|
|
|
|
সরকারি অর্থ অপচয়ের নালিশ |
হুঁশ ফেরায় নতুন করে রং ডিভাইডারে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
আগে ছিল সাদা-কালো। পালাবদলের চমকে মেদিনীপুর শহরে রাস্তার ডিভাইডারের রঙেও কি না লেগে গেল সবুজ!
রাজ্যে ক্ষমতায় এসে নতুন মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় ঘোষণা ছিলকলকাতাকে লন্ডন এবং দিঘাকে গোয়া করবেন তিনি (লন্ডন বা গোয়া-র ‘শ্রেষ্ঠত্ব’ আদৌ সর্বজনস্বীকৃত কি না, রয়েছে সংশয়)। সেই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই জেলার সদর শহরগুলিকে সাজাতেও তোড়জোড় শুরু হয়। মেদিনীপুরও ব্যতিক্রম নয়। ঠিক হয়, শহরের নানা জায়গায় নতুন আলো লাগানো হবে, ডিভাইডারে নতুন রং হবে, বেশ কিছু এলাকায় গাছ লাগানো হবে। সেই মতো কিছু কাজ শুরুও হয়েছে। কিন্তু, শুরুতেই ধাক্কা! সাদা কালোর বদলে ডিভাইডারে সাদা-সবুজ রং দেওয়া হচ্ছিল। কাজ যখন শেষের মুখে, তখনই হুঁশ ফেরে প্রশাসনের। নানা মহলের চাপে পূর্ত-কর্তারা বুঝতে পারেন, ডিডাইডারে এমন রং দেওয়া যায় না। হয় সাদা-কালোই রং করতে হবে, না হলে হলুদ-কালো। অবশেষে আগের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেছেন কর্তারা। বুধবার থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড়ের ডিভাইডারগুলিতে সাদা-সবুজের উপরে ফের সাদা-কালো রং দেওয়া শুরু হয়েছে। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
পূর্ত দফতরের অবশ্য দাবি, এটা নাকি সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটার ব্যাপার নয়। ‘সামান্য ভুল হয়েছে’! পূর্ত দফতরের মেদিনীপুর ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার-১ শ্যামল প্রতিহারের কথায়, “শহরের মোড়ের ডিভাইডারগুলিতে সাদা-কালো রং-ই করার কথা। ভুল করে সাদা-সবুজ রং করা হয়েছে।” কিন্তু ‘ভুল’ই হোক বা অন্য কিছুদু’দফা রঙের জন্য করদাতা নাগরিকের বাড়তি টাকা অপচয় কেনএর সদুত্তর মিলছে না।
মেদিনীপুর শহরের সৌন্দর্যায়নের জন্য ইতিমধ্যেই একাধিক বার বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের পাশাপাশি এ কাজে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছে মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ, মেদিনীপুর পুরসভা। মেদিনীপুর শহর জুড়ে নানা সমস্যা রয়েছে। প্রায়ই যেখানে সেখানে আবর্জনার পাহাড় জমা হয়। বহু জায়গায় রাস্তার হাল খুবই খারাপ। এই সব সমস্যা দূর করেই শহরকে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কাঁসাই নদীর উপর সেতুতে আলো লাগানো হবে। মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভিতরে থাকা পুকুরটিকে সাজানো হবে। জেলা পরিষদের উল্টোদিকের ডেভিস ট্যাঙ্ক সংস্কার করে সাজানো হবে, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ করা হবে। মেদিনীপুর শহরেও রাস্তা সম্প্রসারণ, কয়েকটি রাস্তা ওয়ান ওয়ে করে ডিভাইডার দেওয়া, গাছ লাগানো, পার্ক সংস্কার, রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো দেওয়া, সুলভ শৌচাগার তৈরির প্রস্তাব রয়েছে। মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতির কথায়, “শহর সাজাতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ধাপে ধাপে কাজ এগোবে।”
প্রায় এক মাস ধরেই শহরের পথের ডিভাইডার, শহিদ-মূর্তির চারপাশ, রিং রোডের রেলিংয়ে সাদা-সবুজ রং করা হচ্ছে। এর আগে শহরের ডিভাইডারগুলিতে সাদা-কালো কিংবা হলুদ-কালো রং ছিল। এটাই নিয়ম। কিন্তু, রাজ্যে পালাবদলের পর সাদা-সবুজ রং করা শুরু হয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, এ জন্য ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা মেদিনীপুর বিকাশ পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম আহমেদের বক্তব্য, “পূর্ত দফতরের ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসের নির্দেশেই রয়েছে ডিভাইডারে সাদা-কালো অথবা হলুদ-কালো রং দেওয়া যেতে পারে। অথচ, সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে শহরে পছন্দ মতো রং লাগানো হচ্ছে। কেউই এ ভাবে আইন অমান্য করতে পারে না।”
একধাপ এগিয়ে শহরের এক বাসিন্দা বলেন, “সবুজ রংয়ের সঙ্গে শাসকদলের যোগ থাকতেই পারে। কিন্তু, আইন তো সবার জন্যই এক।” এমনিতেই এখন সরকারের কোষাগারে টানাটানি। তার উপর এ ভাবে দু’বার রং করে সরকারি অর্থ অপচয়ে ক্ষুব্ধ শহরের বহু মানুষ। পূর্ত দফতরের অবশ্য দাবি, এ ক্ষেত্রে অর্থ অপচয় হচ্ছে না। ভুল শুধরে ঠিকাদার সংস্থাই গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের ডিভাইডারগুলিতে সাদা-কালো রং করে দেবে। দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “তবে কেন এমন ভুল হল, খতিয়ে দেখছি।” |
|
|
|
|
|