|
|
|
|
কালো টাকা নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব খারিজ |
বিজেপি-র আক্রমণ নিষ্ফল করলেন প্রণব |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
প্রায় চল্লিশ দিন ধরে রথযাত্রা করে কালো টাকা উদ্ধারের দাবি উচ্চগ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। আজ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কৌশলে কংগ্রেস সেই পালের হাওয়াটা অনেকটাই কেড়ে নিতে সমর্থ হল। লোকসভায় প্রায় ছ’ঘণ্টা আলোচনার পর ধ্বনি ভোটেই খারিজ হল আডবাণীর আনা মুলতুবি প্রস্তাব।
রথযাত্রা শেষের এক দিন পরেই শুরু হয়েছিল সংসদের অধিবেশন। কালো টাকা উদ্ধারের দাবির বিষয়ে সরকারকে কোণঠাসা করতে বামেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুলতুবি প্রস্তাবে অনড় থাকে বিজেপি। সংসদ সচল রাখতে সরকার সেই প্রস্তাব মেনে নেয়। আজ তা নিয়ে আলোচনা শুরু হলে আডবাণী কালো টাকা উদ্ধারে সরকারের ‘ব্যর্থতা’কে তুলে ধরে মূলত তিনটি দাবি জানান। এক, বিদেশের ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কালো টাকার পরিমাণ জানাক সরকার। দুই, কালো টাকা যাঁরা রেখেছেন, তাঁদের নাম অবিলম্বে সরকার প্রকাশ্যে আনুক। তাঁদের শাস্তি দিক। তিন, শ্বেতপত্র প্রকাশ করে সরকার জানাক, এ যাবৎ কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে। রথযাত্রায় এই বিষয়গুলিকে পুঁজি করেই জনমত গঠন করেছিলেন তিনি। |
|
লোকসভায় লালকৃষ্ণ আডবাণী ও প্রণব মুখোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: পিটিআই |
বিতর্ক শেষে জবাব দিতে গিয়ে কালো টাকা উদ্ধারে সরকার কী পদক্ষেপ করেছে, তার সবিস্তার বিবরণ দেন প্রণববাবু। শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে বলে জানান। কিন্তু একই সঙ্গে জানান, আজ পর্যন্ত কালো টাকা পরিমাপের নিখুঁত মাপকাঠি কারও কাছে নেই। আডবাণীর কাছেও নয়। আর আয়কর আইনে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। বিজেপিও সরকারে থাকতে এই আইন পরিবর্তন করেনি। অর্থমন্ত্রী জানান, সরকারের লক্ষ্য, বিদেশি ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কালো টাকা চিহ্নিত করে তা দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা। এবং কর আদায় করা। কিন্তু এ জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে যে সব চুক্তি হয়েছে, সেগুলো অনুসারে নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে সেই দেশগুলি ভবিষ্যতে আর কোনও সহযোগিতা করবে না। তবে তিনি বলে দেন, “বিদেশি ব্যাঙ্কে টাকা গচ্ছিতকারীদের যে তালিকা পাওয়া গিয়েছে, তাতে কোনও সাংসদের নাম নেই। কংগ্রেসও কালো টাকা গচ্ছিতকারী কাউকে সমর্থন করে না।”
সরকারকে এই বিষয়ে কোণঠাসা করার সব রকম কৌশল নিয়েছিল বিজেপি। পদ ফিরে পাওয়ার দরবার করতে দিল্লিতে এসে কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পাও তাৎপর্যপূর্ণভাবে সংসদে উপস্থিত ছিলেন। কংগ্রেসের উপর চাপ তৈরি করতে আডবাণীর নেতৃত্বে বিজেপির সব সাংসদ স্পিকারের কাছে হলফনামা দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, বিদেশের ব্যাঙ্কে তাঁদের টাকা নেই। সেই চাপ প্রণববাবু কখনও কাটিয়েছেন যুক্তি-তথ্য দিয়ে, কখনও পাল্টা কটাক্ষ করে। তাঁর প্রশ্ন, “আডবাণীর জনচেতনা যাত্রায় কী লাভ হয়েছে? যাঁদের কালো টাকা রয়েছে, তাঁরা কি ওই যাত্রার ফলে তা ঘোষণা করেছেন?”
ইউপিএর দ্বিতীয় অধ্যায়ে এই প্রথম মুলতুবি প্রস্তাব এলেও প্রণববাবু অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। কারণ, সংখ্যা সরকারের পক্ষে ছিল। দল-মত নির্বিশেষে সকলেই কালো টাকা উদ্ধারের পক্ষে সওয়াল করলেও একমাত্র মুলায়ম ছাড়া আর কেউ সভাকক্ষ ত্যাগ করেননি। গত কাল ইউপিএ-র প্রধান শরিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে প্রণববাবু তাঁর সমর্থনের আশ্বাস আদায় করেন। আজ তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও শুধু কংগ্রেস সরকারকে দায়ী করেননি। ছ’ঘন্টা তুমুল চাপান-উতোরের পর হাসির রোল ওঠে, যখন ধ্বনি ভোটের সময় কংগ্রেস সাংসদরা ভুল করে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। তবে পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় ধ্বনি ভোটে প্রস্তাব খারিজ হওয়ার পরেও কেউ আর ভোটাভুটির দাবি করেননি। |
|
|
|
|
|