অল্প হলেও কমলো সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার। নভেম্বরে তা দাঁড়াল ৯.১১%। অক্টোবরের ৯.৭৩ শতাংশের তুলনায় যা কিছুটা কম। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্বস্তির শ্বাস ফেলতে পারছে না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা কেন্দ্র। কারণ, এখনও ওই হার থেকে গিয়েছে ৯ শতাংশের উপরেই। তাই বৃদ্ধির শ্লথ গতি ও শিল্প সঙ্কোচনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বার সুদ না বাড়িয়ে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের কাজ শীর্ষ ব্যাঙ্কের সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
পাশাপাশি টাকার দামের অক্লান্ত পতন তো রয়েইছে। বুধবারও টাকার দাম পড়েছে ৪৮ পয়সা। দিনের শেষে এক ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৫৩.৭১/৭২ টাকা। এই সব কারণে লগ্নিকারীদের অস্বস্তির প্রমাণ দিয়ে পড়েছে শেয়ার বাজারও। বুধবার ১২১.৩৭ পয়েন্ট নেমে সেনসেক্স থামে ১৫,৮৮১.১৪ অঙ্কে।
এই পরিস্থিতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আগামী শুক্রবার ঋণনীতি পর্যালোচনায় কী পদক্ষেপ করে, সে দিকেই তাকিয়ে সকলে। ২০১০-এর মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ১৩ বার সুদ বাড়িয়েছে তারা। শেষ দফায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে এলে সুদ বাড়ানোর রাস্তায় আর না-ও হাঁটতে পারেন তাঁরা। এখন সব মহলই অপেক্ষা করে আছে এটা দেখার জন্য যে, ওই ইঙ্গিত তিনি আদৌ বাস্তবায়িত করতে পারেন কি না। এমনকী অনেকে মনে করছেন ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সুদ কমানোর পথেও হাঁটতে পারে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও এ দিন বলেন, “এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক আর্থিক সঙ্কটেরই আংশিক প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ভারতে। তার উপর মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে দেশে ঢিমে হয়ে পড়ছে বৃদ্ধির গতি। থমকে যাচ্ছে বেসরকারি সংস্থার লগ্নিও।” তবে এ দিনও তাঁর আশ্বাস, অন্যান্য বহু দেশের তুলনায় এখনও ভারতীয় অর্থনীতি অনেক ভাল অবস্থায় রয়েছে। তাঁর মতে, দুনিয়ায় আর্থিক সঙ্কট এখন এতটাই প্রবল যে, এমন কোনও অস্ত্র তাঁদের বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে নেই, যা দিয়ে এক সঙ্গে সব সমস্যার সমাধান হয়। গতি আসে আর্থিক বৃদ্ধিতে।
এত দিন শিল্পমহলের বিরোধিতা সত্ত্বেও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক লাগাতার সুদ বাড়িয়ে গিয়েছে। তাদের তুণে যে সব অস্ত্র ছিল, তার সবগুলিই প্রয়োগ করেছে তারা। কিন্তু ওই পদক্ষেপগুলি এখনও ফল দিতে পারেনি। উল্টে শিল্পোৎপাদন পড়তে শুরু করেছে। ঢিমে হয়েছে বৃদ্ধির হার। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই তাই মনে করছেন, এই অবস্থায় সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার দাম কমার বাস্তবকে মেনে নিয়েই শিল্প বৃদ্ধির হার বাড়াতে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হতে হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে কমাতে হতে পারে সুদের হার। তবে অন্য দিকে, মূল্যবৃদ্ধির হার এ বার না বাড়লেও এখনও তা ৯ শতাংশের উপরে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং কেন্দ্র উভয়েই চলতি আর্থিক বছরের শেষে তা ৭ শতাংশে বেঁধে রাখতে চায়। পাশাপাশি ডলারে টাকার মূল্য হ্রাসও সর্বকালীন রেকর্ড ছুঁয়েছে। এই অবস্থায় প্রথাগত পথে না হেঁটে নতুন কিছু করার ঝুঁকি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কতটা নেবে, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজনও বলেন, “মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের জোর দেওয়া উচিত।” একই মতের শরিক যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়াও। কিন্তু অর্থমন্ত্রী এ দিন বলেন, মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তাই এখন আমাদের উচিত যত দ্রুত সম্ভব আর্থিক বৃদ্ধিতে আরও গতি আনার চেষ্টা করা। |