সম্পাদকীয় ১...
ছায়া ঘনাইতেছে
ন্দার ছায়া। অর্থনীতিবিদরা যাহাকে মন্দা বলেন, ভারতে এখনও তাহা ঘটে নাই। সাধারণ ভাবে মন্দার যে সংজ্ঞা তাঁহারা স্বীকার করেন, তাহার প্রতিপাদ্য: পর পর দুইটি ত্রৈমাসিক সময়পর্বে (যথা, এপ্রিল হইতে জুন এবং জুলাই হইতে সেপ্টেম্বর) জাতীয় উৎপাদন তথা আয় কমিয়া গেলে অর্থনীতি মন্দাক্রান্ত বলিয়া সাব্যস্ত হইবে। ভারতের জাতীয় আয় এখনও ঊর্ধ্বগামী, অদূর ভবিষ্যতে কমিবার কোনও আশঙ্কা নাই। কিন্তু অর্থনীতির যে দীপ্তি কয়েক মাস আগেও (আপাত)দৃষ্টিগোচর ছিল, আজ তাহার উদ্দেশে বলিতে সাধ হয়: তুমি আজ কত দূরে। ২০১১-১২ আর্থিক বর্ষের সূচনায় কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক আশা করিয়াছিলেন, এই বছরে জাতীয় আয় বাড়িবে ৯ শতাংশ। তাহার পর ঘরে ও বাহিরে অনেক কুবাতাস বহিয়া গিয়াছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রকের অন্তর্বর্তী পর্যালোচনায় অনুমান করা হইয়াছে, আয়বৃদ্ধির হারটি ৭.৫ শতাংশের কাছাকাছি থাকিবে। যদি তাহা হয়, এমনকী যদি বৃদ্ধি-হার আরও কিছুটা নামে, তাহা হইলেও বিশ্ব অর্থনীতির সামগ্রিক অধঃপাতের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের অগ্রগতি উজ্জ্বল বলিয়াই গণ্য হইবে বটে, কিন্তু সেই ঔজ্জ্বল্য আপেক্ষিকমাত্র, যাহাকে বলে কানার মধ্যে ঝাপসা, তাহাতে আশ্বাস আছে, স্বস্তি নাই। এবং, অন্তর্বর্তী সমীক্ষার অব্যবহিত পরেই আসিয়াছে আর এক দুঃসংবাদ, অপ্রত্যাশিত বলিয়াই যাহা সমধিক উদ্বেগজনক। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ভারতে শিল্প-উৎপাদনের সূচক গত বছরের তুলনায় ৫.১ শতাংশ কম। উৎপাদন-বৃদ্ধির গতিভঙ্গ চিন্তার কারণ, উৎপাদন সরাসরি কমিয়া যাওয়া দুশ্চিন্তার বিষয়। ভারতের জাতীয় আয়ে শিল্পের অবদান বেশি নয়, মোটামুটি সিকিভাগ। বাকিটা আসে কৃষি ও পরিষেবা হইতে। সেই দুই ক্ষেত্রেই বৃদ্ধি ঘটিতেছে ভালই। সুতরাং শিল্প-উৎপাদনের অধোগতি আগামী মাসগুলিতে অব্যাহত থাকিলেও জাতীয় আয় কমিবে না, বড় জোর তাহার বৃদ্ধি-হার আরও নামিবে। কিন্তু শিল্প-চিত্রটি অন্য কারণে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, নিছক জাতীয় আয়ের অনুপাত কষিয়া সেই তাৎপর্য সম্যক অনুধাবন করা সম্ভব নয়।
শিল্প-উৎপাদনের সামগ্রিক অবনতির একটি কারণ ‘মূলধনী পণ্য’ অর্থাৎ প্রধানত যন্ত্রপাতির বাজারে প্রবল ভাটার টান। অক্টোবরের হিসাবে মূলধনী পণ্যের বিক্রয় কমিয়াছে প্রায় ২৫ শতাংশ। শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়িলে যন্ত্রপাতির বিক্রয় বাড়ে। সুতরাং, শিল্প-সূচক সংকেত দিতেছে, বিনিয়োগ নিম্নগামী। অন্য নানা সংকেতও বিনিয়োগ সম্পর্কে একই দুঃসংবাদ শুনাইতেছে। যথা শেয়ার বাজারের দ্রুত পতনশীল মূল্য-সূচক। কিংবা বিভিন্ন বৃহৎ শিল্পসংস্থার কর্ণধারদের উদ্বিগ্ন বিবৃতি। ইহাই এখন ভারতীয় অর্থনীতির প্রধান বিপদবার্তা। ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইনস-এর একটি কালজয়ী উক্তি ছিল: বিনিয়োগ নির্ভর করে বিশ্বাসের উপর। এই বিশ্বাসের অনেক কারণ থাকে, কিন্তু কোনও কারণসমষ্টি দিয়াই বিনিয়োগের গতিপ্রকৃতি সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করা যায় না। বিনিয়োগ করিলে ভাল ফল মিলিবে এই বিশ্বাস বা আস্থা যদি বিনিয়োগকারীর থাকে, তবে তিনি বিনিয়োগ করিবেন, নচেৎ নয়। ভারতীয় অর্থনীতি সম্পর্কে বিনিয়োগকারীরা উত্তরোত্তর সেই আস্থা হারাইতেছেন এমন দুর্লক্ষণ উত্তরোত্তর স্পষ্ট হইতেছে। মূলধনী পণ্যের বিক্রয়ে বিপুল হ্রাস সেই দুর্লক্ষণের ধারায় নবতম সংযোজন। যদি এই ধারা স্থায়ী হয়, অর্থাৎ অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা বা অনিশ্চয়তার বোধ বাড়িতে থাকে, তাহার পরিণাম কেবল শিল্পে সীমিত থাকিবে না, পরিষেবার উপরেও পড়িতে বাধ্য। মন্দার ছায়াটি তখন আর ছায়ামাত্র থাকিবে না, কায়া ধারণ করিবে এমন আশঙ্কা অতি প্রবল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.