সম্পাদকীয় ২...
মোহভঙ্গ
পাকিস্তানের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের আস্থা ও ভরসা যে উত্তরোত্তর হ্রাস পাইতেছে, তাহার সর্বশেষ নমুনা পাকিস্তানকে প্রতিশ্রুত ৭০ কোটি ডলার অর্থসাহায্য আপাতত স্থগিত রাখার মার্কিন সিদ্ধান্ত। পাকিস্তানে ঘরোয়া ভাবে তৈরি বোমায় আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন ও বহুজাতিক বাহিনীর উপর আক্রমণ না কমিলে এই অর্থসাহায্য বন্ধ থাকিবে। উল্লেখ্য, তালিবান যোদ্ধাদের ব্যবহৃত এই বোমার মশলা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট পাক সীমান্ত অতিক্রম করিয়াই চোরা-পথে আফগান তালিবানদের হস্তগত হয়। পৌনঃপুনিক অনুরোধেও পাকিস্তান এই চোরাচালান বন্ধে উদ্যোগী হয় নাই। তাহাতেই ক্ষুব্ধ মার্কিন সেনেটের এই সিদ্ধান্ত। এই অর্থসাহায্য পাকিস্তানকে কৃত মোট মার্কিন সাহায্যের (২০০১ সাল হইতে কুড়ি হাজার কোটি ডলার) তুলনায় অকিঞ্চিৎকর। পাকিস্তানের সক্রিয় প্রশ্রয়ে তালিবান গেরিলারা ক্রমশ একটি প্রান্তিক শক্তি হইতে ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষে পরিণত। আল-কায়দার প্রধান ওসামা বিন লাদেনের মতো সন্ত্রাসী পাকিস্তানে সযত্নে লালিত হইয়াছেন। আই এস আইয়ের সাহায্যপুষ্ট হাক্কানি গোষ্ঠী আফগানিস্তানে একের পর এক মার্কিন সেনা-দফতরে হামলা চালাইয়াছে। পাকিস্তান যে সন্ত্রাস দমনে কোনও কার্যকর ব্যবস্থাই লইতেছে না, উপরন্তু সেই অজুহাতে লওয়া বিপুল মার্কিন অনুদান মার্কিন সেনাদের নিধনেই ব্যবহার করিতেছে, ইহা বহু কালই মার্কিন গোয়েন্দাদের জানা ছিল। তথাপি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই দুর্বল হইবে, এই অজুহাতে ইসলামাবাদকে মার্কিন অর্থ ও অস্ত্রসাহায্য অব্যাহত রাখা হয়। মার্কিন জনমত অবশ্য পাকিস্তানের এই দুমুখো নীতির প্রতি দ্রুত বিরূপ হইতে থাকে। অবশেষে মার্কিন সেনেট সেই সাহায্য অংশত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত লইয়াছে। ইহাতেই পাল্টা হুমকি দেওয়া শুরু। পাকিস্তানকে পথে বসাইলে আমেরিকারই ক্ষতি, ইত্যাদি সতর্কবাণী ইসলামাবাদ হইতে উচ্চারিত হইতেছে।
অথচ ঘটনা হইল, পাকিস্তান সে ভাবে সন্ত্রাস দমনে কখনও গুরুত্ব দেয় নাই। নিজে জেহাদি সন্ত্রাসের শিকার হইয়াও পূর্ব ও পশ্চিমের দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও আফগানিস্তানে জঙ্গি পাঠাইয়া ওই দুই দেশকে উদ্ব্যস্ত করিয়াছে। পাক আশ্রিত জঙ্গিরা ভারতে একের পর এক নাশকতায় জড়িত থাকিলেও তাহাদের নায়কদের বিচার করে নাই, উৎসাহিত করিয়াছে। আফগানিস্তানেও একই ভাবে মার্কিন ও বহুজাতিক বাহিনীর সহিত সংঘর্ষে লিপ্ত জেহাদিদের নিজ ভূখণ্ডে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে লালন করিয়াছে। বিন লাদেনকে লালন করার ষড়যন্ত্রটি মার্কিন হামলায় ফাঁস না হইলে আরও কত কাল চলিত, কে জানে। সন্ত্রাস-বিরোধী সৈনিক হইতে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর রূপে পরিচিত হওয়ার এই লজ্জা ঢাকিতে ইসলামাবাদের শাসকরা সেনানায়কদের সহিত মিলিয়া মার্কিন-বিরোধী উগ্র পাক জাতীয়তাবাদ উস্কাইয়া তুলিয়াছেন। সহসা তাঁহাদের পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার কথা মনে পড়িয়াছে। নিজেরা প্রতিবেশীদের সার্বভৌমত্ব বিনাশের অন্তর্ঘাতে শামিল হওয়ার সময় তাঁহাদের এ কথা খেয়াল হয় নাই। ঠিক যেমন পাক জেহাদি শিবির হইতে ভারত ও আফগানিস্তানে জঙ্গি রফতানির সময় তাঁহারা খেয়াল করেন না, নিজেরা কাচের ঘরে বাস করিয়া অপরকে লক্ষ করিয়া ঢিল ছোড়া মূঢ়তা। পাক রাষ্ট্রের চরিত্র সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিলম্বিত বোধোদয় হয়তো এখনই ইসলামাবাদকে যাবতীয় মার্কিন দাক্ষিণ্য হইতে বঞ্চিত করিবে না। ইসলামাবাদের সহিত ওয়াশিংটনের দীর্ঘ রণনৈতিক জোট অত সহজে ঘুচিবার নয়। বিশেষত আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চিন যখন পাকিস্তানকে কোল দিয়াছে। তবে মোহভঙ্গ শুরু হইয়াছে। দিল্লির পক্ষে ইহাই সুসমাচার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.