শিল্পপতিদের সাহায্য নিয়ে রাস্তা সংস্কার |
খড়্গপুর শিল্পতালুকের সাহাচক থেকে টাটা মেটালিক্স পর্যন্ত রাস্তাটি দীর্ঘ দিন ধরেই বেহাল। রাস্তা সংস্কারের দাবিতে বার বার সোচ্চার হয়েছেন স্থানীয় মানুষ থেকে ব্যবসায়ী, এমনকী বিভিন্ন কারখানার কর্তৃপক্ষও। তাতেও কাজ হয়নি। বিতর্ক দেখা দেয় কে কাজ করবে তা নিয়েই। পূর্ত দফতর জানিয়ে দেয়, ওই রাস্তা পঞ্চায়েতের, সংস্কার করতে হবে পঞ্চায়েতকেই। গ্রাম পঞ্চায়েত জানিয়ে দেয়, তাদের পক্ষে ১০-১২ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই রাস্তা সংস্কার সম্ভব নয়। পারলে পঞ্চায়েত সমিতি রাস্তা সংস্কার করুক। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতিও রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগী হয়নি।
ওই রাস্তাটি শিল্পপতি, কারাখানা কর্তৃপক্ষের লোকজনই বেশি ব্যবহার করেন। ওই রাস্তার দিয়েই টাটা মেটালিক্স, কুবোটা, রামস্বরূপের মতো কারখানায় শ্রমিক-কর্মী, অফিসারেরা যাতায়াত করেন। কারখানার কারণেই আশেপাশে গড়ে উঠেছে ছোটবড় দোকান। দোকানিরাও ওই পথ ব্যবহার করেন। যে রাস্তা মূলত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকজনই বেশি ব্যবহার করেন, সেটি সংস্কারে তাঁরাই বা কেন দায়িত্ব নেবেন নাএ প্রশ্নও উঠছিল। প্রাথমিক ভাবে যদিও সেই ‘দায়’ এড়িয়ে চলার প্রবণতাই বেশি দেখা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত শিল্প-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় উদ্যোগী হয় খড়্গপুর মহকুমা প্রশাসন। হিসেব কষে দেখা যায়, ৪-৫ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের জন্য লাগবে লাখ দশেক টাকা। কয়েকটি কারখানার কর্তৃপক্ষ মিলিত ভাবে ওই অর্থ দিলে সহজেই সমস্যার সমাধান হতে পারে। আলোচনায় শিল্প-কর্তৃপক্ষের কাছে সেই প্রস্তাবই দেন খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সুদত্ত চৌধুরী। তাতেই গলতে চলেছে বরফ। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে রাস্তা সংস্কারের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মহকুমাশাসক বলেন, “ওখানে বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে। কারখানাগুলির কর্তৃপক্ষ সম্মিলিত ভাবে ১০ লক্ষ টাকা দিতে রাজি হয়েছেন। ইতিমধ্যেই ৭ লক্ষ টাকা সংগ্রহও হয়েছে। বাকি টাকাও শীঘ্রই পাওয়া যাবে। তার পরেই শুরু হবে রাস্তা সংস্কারের কাজ।”
শিল্পের জন্য সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা জরুরি। সে কারণেই ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে সাহাচকে বিভিন্ন কারখানা গড়ে উঠেছে। সাহাচক থেকে ডান দিকে কিছুটা গেলেই প্রথমে পড়বে রামস্বরূপ লৌহ উদ্যোগের মতো বড় কারখানা। তার পরেই কুবোটা, টাটা মেটালিক্স। বিভিন্ন কারখানার পদস্থ আধিকারিকদের ওই পথ দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। কাঁচামাল থেকে কারখানায় তৈরি পণ্যও ওই পথেই পৌঁছয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। কিন্তু রাস্তা খারাপের কারণে ৪-৫ কিলোমিটার যেতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছিল। রাস্তা জুড়ে খানাখন্দ। বর্ষায় অবস্থা হয় সবচেয়ে করুণ।
স্থানীয় বাসিন্দা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে কারখানা কর্তৃপক্ষসংশ্লিষ্ট সবাই এর আগে রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রশাসনের মুখাপেক্ষী হয়েই ছিল। কিন্তু পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি কাজে হাত দেয়নি। প্রশাসনিক মহল আবার ভিন্ন পথে চিন্তা করছে যে রাস্তা কারখানার কারণেই সব থেকে বেশি ব্যবহৃত, বিভিন্ন সংস্থার ভারী যানবাহন চলার জন্যই রাস্তা খারাপ হয় দ্রুত সেই রাস্তা সংস্কারে কারখানা-কর্তৃপক্ষই বা দায়িত্ব নেবেন না কেন? শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিক যুক্তিতেই জট কাটতে চলেছে। |