প্রাচীন কাল থেকে দার্জিলিং-এ হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান লক্ষ করা যায়। দার্জিলিং শহরের অবজার্ভেটরি পাহাড়ে মহাকালের মন্দিরে একই সঙ্গে মহাদেব ও বুদ্ধদেবের পুজো হয়। পাশাপাশি বসে থাকেন ব্রাহ্মণ পুরোহিত ও বৌদ্ধ লামা। অনেকে মহাকাল মন্দিরে পুজো দিতে এসে জ্বলন্ত প্রদীপ ভগবানের উদ্দেশে নিবেদন করেন। অবজার্ভেটরি হিল-এ আগে একটি বৌদ্ধমঠ ছিল। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে সিকিমের পেডং মঠের একটি শাখা হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে গোরখাদের আক্রমণে এই মঠ ধ্বংস হয়। পরে সংস্কার করা হলেও ১৮৭৮-’৭৯-তে মঠটি স্থানান্তরিত হয়ে ভুটিয়াবস্তি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ম্যাল পাহাড়ের নীচে ভুটিয়া বৌদ্ধমঠ ও বিহারটি তার অতীত ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। মঠটি লামা মতবাদের ‘কর-মা-পা’ অনুগামীদের। পরিচালনার দায়িত্বে ঘুম মঠের পরিচালকবর্গ। মঠের দেওয়ালে নানা রঙিন চিত্রের সমাবেশ দেখা যায়। এ ছাড়া আছে নানা পাণ্ডুলিপি ও ব্রোঞ্জমূর্তি। মহাকাল শৈল-এর মন্দিরে মহাকাল, তাঁর শক্তি মহাকালী, শিব, পার্বতী, সন্তোষীমাতা প্রভৃতি দেবদেবী স্থাপিত হয়েছেন। এখানে হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মাবলম্বীরাই পুজো করেন। পুজোর জন্য ফুল ও দুধ দেওয়া হয়। রঙিন সুতো, নকুলদানা দেবদেবীকে অর্পণ করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা লামাদের তত্ত্বাবধানে নানা নিয়ম ও আচার পালন করে থাকেন। দর্শনার্থীরা ঘণ্টা বাজিয়ে প্রণাম জানান এবং সাতবার প্রদক্ষিণ করে বেড়ার বংশ দণ্ডের উপর নানা রঙের সুতো ঝুলিয়ে পতাকার মতো উড়িয়ে দেন। একে ‘বায়ু-ঘোটক’ বলে। মহাকালের কাছে একটি হোমকুণ্ড আছে। কিছু দূরে একজন লামার সমাধি আছে। এই পাহাড়ের গায়ে একটি সুড়ঙ্গ সহ গুহা আছে। প্রবাদ, এই সুড়ঙ্গ তিব্বতের লাসা পর্যন্ত গিয়েছে। বর্তমানে বিপদের কথা ভেবে সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দার্জিলিং শৈল শহর। এখানে হিন্দু মন্দির, বৌদ্ধমঠ, অন্য দেবস্থান ঘিরে মানুষের সমাগম হয়, সাংস্কৃতিক সমন্বয় গড়ে ওঠে। পাহাড়ি মানুষের জাতীয়তাবোধই তাঁদের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক ঐক্য টিকিয়ে রেখেছে।
|
লিটল ম্যাগ-এ মিশে থাকে এক সমুদ্র জীবন, হার না মানা মনোভাব আর ক্ষুদ্র হলেও মহৎ মহৎ সাহিত্যকর্ম’ বলছিলেন বালুরঘাট সেফ হার্ট-এর অন্যতম উদ্যোক্তা সমাজসেবী চিকিৎসক দেবব্রত ঘোষ। ‘আর সে জন্যই এ বারের উৎসব আবহে আমরা লিটল ম্যাগ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি’ বললেন সম্পাদক পল্লব দত্ত। শুধু দক্ষিণ দিনাজপুর বা উত্তরবঙ্গ থেকে নয়, এল দক্ষিণবঙ্গ এমনকী আন্দামান থেকেও। দক্ষিণ দিনাজপুরের যেমন ছিল দধীচি, প্রত্যুষ, কৃষ্টিবীণা, রা, উষাহরণ, আত্রেয়ীর পাড়া, মুখোস ইত্যাদি, তেমনই মেখলিগঞ্জ থেকে ছিল অপরাজিতা, গিবস (হাওড়া), উদার আকাশ (দঃ ২৪ পরগনা), কলকাতা থেকে শহর, একুশ শতক, কবিসম্মেলন, অনুষ্টুপ ইত্যাদি। স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকদের অনুভবে ধরা দিল সৃষ্টির এক-একটি বর্ণিল দিগ্দর্শন। বালুরঘাট সহ দক্ষিণ দিনাজপুরে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। লিটল ম্যাগকে সাহিত্যের মূল ধারায় নিয়ে আসার এই প্রচেষ্টা ভীষণ প্রাসঙ্গিক।
|
কেউ চাকরি করেন, কেউ ছাত্র, কেউ ব্যবসায়ী। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীও আছেন। এঁরা সকলেই জলপাইগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশনের স্বেচ্ছাসেবক। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন। দশমীর দিন এঁরাই পৌরাণিক পালায় অভিনয় করেন আশ্রমের মাঠে। এ বার হল পৌরাণিক পালা ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। পালা দেখে খুশি সকলেই। এমন চমকপ্রদ পালা উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুতির সময় কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টা। আগাম মহড়ার কোনও বালাই নেই। মঞ্চস্থ করার কয়েক ঘণ্টা আগে সকলে মিলে গোটা বিষয়টি ঠিক করে নেন। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রেখে মঞ্চস্থ হয় পালা। তাতে কি আর সব নিখুঁত করার জো আছে? পালা চলতে চলতে হয়ত খসে পড়ল সিংহের লেজ বা দুর্গার মুকুট। পালার মাঝ পথে দুর্গার ত্রিশূল ভেঙে গেল আর তা জোড়া দিতে এগিয়ে এলেন স্বয়ং মহিষাসুর! তাঁর নকল গোঁফের এক দিক হয়ত খুলে পড়েছে। দুর্গাপুজো উপলক্ষে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার (গোলপার্ক) থেকে আগত স্বামী বেদস্বরূপানন্দ এক দিকে সমগ্র পালাটিই পাঠ করেন। তাঁর স্তোত্রপাঠ, গান অন্য আবহ রচনা করে। দশমীর বিষাদঘন মুহূর্তে ক্ষণিকের এই আয়োজন আনন্দ জাগায় অগণিত ভক্ত মনে, জানালেন আশ্রম সম্পাদক স্বামী অক্ষয়ানন্দজি। |
রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন করা পেশা ছিল। অভাবী ঘরের ছেলে, চতুর্থ শ্রেণীর পর ইতি টানতে হয় পড়াশোনায়। বাবা পেশায় দিনমজুর ছিলেন। খাবার পরিবেশনের কাজ করতে করতে এখন রান্নায় দারুণ পারদর্শী ময়নাগুড়ির ধীরেন রায়। এলাকায় কাঞ্চা নামেই পরিচিত। কাশ্মীরি আলুর দম, মালাই কোপ্তা, পনির বাটার মশালা, বা পনির ভরতা সুস্বাদু হয় তার হাতে। টানা আঠাশ বছর ধরে এই কাজ করছেন। ময়নাগুড়ি ব্লকের পূর্ব টেকাটুলির বাসিন্দা ধীরেন। বছর পঁচিশ আগে বাবা মারা যান। মা পাতালি রায় (৭১) বার্ধক্যভাতা পান। সেই গ্রামের ছেলে ‘চিকেন হংকং’ কিংবা ‘চিকেন সিঙ্গাপুরি’ রান্নার বিশেষজ্ঞ কেমন করে হলেন? উত্তরে ধীরেন বলেন, ‘খুব ছোট বয়েস থেকে রেস্তোরাঁয় ঢুকেছিলাম কাজে’। ধাবায় তাঁর রান্না খেয়ে প্রশংসা করেছেন রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে অভিনেতা ও অভিনেত্রীরাও। মা, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে ছ’জনের সংসার চলে ধীরেনের উপার্জিত অর্থেই। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে চান ধীরেনবাবুরা।
|