‘মনে হচ্ছিল জেমস বন্ডের রোমাঞ্চকর সিনেমা চলছে!’... ‘এই ম্যাচ জিততেও মা কালীকে ডাকতে হল!’... ‘ব্যারেটোকে বসিয়ে মণীশকে নামানোটা বাবলুদার মাস্টারস্ট্রোক।’... ‘চার্চিল ম্যাচেও ‘শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা’-কে বসানোর পরেই তো ভাল খেলেছিল মোহনবাগান।’... ‘হ্যাটস অফ টু ওডাফা। দেশের এক নম্বর স্ট্রাইকার কে, আবারও প্রমাণ হয়ে গেল।’
মোহনবাগান ম্যাচ শেষ হওয়ামাত্র বুধবার বিকেলে ফেসবুকে অনবরত আছড়ে পড়া মন্তব্যের কিছু নমুনা। যেখানে সবুজ-মেরুন জনতার যন্ত্রণা, ক্ষোভ এবং ঘুরে দাঁড়ানোর আকুতি মিলেমিশে একাকার।
আই লিগ টেবিলে সবচেয়ে নীচে থাকা দলের কাছে হারতে-হারতে রুদ্ধশ্বাস জয় মোহনবাগানের। ০-২ থেকে ৪-২ করেও সংশয়ের কালো মেঘ কাটছে না সুব্রতর বাগানে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে ডেম্পো, ইস্টবেঙ্গল কিংবা চার্চিলের বিরুদ্ধে কী হবে পালতোলা নৌকার? বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে টিডি সুব্রত ভট্টাচার্য অবশ্য বললেন, “এখনও সুনীল, লিমা, অসীম বাইরে বসে। ওরা টিমে ঢুকলে মোহনবাগানের চেহারা বদলে যাবে।”
কিন্তু সে তো ভবিষ্যতর কথা। বর্তমান হল, যাদের ঘরের মাঠে গিয়ে আট গোল দিয়ে এসেছে ইস্টবেঙ্গল সেই হ্যালের বিরুদ্ধে শুরুর আধ ঘণ্টার মধ্যে স্কোরলাইন দেখাচ্ছিল ০-২ পিছিয়ে মোহনবাগান। দু’টো গোলেই ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ডিফেন্সের। আনোয়ার, কিংশুক, ধনরাজন, সুরকুমারের অবস্থা এখন এতটাই শোচনীয় যে, ছোট দলের স্ট্রাইকাররাও বলে-বলে গোল করে যাচ্ছেন। আর গুনাগার দিতে হচ্ছে গোলকিপার সংগ্রামকে। প্রথমার্ধেই হ্যালের হামজা এবং মেত্তি যখন গোল করছেন, তখন তাঁদের আশপাশে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। সংগ্রাম একা আর কী করবেন? রক্ষণের দোষ-ত্রুটি আড়াল করলেন না কোচ প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ফোনে সাফ বললেন, “ডিফেন্ডারদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব হচ্ছিল। ডিফেন্সে ভারসাম্য আনতে আমাদের আরও খাটতে হবে।”
ভাল ব্যাপার একটাই। আগের ম্যাচেই কলকাতা লিগের ‘লাস্ট বয়’ পুলিশ এসি-র বিরুদ্ধে হার বাঁচাতে না পারলেও, বেঙ্গালুরুর মাঠে ঝলসে উঠলেন সেই ওডাফা ওকোলি। দেওয়ালে পুরোপুরি পিঠ ঠেকে যাওয়া মোহনবাগানকে টেনে তুলল তাঁর চোখধাঁধানো দুটো গোল। দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র ন’মিনিটের ব্যবধানে। কিন্তু তখনও পুরো লজ্জামুক্তি ঘটেনি ১৩ কোটির টিমের। ম্যাচ শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে আরও বড় নাটকীয় প্রত্যাবর্তন। জুয়েল রাজা এবং মণীশ মৈথানির হাত ধরে সোজা জয়ের সরণিতে মোহনবাগান। তিন ম্যাচ পর! জুয়েলের গোলের পিছনেও ওডাফার অবদান আছে। নাইজিরিয়ানের বাড়ানো পাস থেকেই নিঁখুত প্লেসিং রাজার।
তবে দিনের নায়ক ওডাফা একা নন। তাতে সমান ভাগ থাকছে সুব্রতরও। ম্যাচ রিডিং তাঁর বরাবরের শক্তি। সেই শক্তিকে কাজে লাগিয়েই হ্যাল-বধ করলেন মোহন-টিডি। হ্যালকে বিঁধলেন তাদের ওষুধেই। দৌড় আর দৌড়। প্রথমে ধনরাজনকে বসিয়ে প্রদীপকে মাঝমাঠে নামিয়ে, নবিকে পিছিয়ে এনে সাইডব্যাক করে দেওয়া। আর দিনের সেরা চাল বিরতির পর ব্যারেটোকে বসিয়ে মণীশকে নামাতেই মাঝমাঠ টগবগিয়ে ছুটতে শুরু করে দিল। ওডাফা আরও চনমনে থাকলে, নাটকীয় জয়ের ব্যবধান আরও বাড়তে পারত।
বেঙ্গালুরুতে গোল সংখ্যায় মর্গ্যানের কাছে সুব্রত যতই পিছিয়ে পড়ুন, অ্যাওয়ে ম্যাচে ০-২ থেকে ৪-২ করা তো আর মুখের কথা নয়!
|
মোহনবাগান: সংগ্রাম, সুরকুমার, আনোয়ার, কিংশুক, ধনরাজন (প্রদীপ),
রাকেশ (শৌভিক), জুয়েল, স্নেহাশিস, নবি, ব্যারেটো (মণীশ), ওডাফা। |