ডিউটি তালিকা দেয়নি আমরি
রাতে কি ছিলেন শুধু খেপ-খাটা হাউসস্টাফরাই
ডিসেম্বর রাতে আমরি-তে কারা ডিউটিতে ছিলেন, জবাব দিতে গিয়ে বারবার হোঁচট খাচ্ছেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। আর এই উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসা তথ্যই স্বাস্থ্য-কর্তাদের মনে উস্কে দিচ্ছে পুরনো একটি সন্দেহ।
স্বাস্থ্য-কর্তারা বলছেন, ওই রাতে আমরি-তে ১৬৪ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী ১০ জন রোগী প্রতি এক জন করে চিকিৎসক থাকে। সেই মতো ১৬ জন চিকিৎসকের সেই রাতে ডিউটিতে থাকার কথা। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত তার তালিকা পেশ করতে পারেননি। স্বাস্থ্য দফতরের অভিযোগ, ইদানীং বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রাতের দিকে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা হিসেবে ডিউটি করেন সরকারি হাসপাতালের হাউসস্টাফরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর কোনও রেকর্ড রাখে না বেসরকারি হাসপাতালগুলো। সেই কারণেই আমরি তালিকা দিতে পারছে না বলে স্বাস্থ্য দফতরের সন্দেহ।
এক স্বাস্থ্য-কর্তা বলেন, “সরকারি হাসপাতালের হাউসস্টাফদের একটা অংশ দিনের পর দিন তাঁদের কাজের জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে ‘উপরি’র খোঁজে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ডিউটি দিতে যান বলে আমাদের কাছে খবর ছিল। সেই মতো আমরা নজরদারিও বাড়িয়েছিলাম। আমরি-তে ওই রাতে কোন কোন ডাক্তার ডিউটিতে ছিলেন, তা বারবার জানতে চেয়েছি আমরা। ওঁরা তালিকা দেননি। সেই থেকে আমাদের সন্দেহ দৃঢ় হয়েছে। আমরা জেনেছি, রাতের ডিউটির বেশির ভাগ চিকিৎসকই বাইরের।”
দুর্ঘটনার দিন ও তার পরে স্বাস্থ্য-কর্তারা হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে এমন কাউকে পাননি, যিনি সে রাতে রোগীদের দায়িত্বে ছিলেন। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য-কর্তারা পুলিশের কাছ থেকে সেই তালিকা সংগ্রহ করবেন বলে জানিয়েছেন। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার দময়ন্তী সেন বলেন, “আমরি হাসপাতালে ওই রাতে কোন কোন চিকিৎসক, নার্স এবং অন্য কর্মী ডিউটিতে ছিলেন তা আমরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানতে চেয়েছি।” স্বাস্থ্য দফতরের সন্দেহ, বাইরে থেকে খেপ খাটা হাউসস্টাফরাই সম্ভবত সে রাতে ‘ডিউটি’-তে ছিলেন। স্বাস্থ্য দফতরের মতে, এই ধরনের কাজে সংশ্লিষ্ট জুনিয়র ডাক্তারের কোনও দায়বদ্ধতা থাকে না। ফলে রোগীর চিকিৎসা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, হাউসস্টাফশিপ চলাকালীন অন্যত্র এমন ডিউটি পুরোপুরি বেআইনি। তা সত্ত্বেও কী ভাবে দিনের পর দিন এমন ঘটছে? স্বাস্থ্য অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাক বলেন, “নন প্র্যাকটিসিং অ্যালাওয়েন্স নিয়েও বহু ডাক্তার প্র্যাকটিস করে চলেছেন। জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে ফাঁকি দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করছেন। লুকোচুরি খেলা চলতেই থাকছে। এটা বন্ধ হওয়া খুব জরুরি। কিন্তু কী ভাবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।”
কেন? স্বাস্থ্য-কর্তাদের একাংশের মতে, ‘ভিজিটিং’ চিকিৎসকেরা হাসপাতালে খুব কম সময়ই থাকেন। জুনিয়র ডাক্তাররাই মূলত হাসপাতালের পরিষেবাটা বজায় রাখেন। তাই তাঁদের উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপালে তাঁরা অনেকেই কাজ বন্ধ করার হুমকি দিতে পারেন। তা হলে অনিয়ম চলতেই থাকবে? নামগোত্রহীন ভাবে দায় এড়িয়ে কাজ করার এই ঐতিহ্যই চালু থাকবে? স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বলেন, “আমরি-র ঘটনার পরে হাউসস্টাফদের সতর্ক করা হয়েছে। তাঁরা অধিকাংশই অবশ্য বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, এগুলো আর বরদাস্ত করা হবে না।”
ডাক্তারদের বিভিন্ন সংগঠন কী বলছে? সিপিএম প্রভাবিত জুনিয়র ডক্টরস কাউন্সিল-এর তরফে অতীশ হালদার বলেন, “বেশ কিছু হাউসস্টাফ এটা করতেন। এখনও করেন। সংগঠনগত ভাবে আমরা এটা একেবারেই সমর্থন করি না। আমরা মনে করি, এটা বড় ধরনের অপরাধ।” তৃণমূল প্রভাবিত চিকিৎসক সংগঠন প্রোগ্রেসিভ সার্ভিস ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন-এর তরফে জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, “এমন ঘটনা কোনও ভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়। এটা অমার্জনীয় অপরাধ। অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত শাস্তি, এমনকী হাউসস্টাফশিপ বাতিল করে দেওয়া দরকার।”
স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন তদন্তে তাঁরা দেখেছেন, সরকারি হাসপাতালে কাজ শেষ হতে না হতেই বহু হাউসস্টাফ ছুটছেন সল্টলেক, বাইপাস, আলিপুর কিংবা ঢাকুরিয়ায় ডিউটি দিতে। কেউ আবার কোনও ‘বন্ধু’র সঙ্গে কাজ ভাগাভাগি করে কাজের সময়েই সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে বেরোচ্ছেন ‘উপরি’র খোঁজে। আমরি-কাণ্ডের পরে মহানগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের পরিষেবা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে এই ‘ওভার টাইম’-এর কারচুপি ধরা পড়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের এই নজরদারি শুরু হওয়ার পরে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সতর্ক হতেও শুরু করেছেন। অনেকে এ-ও দাবি করেছেন যে, তাঁদের হাসপাতালে কোনও সরকারি হাউসস্টাফ কাজ করেন না। বেলেঘাটা ইএম বাইপাসের কাছে এক বেসরকারি হাসপাতালের সিইও রূপালি বসু বলেন, “আমাদের ১৯৫ জন জুনিয়র ডাক্তার। এঁদের মধ্যে অনেকেই অন্য বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু কেউ সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার নন।” বাইপাসের আর একটি হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর তাপস মুখোপাধ্যায় জানান, সরকারি হাউসস্টাফদের নিয়ে অনেক সমস্যা। তাঁরা মন দিয়ে কাজ করেন না। তাই তাঁদের এখন রাখা হচ্ছে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.