মেঘের ছায়া কপিচাষে, ভাল ফলনেও কপালে ভাঁজ
স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে ফুলকপি চাষ করেছিলেন বেলডাঙার রতন মণ্ডল। শীতের মুখেই মাঠ ভরেছে ফসলে। তবে তাতে হাসি ফোটা নয়, কপালে ভাঁজ পড়েছে তাঁর।
বাজার ইতিমধ্যেই ফুলকপিতে ভরে গিয়েছে। ফুলকপির অতিরিক্ত ফলনে লাভ তো দূরের কথা, কপি আদৌ বিক্রি হবে কী না, তা নিয়ে এখন হা-হুতাশ রতনবাবুদের। নজরুল হক ওই গ্রামেরই কপি চাষি। তিনি বললেন, “ভ্যান ভাড়া করে বাজারে কপি নিয়ে গেলে ক্ষতি বেশি। বিক্রি তো নেইই, তার উপরে ভ্যানের ভাড়া। মাঠেই ফেলে রাখছি। কী করব, গরুকে খাওয়াচ্ছি।”
শীতের শুরুতেই বেলডাঙার সুমননগর, দেবকুণ্ডু, মক্রামপুর, মাধরপুকুর, বেগুনবাড়ির মতো গ্রামগুলিতে এটাই ছবি। ফলন ভাল হয়েছে ফুলকপির। কিন্তু বাজার কোথায়? এক সপ্তাহেই কপির দাম অস্বাভাবিক কমে গিয়েছে। চার টাকা থেকে এক লাফে কপির দাম এখন ৫০ পয়সা। কেন?
গত বছর ফুলকপি চাষ ব্যাপক লাভজনক হয়েছিল। এ বার তাই কপি চাষেই ঝুঁকেছিলেন অধিকাংশ। শেষ বর্ষায় বাঁধা ধরা যে বানভাসি বেলডাঙার এই সব এলাকা নিয়ম করে ভাসায়, এ বার তা-ও হয়নি। ফলে কপি বোনার সময়ও পেয়েছিলেন চাষিরা। কিন্তু এ বার চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য না থাকায় লাভের মুখ দেখতে পাননি চাষিরা।
তারউপর গত তিন-চার দিন ধরে আকাশ মেঘলা। চাষিদের কতায়, এই সময়ে কপি মাঠে ফেলে রাখলে নষ্ট হয়ে যাবে। গত কয়েক দিনের কুয়াশা আর মেঘের জন্য কপিতে বাড়ছে পোকার সংক্রমণ। তাই মাঠে ফেলে রেখে দাম বাড়ানোর সুযোগও নেই। ফলে যা দাম পাচ্ছেন তাতেই কপি বিক্রি করছেন তাঁরা। স্থানীয় কৃষক রবীন্দ্রকুমার দাস বলেন, “আগের বার আমি এক বিঘা জমির কপি ২৮ হাজার টাকা বিক্রি করেছিলাম। সেই আশাতেই এ বারও ফুলকপিই চাষ করলাম। কিন্তু বাজারের যা অবস্থা, এখনও জমির ফসল কাটতেই পারিনি। শীতের প্রথমেই এই অবস্থা হলে পরের দিকে কী হবে ভাবতেই পারছি না।”
জমিরউদ্দিন মোল্লা বললেন, “আমি ওডিশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করি। এ বার কপি চাষ করে ছিলাম। বেবেছিলাম গ্রামে থেকেই সারা বছরের আয় কুড়িয়ে নিতে পারব। কিন্তু যা দাম পাচ্ছি তাতে বাইরে মজুর কাটতে না গেলে মা-খেতে পেয়ে মরতে হবে।”
স্থানীয় চাষিরা জানান, এক বিঘা জমিতে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ করে হাজার সাতেক কপি উৎপাদন হয়। মাঠেই সেই কপি ৩০-৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। আর যারা বাড়তি দামের আশায় ভ্যানে করে কপি বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের লোকসানের পরিমাণ বেশি। অনেক ক্ষেত্রেই ফড়েরা আগে থেকে কপির বায়না দিয়ে গিয়েছেন। তবে তারা কেউই আর কপি নিতে আসছেন না। বেলডাঙা-১ ব্লক কৃষি আধিকারিক শুভঙ্কর বসাক বললেন, “কপির বেশি ফলন হওয়ায় কৃষকেরা লাভ করতে পারছেন না। তবে কৃষকদের সচেতনতার অভাবই এই ক্ষতির কারণ। আমরা বার বার বিভিন্ন কৃষি শিবিরে বলেছি একই ফসল বার বার চাষ না করতে। অর্থাৎ ৫ বিঘা জমি থাকলে সেখানে শুধু কপি চাষ না করে গম, ডাল, শীতের সব্জির মতো জিনিষ চাষ করা যেতেই পারে। গত বছর কপি চাষে অনেক লাভ করেছিলেন চাষিরা। সে জন্যই এ বারও শুধু কপিই চাষ করেছেন। গত ২-দিন দিন ভাল রোদ না ওঠায় কপিতে রোগের আক্রমণও হচ্ছে। চাষিদের প্রতি লিটার জলে ১ গ্রাম ম্যানকোজেবর বা ২.৫ গ্রাম কারবেন্ডাজিম মিশিয়ে ফসল থেকে ছাত্রাক নাশের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.