ইডেনে অভিনীত হল বাংলা ক্রিকেটের ‘ডার্টি পিকচার’ বুধবারের।
নবম উইকেটের জুটি ভাঙতে কি না লাগলে ৫৬.৩ ওভার বা ৩৩৯ বল! কেউ ভেবেছিল দশ নম্বর ব্যাটসম্যান অনামী মনোজ চৌহান ক্রিজে থাকবেন চার ঘণ্টা এক মিনিট? ২৩৪-৮-এ ধুঁকতে থাকা একটা টিম পৌঁছে যাবে ৩৯২-এ?
মাঝারিমানের ছয় নম্বর ব্যাট হিসেবে রজত ভাটিয়া অল্পস্বল্প কল্কে পান এ দেশের ক্রিকেটমহলে। সেই ভাটিয়া কি না দুই টেলএন্ডারকে সঙ্গী করে ইনিংস শেষে ১৬৩ নট আউট! কেকেআর-এ খেলে যাওয়া রজত আবার ম্যাচ শেষে সেঞ্চুরিও উৎসর্গ করলেন আমরির অগ্নিকান্ডে প্রাণ হারানো মৃতদের স্মৃতিতে। একা ম্যাচটা টেনেও দিলেন। যথারীতি দুটো ক্যাচ পড়ল, সারাদিনের ছবি বলতে বাউন্ডারি থেকে ফিল্ডারদের বল কুড়িয়ে আনা আর বোলারের রান আপে যাওয়া। গোটা একটা সেশনে বোলিংয়ে কোনও ভেদশক্তি নেই, নেই কোনও অভিনবত্ব। প্রথম দিন চার উইকেট নেওয়া দিন্দার এ দিন নতুন কোনও শিকার নেই, সামি আমেদের বোলিং হিসেব ২৮-৯-৯১-০। নবাগত বীরপ্রতাপ সিংহ এখনও আনকোরা, ক্লাস এইটের ছাত্রকে হঠাৎই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসিয়ে দিলে যেমন হয়। লোটা-কম্বল নিয়ে ক্রিজে পড়ে থাকার যে নীতি ভাটিয়া-চৌহান জুটি নিল, তার জবাব বাংলার সিলেবাসে ছিল না। দিশেহারা লাগল স্বয়ং সৌরভকেও।
পাঁচ পয়েন্ট বা তিন পয়েন্ট এখনও অনেক দূরের গ্রহ, দিনের শেষে ইডেন জুড়ে হা-হুতাশের ক্যাচলাইন---‘কী হতে পারত আর কী হল!’ আফসোসের রেকর্ড বাজছে সর্বত্র। সঙ্গে সমালোচনাও। দিল্লির মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কোন যুক্তিতে ছেঁটে ফেলা হল অভিজ্ঞ রণদেবকে? খেলিয়ে দেওয়া হল এখনও মোহবাগান-ইস্টবেঙ্গল না খেলা বীরপ্রতাপ সিংহকে, যিনি ক্লাব ম্যাচে সফল হলেও এখনও দিল্লি ম্যাচে অভিষেকের পক্ষে সঠিক প্রার্থী নন। শেষ দুটো উইকেট তুলতে যে টিমের প্রায় ৬৫ ওভার লেগে যায়, তাদের আবার বোলিং! |
বাংলার ব্যাটিংও তো চোখের পক্ষে ক্ষতিকারক। গলি ক্রিকেটে যে রান আউট হলে কোচের থাপ্পড় অনিবার্য, সে ভাবে উইকেট উপহার দিয়ে এলেন শ্রীবৎস গোস্বামী। ‘ইয়েস-নো’-র চক্করে। অরিন্দম দাসের ব্যাটে রান নেই, ব্যর্থ ঋতম পোড়েলও। প্রায় পৌনে দু’দিন ফিল্ডিং করে জিরোবেন কী, নাইটওয়াচম্যান সামিকে দিল্লি গিলে নিতে পড়ন্ত বিকেলে টিমকে বাঁচাতে ক্রিজে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কেন যে সৌরভ নাইটওয়াচম্যান পাঠালেন? সেই সৌরভকে নামতে হল আর প্রাক্তন ভারত অধিনায়ককে স্বাগত জানাল দিল্লি অধিনায়ক মিঠুন মানহসের মারমুখী ফিল্ড-তিনটে স্লিপ, গালি, পয়েন্ট, কভার। ৬-৩ ফিল্ড, পেসার প্রদীপ সাঙ্গওয়ানের প্রতিটি বলের পর তাঁর দিকে ছুটে যাওয়া! ছ’বছর আগে এই ইডেনেই মধ্যপ্রদেশ ম্যাচে সেঞ্চুরি করে টিমকে অবনমন থেকে বাঁচিয়েছিলেন সৌরভ। সে বার সঙ্গী হয়েছিলেন লক্ষ্মী। সেই সৌরভ ২০০৫-এর সৌরভ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দুনিয়া আলোকিত করা মহাতারা। ২০১১-র সৌরভের পক্ষে সম্ভব ছ’বছর আগের ইনিংসের ‘অ্যাকশন রিপ্লে’? আজ, বৃহস্পতিবার শুধু সৌরভ নন, বাংলার ভাগ্য মনোজ তিওয়ারিরও হাতে। একটা ‘বিগ হান্ড্রেড’ দিশেহারা টিমকে শুধু নতুন দিশাই দেখাতে পারে না, ভবিষ্যতে টেস্ট দলের জন্যও নিজের নাম নির্বাচকদের খাতায় তোলার দিকে এগোতে পারেন মনোজ। জাতীয় নির্বাচক সুরেন্দ্র ভাবে ইডেনে আছেন যে!
শুধু ফলোঅন বাঁচাতে চাই ১০৯, সৌরভ-মনোজ ছাড়া ব্যাটিং বলতে শুভময় আর লক্ষ্মী। তারপর পাতে না দেওয়ার মতো লম্বা ল্যাজ। অন্তত একটা দীর্ঘ জুটি দরকার, দরকার হার না মানা সংকল্প। সৌরভ বা মনোজ বাঁচিয়ে দিতে পারেন ম্যাচ, কিন্তু তাতে বাংলা ক্রিকেটের প্রকৃত ছবিটা বদল হয় না। নির্বিষ বোলিং, কুৎসিত ফিল্ডিং, অপেশাদার ব্যাটিং।
‘ডার্টি পিকচার’ ছাড়া এ ছবির অন্য কোনও নাম সম্ভব?
|