|
|
|
|
জখম ৪ জন |
রাতে গ্যাংটকের রাস্তায় খাদে পড়ল গাড়ি, মৃত ৭ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
কয়েক দিন ধরেই বেশ কুয়াশা রয়েছে সিকিমে। রাতে পাহাড়ের পথে ইয়ুমথাং থেকে গ্যাংটক ফিরতে গিয়ে গাড়ি খাদে পড়ে মৃত্যু হল সাত জনের। চালক ছাড়া সকলেই বাঙালি। জখম অবস্থায় সারা রাত পড়ে থেকেও বেঁচে গিয়েছেন চার জন।
মঙ্গলবার রাতে উত্তর সিকিমের মঙ্গন থানার দিকচু-র কাছে পাঁচমাইল এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। বুধবার সকালে খাদে গাড়ি পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ উদ্ধারকার্যে নামে। কিন্তু সিকিম পুলিশ ও কলকাতায় মহাকরণ থেকে দেওয়া তালিকায় ফারাক থাকায় মৃত ও আহতদের নাম নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে।
সিকিম পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন বোধিসত্ত্ব ধর (৩৪), শঙ্কর দাস (৩১), রাজীব চক্রবর্তী (৩৪), মামণি সিংহ (২৬), মিনা সরকার (৪৩), যুধিষ্ঠির শতপথি (২৪) এবং গাড়ির চালক তাসি শেরিং (২৪)। গুরুতর আহত অসিত সরকার, শৌভিক সরকার, সোহম সরকার এবং সঞ্জীবকুমার সাউ মঙ্গন হাসপাতালে ভর্তি। কিন্তু মহাকরণের দেওয়া মৃতের তালিকায় মামণি সিংহের বদলে জনৈক সঞ্জয় সরকারের নাম রয়েছে, আহতের তালিকায় সঞ্জীব সাউয়ের নাম নেই। মামণির বাড়ি পূর্ব বড়িশার নেতাজিপল্লিতে। রাতে তাঁর স্বামী প্রদীপ সিংহ বলেন, “১০ ডিসেম্বর বন্ধুদের সঙ্গে মামণি সিকিম ঘুরতে গিয়েছিল। আজ সারা দিন চেষ্টা করেও ওর মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারিনি। কিন্তু দুর্ঘটনায় ও মারা গিয়েছে, এমন কিছুও আমরা শুনিনি।” |
|
দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে রয়েছেন রাজীব চক্রবর্তী (বাঁ দিকে), শঙ্কর দাস (মাঝ খানে) ও মিনা সরকার (ডান দিকে)। |
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে পর্যটকদের একটি দল ছোট গাড়িতে ইয়ুমথাং থেকে ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মঙ্গন চেক পোস্ট পেরোতে দেখা যায় গাড়িটিকে। সকালে পাঁচমাইল এলাকার বাসিন্দারা গাড়িটিকে খাদে পড়ে থাকতে দেখেন। দুপুর নাগাদ সবাইকে তোলা হয়। উত্তর সিকিমের জেলাশাসক টিএন কার্জি বলেন, “রাস্তা থেকে পাঁচশো মিটার নীচে গাড়িটি পড়ে ছিল।কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, দেখা হচ্ছে।”
বস্তুত, গাড়িটি রাতে কেন ওই পথে ফিরছিল সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা সাধারণত দিনের আলো থাকতে থাকতেই ইয়ুমথাং থেকে পর্যটকদের গাড়ি গ্যাংটকে ফিরে আসে। সে দিনও ফিরেছে। ‘ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সম্রাট সান্যালের কথায়, “প্রয়োজন ছাড়া শীতের রাতে কুয়াশাচ্ছন্ন সিকিমে গাড়ি নিয়ে কেউ সাধারণত পথে নামেন না। কী হয়েছিল, আমরাও খোঁজ নিচ্ছি।”
খাদে পড়েও বেঁচে গিয়েছেন সোনারপুরের পাওয়ারহাউস এলাকার অসিত সরকার এবং তাঁর দুই কিশোর ছেলে সৌভিক ও সোহম। গত ১০ ডিসেম্বর সপরিবার বেড়াতে যান স্থানীয় কানখুলি হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষক অসিতবাবু। তাঁর দাদা তপন সরকার জানান, ভোর ৫টা নাগাদ তাঁর মোবাইলে ফোন করে অসিতবাবু খবর দেন, তাঁদের গাড়ি খাদে পড়ে গিয়েছে। ছেলেদের দেখতে পাচ্ছেন না, তবে স্ত্রী মিনা পড়ে আছেন একটু দূরে। তবে তখনও তিনি বোঝেননি যে স্ত্রী মারা গিয়েছেন। হাওড়ার শিবপুরে চৌধুরীপাড়া লেনের শঙ্কর দাস ও ভট্টাচার্যপাড়ার রাজীব চক্রবর্তী, জগাছার সাঁতরাগাছির বোধিসত্ব ধর তিন বন্ধু বেড়াতে গিয়েছিলেন ৯ ডিসেম্বর। শঙ্করের দাদা সুভাষ দাস বলেন, “সকালে দুর্ঘটনার খবর শুনে ভাইয়ের মোবাইলে ফোন করে দেখি, বন্ধ। মনটা ‘কু’ ডাকছিল। বিকেলে টিভি-তে ভাইয়ের নাম বলে।” মেট্রো রেলে চাকরি করতেন রাজীব। তাঁর বন্ধু বরুণ দে বলেন, “মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ রাজীব ফোনে বলে, একটা দুর্ঘটনার মামলায় পুলিশ ওদের গাড়ির চালককে আটক করেছে। পরে অন্য গাড়িতে ওদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। তার পরে কী হল, তা জানা দরকার।” |
|
|
|
|
|