যে কাজটা অনেক দিন আগেই করা উচিত ছিল, অবশেষে তা করছে কলকাতা পুরসভা। তবে এতগুলি অসহায় প্রাণের বিনিময়ে।
আমরি-র অগ্নিকাণ্ডের পরে শহরের আবাসিক বাড়ি, বিভিন্ন ভবন, বাজার, স্কুল, সিনেমা হল, শপিং মল, হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলির ক্ষেত্রে অগ্নিবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে এ বার বরো পর্যায়ে কমিটি গড়ল পুরসভা। কমিটিতে পুরসভার কাউন্সিলর, অফিসার ছাড়াও থাকবেন দমকল এবং সিইএসসি-র প্রতিনিধিরা। বুধবার পুরভবনে এক বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত হয়।
হঠাৎ এমন কমিটি গড়া হচ্ছে কেন? নন্দরাম মার্কেট ও স্টিফেন কোর্টের ঘটনার পরেই দমকলের সঙ্গে তাদের সমন্বয়ের অভাবের বিষয়টি নজরে আসে পুরসভার। আমরি-র দুর্ঘটনার পরে আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, ফায়ার লাইসেন্স বা ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া এবং তার নবীকরণের ক্ষেত্রে পুরসভা ও দমকলের কোনও সমন্বয়ই নেই। নির্দিষ্ট নকশার ভিত্তিতে দমকল কোনও বাড়িকে অনুমোদন দেওয়ার পরে পুরসভাকে দিয়ে নকশার পরিবর্তন বা সম্প্রসারণ করানো হয়েছে কি না, তা দমকল এত দিন জানত না। নিজেদের নকশা মেনে আগুন নেভাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ত তারা। অনেক সময়ে দেখা যেত, পুরসভা ও দমকলকে ভিন্ন নকশা দিয়ে অনুমতি আনা হয়েছে। তার জন্য আগুন নেভাতে গিয়ে বারবার সমস্যা হত বলে দমকলের অভিযোগ। আমরি-কাণ্ডের পরে এই সমন্বয়ের অভাব মেটাতে উদ্যোগী মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তার ভিত্তিতেই প্রতিটি বরোয় পুরসভা, দমকল এবং সিইএসসি-র প্রতিনিধিদের নিয়ে এই কমিটি গড়ার বিষয়টি ঠিক হয় এ দিন। |
বৈধতার হাল |
|
মোট |
অনুমতিপ্রাপ্ত |
অনুমতিহীন |
হাসপাতাল |
৩৭ |
২১ |
১৬ |
নার্সিংহোম |
২৮৯ |
৭১ |
২১৮ |
বিপজ্জনক ভবন |
৪২ |
২২ |
২০ |
অনুষ্ঠানবাড়ি |
জানা নেই |
৫ |
জানা নেই |
সূত্র: কলকাতা পুরসভা |
|
বৈঠকের পরে মেয়র বলেন, “শহরের হাসপাতাল, নার্সিংহোম এবং বিভিন্ন বাড়িতে অগ্নিবিধি যথাযথ ভাবে মানা হচ্ছে কি না, তা দেখতেই বরো পর্যায়ে কমিটি তৈরির এই সিদ্ধান্ত।” স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ডের পরেও দমকল, সিইএসসি এবং পুরসভার প্রতিনিধিদের একটি কমিটি তৈরি হয়েছিল। ওই কমিটি শহরের বিভিন্ন বাজার এবং বিপজ্জনক বাড়ি ঘুরে নানা সুপারিশ জমা দিয়েছিল। সেগুলি কার্যকর হওয়ার বিষয়টি কি নিশ্চিত করতে পেরেছে প্রশাসন?
দমকলবাহিনীর এডিজি দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, “স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ডের পরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি সরকারি কমিটির নজরদারিতে অনেক ক্ষেত্রেই কাজ হয়েছে। বরো স্তরের অভিযানে আরও ফল পাওয়া যাবে।” মেয়র অবশ্য বলেন, “বাড়ি বাড়ি ঢুকে পুলিশ বা পুরসভার লোকেরা অভিযান চালালে সেটা ভাল দেখায় না। আমরা আবেদন করছি, শহরবাসী নিজেরাই এগিয়ে আসুন সকলের নিরাপত্তার জন্য।”
পুর-কর্তৃপক্ষের হিসেবে শহরে হাসপাতাল, নার্সিংহোম এবং বিপজ্জনক ভবন আছে মোট ৩৬৮টি। এর মধ্যে বৈধ অনুমতি রয়েছে মাত্র ১১৪টি-র। শহরের অধিকাংশ অনুষ্ঠানবাড়ি পুর-আইন ছাড়াই ব্যবসা করছে। শহরে কত অনুষ্ঠানবাড়ি রয়েছে, সেই তথ্যই পুরভবনে নেই। তাই সেগুলি পরিদর্শনের তালিকায় পড়ে না। সেখানে কী কী পরিষেবা রয়েছে, নকশা কতটা বৈধ, তা-ও কেউ জানে না। এ প্রসঙ্গে শোভনবাবু বলেন, “বৈধ অনুমতি না নিয়ে অনেকে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাতারাতি সব ক্ষেত্রে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া যায় না। তবে, ওঁদেরও মাথায় রাখতে হবে যে, এ ভাবে বেশি দিন চলবে না।” |