ক্লাসঘরের দেওয়াল জুড়ে ফাটল। উপরে টালির ছাদের বেশ কিছু জায়গা ভেঙে গিয়ে ঘরের মধ্যে রোদ, বৃষ্টির পথকে সুগম করে দিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কুলতলি ব্লকের ভুবনেশ্বরী অবিনাশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন বিপজ্জনক ভবনেই চলছে নিত্য পঠনপাঠন। যে কোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা মাথায় নিয়েই ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বিদ্যালয়ের তরফে একাধিকবার স্কুলভবনের দূরবস্থার কথা প্রশাসনকে জানানো হলেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি।
ব্লকের ঠাকুরান নদী লাগোয়া এই বিদ্যালয়টি এক ব্যাক্তির দান করা প্রায় ১০ কাঠা জমির উপরে ১৯৫৬ সালে তৈরি হয়। ইটের দেওয়াল আর টালির চালের স্কুলটিতে প্রথমে গ্রামের যুবকেরা বিনা পারিশ্রমিকেই ছাত্রচাত্রীদের পড়াতেন। ১৯৭১ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি অনুমোদন পায়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৫৮ জন। রয়েছেন তিনজন শিক্ষক ও একজন পার্শ্বশিক্ষক। স্কুলঘর তৈরির হওয়ার পর থেকে এত বছর তার আর সংস্কার হয়নি। তার উপর ২০০৯ সালে আয়লার সময় ঠাকুরান নদীর জল ঢুকে পড়ে স্কুলঘরে। ভীষণভাবে ক্ষতি হয় স্কুলঘরের। তার জেরে দেওয়ালে ফাটল ধরে। জায়গায় জায়গায় ফুটো হয়ে গিয়েছে টিনের ছাদ। |
ছাত্রছাত্রীদের বসার জন্য বেঞ্চ, টেবিলের অবস্থাও শোচনীয়। বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীকেই মাটির উপরে বসে ক্লাস করতে হয়।
ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহারের জন্য কোনও শৌচাগার নেই। নেই মিড ডে মিল রান্নার ঘর। ঘর না থকায় ক্লাসঘরেরই পাশে ব্যবস্থা করে নিয়ে রান্না করা হয় মিড ডে মিল। রান্নার ধোঁয়ায় ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকদের অসুবিধা হয়। পানীয় জলের একটি মাত্র নলকূপ থাকলেও তারও অবস্থা খারাপ। কোনওমতে সরু সুতোর মতো জল পড়ে। বছর খানেক আগে বিদ্যালয়ের ক্লাসঘর তৈরির জন্য সর্বশিক্ষা মিশন থেকে ২ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা অনুমোদন হয়। ওই টাকায় ক্লাবসঘর তৈরি হলেও এতজন ছাত্রছাত্রীর তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। ফলে বাঁশ দিয়ে চারপাশ ঘিরে মেঝেয় ছাত্রছাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।
ক্লাসঘরের ছাদ ফুটো হওয়ায় বর্ষায় বৃষ্টি হলে জল পড়ে। তখন বাধ্য হয়ে স্কুলে ছুটি দিয়ে দিতে হয়। তা ছাড়া ভাঙাচোরা অবস্থার কারণে স্কুলঘর ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে শিক্ষকদের। অভিভাবকদের অভিযোগ, আশপাশের গ্রামে কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় বাদ্য হয়ে ছেলেমেয়েদের এখানে পাঠান তাঁরা। একে স্কুলঘরের অবস্থা খারাপ, তার উপর স্কুলে আসতে গেলে প্রায় আড়াই কিলোমিটার মাটির রাস্তা পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয়। অন্য সময় তেমন অসুবিধা না হলেও বর্ষায় এক হাঁটু কাদা ভেঙে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু দিন্দা জানান, বিদ্যালয়ের বেহাল পরিকাঠামোয় ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনে প্রবল সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে শিক্ষকদেরও। আয়লার সময় বিদ্যালয় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সংস্কারের জন্য কোনও সরকারি টাকা মেলেনি।
কুলতলি দক্ষিণ চক্রের অবর প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক পবিত্র গায়েন বলেন, “বিদ্যালয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কুলতলির বিডিও দেবযানী ওঝা বলেন, “বিদ্যালয়ের ভবন ও রান্নাঘর তৈরির জন্য সর্বশিক্ষা মিশন থেকে টাকা অনুমোদনের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অন্যান্য পরিকাঠামোর বিষয়টি পরিদর্শক দেখবেন।” |