। এই ম্যাচে যাই হোক আমার টিমই লিগ টেবিলে সবার আগে থাকবে। চাপ তা হলে কাদের?”
ধারে, ভারে, গুরুত্বে আই লিগের ‘এল ক্লাসিকো’ বলা হচ্ছে আজকের ইস্টবেঙ্গল-ডেম্পো ম্যাচকে। এই যুদ্ধে এখনও গুয়ার্দিওয়ালার মতো এগিয়ে আছেন মর্গ্যান। তাঁর কোচিংয়ে লাল-হলুদের পক্ষে ফল ৩-১। মোরিনহো হয়ে আর্মান্দো সেই ব্যবধান কমাতে পারেন কি না সেটা সময় বলবে। তবে মেসি, রোনাল্ডো, জাভি, দি’মারিয়াদের মতো মরিয়া মনোভাব নিয়েই যে নামবেন টোলগে-ওপারা কিংবা র্যান্টি-কোকোরা, ম্যাচের আগের বত্রিশ ঘণ্টার নানা ঘটনায় তা পরিষ্কার। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে, মঙ্গলবার রাতে ম্যাচ কমিশনার সুবর্ণকে ডেম্পো-কোচ হুমকি দেন, “যুবভারতীতে আমাদের প্র্যাক্টিস করতে না দিলে টিমই নামাব না। আপনি নিরপেক্ষ থাকুন।”
আর্মান্দো টিম নিয়ে মঙ্গলবার বেশি রাতে শহরে পৌঁছে জানাতে পারেন, যুবভারতীর নয়, ইস্টবেঙ্গল মাঠে তাঁদের অনুশীলন করতে হবে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রাক্তন জাতীয় কোচ। আইএফএ-র এক সহ-সচিবের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। বিমানবন্দর থেকেই আর্মান্দো ফোনে অভিযোগ জানান ফেডারেশন সচিবকে। বলেন, “টুর্নামেন্টের নিয়মে আমাদের স্টেডিয়ামেই প্র্যাক্টিস করতে দিতে হবে। ব্যবস্থা করুন।” রাত এগারোটায় যুবভারতীতে অনুশীলনের অনুমতি পায় ডেম্পো। এ দিন সকাল আটটায়। পঁয়তাল্লিশ মিনিটের জন্য। আর্মান্দো এটাই চাইছিলেন। কারণ তাঁর ধারণা ছিল, শেষ মুহূর্তের এই খবর কেউ পাবে না। সবার চোখ এড়িয়ে প্র্যাক্টিস সেরে টিম নিয়ে ফিরে আসবেন। তাঁর ইচ্ছে আংশিক সফল। কিছু নাছোড় মিডিয়া পৌঁছে গিয়েছিল আর্মান্দোর প্রস্তুতির খোঁজ পেতে। |
মর্গ্যান অবশ্য মাঠের বাইরের যুদ্ধে ১-১ করে ফেলেন সকালেই। ‘ক্লোজড ডোর’ অনুশীলনে ফটোগ্রাফারদের ক্যামেরা ব্যাগ-বন্দি করে দিয়ে। টোলগে-মেহতাব-পেনদের নিয়ে এক ঘণ্টার বিশেষ গোপন অনুশীলন চলাকালীন কোনও ছবি তুলতে দেননি তিনি। অ্যালান গাও মাঠে আসার পর সেট পিস অনুশীলন থামিয়ে দিয়ে তবেই তাঁর ছবি তোলার অনুমতি দেন ব্রিটিশ কোচ।
মাঠের বাইরের যুদ্ধ চলার মধ্যেই নিজেদের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে বসে গিয়েছেন দু’দলের কোচই। শুরু হয়ে গিয়েছে একে অপরকে লক্ষ করে দু’দলের ফুটবলারদের কথার-বোমাও। র্যান্টি মার্টিন্স যেমন বলে দিয়েছেন, “ওপারা আমার বন্ধু। কিন্তু মাঠের ভেতর নয়। কাল দেখব কে জেতে!” উল্টো দিকে টোলগে ওজবের জবাব, “ডেম্পোর বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করা কঠিন। কিন্তু একটা গোল করবই।” থেমে নেই তাঁদের কোচেরাও। আর্মান্দো যেমন বলেছেন, “গোয়ায় স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে ট্রেভরের টিম ভাগ্যের জোরে জিতেছিল।” পাল্টা মর্গ্যানের মন্তব্য, “কবে কী হয়েছে জানি না। কাল জিততে চাই। যেটা এখন দরকার।”
আর্মান্দো এবং মর্গ্যান দুই কোচেরই সুবিধা পুরো টিম হাতে পাচ্ছেন। কুড়ি দিন পর সাফজয়ী দলের সাত ফুটবলার ফিরেছেন ডেম্পো অনুশীলনে। ক্লাইম্যাক্স, ক্লিফোর্ড, গাউলি, সমীর নায়েকদের নিয়ে উচ্ছ্বসিত আর্মান্দো। “ওরা জানে ক্নান্তি সত্ত্বেও কী ভাবে ম্যাচ বের করতে হয়।” টোলগে-পেনদের কী ভাবে আটকাবেন জানতে চাওয়া হলে শান্ত গলা থেকে হঠাৎই কড়া জবাব আসে। “ইস্টবেঙ্গল আগে ঠিক করুক আমার র্যান্টি-কোকোকে কী ভাবে আটকাবে...।” ইস্টবেঙ্গলে তিনটি পরিবর্তন হচ্ছে। রবিন সিংহের চোট থাকায় লেন শুরু করবেন। সৌমিক দে এবং মেহতাব হোসেন ঢুকছেন প্রথম দলে। অ্যালান গাও হয়তো থাকবেন রিজার্ভে। গাও নিজে বললেন, “ইঞ্জেকশন নিয়েছি। দু’দিন বিশ্রাম নিতেই হবে।” গাও না রাজি হলে সৈকত।
পাঁচ দিন আগেই লিগ টেবিলে পিছিয়ে থেকেও ‘এল ক্লাসিকো’য়ে জিতেছিল বার্সেলোনা। মাদ্রিদের ফলের পুনরাবৃত্তি হলে কিন্তু আই লিগ জমে যাবে।
|