বিপন্মুক্ত নয় ধূলাগড়ির পাইকারি সব্জিবাজার
ছাড়পত্র নেই, মানছেন ব্যবসায়ীরাই
র দুপুর। গিজগিজ করছেন মানুষ। প্রত্যেকেই হাওড়ার সাঁকরাইলের ধূলাগড়িতে পাইকারি সব্জি বাজারে এসেছেন জীবিকার তাগিদে। প্রত্যেকেই ব্যবসায়ী। কিন্তু তাঁরা তাঁদের ব্যবসা কতটা নিরাপদ! ধূলাগড়ি সব্জি বাজার এলাকা ঘুরে এই প্রশ্নই উঠে এল।
বছর তিন হল পাইকারি সব্জি বাজারটি গড়ে উঠেছে। অল্প দিনে তা জমেও উঠেছে। বাজারটিকে বলা হয় ‘দ্বিতীয় কোলে মার্কেট।’ বছর তিন আগে ‘কোলে মার্কেটের’-ই কয়েকজন সব্জি ব্যবসায়ী ধূলাগড়িতে বেসরকারি উদ্যোগে যে লজিস্টিক হাবটি তৈরি হয়েছে সেই প্রকল্পের ভিতরেই প্রায় চার বিঘা জমি কিনে পাইকারি সব্জি বাজারটি গড়ে তোলেন।
প্রথমে ছিলেন ৩৭ জন ব্যবসায়ী। পরবর্তীকালে সেই সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। বিভিন্ন রাজ্য থেকে সব্জি ব্যবসায়ীরা এসে তাঁদের রাজ্যের উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য বিক্রি করেন। এ ছাড়াও এই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকেও কৃষিজ পণ্য চাষিদের কাছ থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। সব মিলিয়ে দৈনিক কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনা।
নিজস্ব চিত্র।
বিকিকিনি শুরু হয় দুপুর ২টো থেকে। চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীদের জন্য যেমন তৈরি হয়েছে কংক্রিটের স্টল। তেমনই আবার ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কংক্রিটের কার্নিস থেকে প্লাস্টিকের ত্রিপল ঝুলিয়ে তার নীচে তাঁদের বসার জায়গা করা হয়েছে। বাজারে গিজগিজ করে ভিড়। গোটা এলাকা ঘিরে থাকে ছোট গাড়ি, ইঞ্জিন ভ্যান এবং ভ্যান রিকশা। এতে করেই সব্জি আনা-নেওয়ার কাজ চলে। কাছেপিঠে গড়ে উঠেছে প্রচুর পাইস হোটেল। ঘিঞ্জি সেই সব হোটেলের সামনে খোলা জায়গায় চলে রান্না-বান্না।
বাজারের ভিতরে দেখা গেল, যথেচ্ছ ঝুলছে ইলেট্রিকের তার। দেওয়ালে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে মিটার, সুইচ-বক্স। দেওয়ালে কোনও ‘ওয়্যারিং’-এর বালাই নেই। শর্ট শার্কিট হয়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে প্রতি পদে। সে কথা জানালেন ব্যবসায়ীরাও। সুরেশ যাদব নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, “এখানে বাজার যে ভাবে দিনের পর দিন বাড়ছে, তাতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা-সহ আরও অনেক সুবিধা দেওয়া দরকার। বিশেষ করে আগুন লেগে গেলে কী ভাবে তা নেভানো হবে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া খুব জরুরি।” রাজু সোনকর, প্রকাশ সাউ, বিশ্বজিৎ জানার মতো ব্যবসায়ীরা বললেন, “দমকল ও বিদ্যুৎ দফতরের পক্ষ থেকে এই বাজারে নিয়মিত পরিদর্শন করা প্রয়োজন। তারাই বলে দেবে এই বাজারে আগুন যাতে না লাগে, সে জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”
ধূলাগড়ি সব্জি বাজারটি অবস্থিত মুম্বই রোডের ধারেই। এখানে উলুবেড়িয়া থেকে দমকলের ইঞ্জিন আসতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এ ছাড়াও, আলমপুরের কাছে জঙ্গলপুরে একটি বেসরকারি শিল্প তালুকেও দমকল কেন্দ্র তৈরি করছে সরকার। কিন্তু সব্জি ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, জলের প্রয়োজন হলে দমকল সমস্যায় পড়বে।
জমি কিনে নিয়ে যাঁরা সব্জি বাজারটি তৈরি করেছেন সেই সব ব্যবসায়ীরা গড়েছেন ‘ধূলাগড়ি সব্জি ব্যবসায়ী সমিতি’। সমিতির সম্পাদক বাবলু পালের কথায়, “আমরা যে সংস্থার কাছ থেকে জমি কিনেছিলাম, কথা ছিল, ওই সংস্থা একটি জলাশয় তৈরি করে দেবে। প্রয়োজনে দমকল সেখান থেকে জল নিতে পারবে। কিন্তু সব্জি বাজারের কাছে-পিঠে কোনও জলাশয় তৈরি হয়নি। আমাদের হাতেও জমি নেই। ফলে আমাদের পক্ষেও জলাশয় করা সম্ভব নয়। দমকলের পরামর্শ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের সব্জি ব্যবসায়ীদের কারও কাছে দমকলের ছাড়পত্র নেই।”
যে সংস্থার পক্ষ থেকে সব্জি ব্যবসায়ীরা জমি নিয়েছেন তাদের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, অগ্নি নির্বাপণের সব ব্যবস্থা প্রকল্প এলাকায় রাখা হয়েছে। সংস্থার পদস্থ কর্তা মানিক রায় বলেন, “কে বলল জলাশয় নেই? আমাদের পুরো প্রকল্পটির আয়তন অনেকটাই বড়। এখানে রয়েছে লজিস্টিক হাব। বহু ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের ভিতরে গুদাম ও কার্যালয় ভাড়া নিয়েছে। সব্জি বাজারের কাছেই একটি জলাশয় রয়েছে। প্রয়োজনে সেখান থেকে জল নেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, প্রচুর পাম্প বসানো হয়েছে। এমনকী, এখানে যাতে একটি দমকলকেন্দ্র করা যায় তার জন্য আমরা বাড়ি তৈরি করে রেখেছি। দমকল বিভাগ চাইলে এখানে কেন্দ্র খুলতে পারে।” দমকলের পশ্চিমাঞ্চলের আঞ্চলিক অধিকর্তা বিভাস গুহ অবশ্য বলেন, “ওই এলাকায় আমরা আগে যাইনি। এ বারে এলাকাটি পরিদর্শন করে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা কী ভাবে করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। তার পরেই পরবর্তী করণীয় স্থির হবে।” ওয়্যারিং ছাড়াই টানা হয়েছে তার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.