ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীর যেন একটু উঠে বসা। পেস-মন্ত্র অবশেষে দিচ্ছে সামান্য আশার অক্সিজেন। প্রত্যাবর্তন এখনই বলা যাচ্ছে না, কিন্তু সোমবারের ইডেনে পরিবর্তনের ইঙ্গিত। ব্যাটিং-বন্ধু উইকেটে সকাল-বিকেল যে ভাবে দাপিয়ে দিল্লির আট-আটটা উইকেট তুলে নিল বাংলা বোলিং!
তবে শুধু ভাল বোলিংয়েই তো হবে না, অবনমনের পাগলাঘণ্টি থামাতে ভাল ব্যাটিংও চাই। তার জন্য ভরসা? কে না জানে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং সদ্য সেঞ্চুরি করে চেন্নাই ফেরত মনোজ তিওয়ারি। যিনি আগের দু’টো ম্যাচে নামতে পারেননি বাংলার হয়ে। এ বার যাবেন, আর যাবেন বাংলাকে বাঁচানোর সংকল্প নিয়ে। যিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এই ম্যাচে কিছু করে দেখানোর। থাকছেন সৌরভও। এই ক্রিকেট-সায়াহ্নে আজও যাঁর মুখাপেক্ষী বাংলা। মনে রাখা ভাল, এই উইকেটে কিন্তু দ্বিতীয় বার ব্যাটিংয়ের সুযোগ আসবে না। যা করার, প্রথম ইনিংসেই করতে হবে। ছকটা সাধারণ: দিল্লিকে তিনশোর কমে আটকে রেখে অন্তত সাড়ে চারশোর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। যাতে অন্তত তিন পয়েন্ট বাংলার ঘরে আসে। |
ইডেনের বাইশ গজে ঘাস নেই বললেই চলে। যেটুকু আছে, সেটুকুও হলদেটে। ইডেনের প্রথম দু’ঘণ্টায় উইকেট থেকে যতটুকু যা সিম মুভমেন্ট পাওয়া যায়, এ দিন বোলারদের ভরসা ঠিক ততটুকুই। সঙ্গে ফাউ হিসেবে জুটেছিল রণদেব বসুকে টিমে না রাখা নিয়ে বিতর্ক, জল্পনা। এই অবস্থায়, বাংলা বোলারদের দিল্লি-শাসনের কাজ সহজ ছিল না। কেউ ব্যর্থ হলেই আঙুল তোলা হত। কিন্তু দিনের শেষে রণ-ও দেখলেন, বাংলা পেসকে টানার লোক এসে গিয়েছে। তাঁর অনুপস্থিতিতেও। এবং নিয়মিত ভরসার হাত বাড়াতে যাঁর কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।
তিনিঅশোক দিন্দা। ‘রণহুঙ্কারের’ ছায়া থেকে বেরোচ্ছেন গত কয়েক বছর ধরেই। কিন্তু চলতি মরসুমে তাঁর ফর্মর দেখে বলাবলি শুরু হয়ে গেছে, এই ছেলে কেন অস্ট্রেলিয়ায় অন্তত ওয়ান ডে সিরিজে যাবে না? জাতীয় টুর্নামেন্টে ইনিংসে চার-পাঁচটা করে উইকেট আসছে প্রায় নিয়মিত। সবুজ পিচ ফেলে ইনিংসে সাত উইকেটও তুলে ফেলছেন। চলতি রঞ্জিতে পাঁচ ম্যাচে আপাতত শিকার সংখ্যা ২৫। আগে দিন্দা মানে ছিল শুধু গতি। আর এখন দিন্দা মানে, গতি-বাউন্স-নিশানার ‘ককটেল’। সঙ্গে আমদানি করেছেন এমন চকিত ‘ইয়র্কার’, যা সামলাতে পিচে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ব্যাটসম্যান। দিল্লির ‘ডেয়ারডেভিল’-দেরও এই আগুনে পুড়তে হল। দিন্দাকে ‘পুল’ মারতে গেলে ধরা পড়তে হচ্ছে ফিল্ডারের হাতে। রক্ষণের রাস্তায় গিয়েও লাভ হচ্ছে না। বল আছড়ে পড়ছে প্যাডে, মুহূর্তে উঠছে আম্পায়ারের আঙুল। সাধে কী আর মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর নামের পাশে চার উইকেট লেখা থাকল!
লক্ষ্মীরতন শুক্লের পাশে আজ হয়তো চার উইকেট লেখা নেই। কিন্তু তাঁকেও ভুলে থাকা যাচ্ছে কই? পেলেন একটা উইকেট, ভাগ্য সহায় হলে পেতে পারতেন আরও দু’টো। বাংলা জুড়ে যখন সিনিয়ররা সিঁদুরে মেঘ দেখছেন, তখন লক্ষ্মী ব্যাটে যেমন, বলেও তেমন। কখনও একই দিনে দু’টো ঝোড়ো হাফসেঞ্চুরি আসছে। কখনও বিপক্ষের সেরা ব্যাটসম্যানকে ধোঁকা দিচ্ছে তাঁর ছোট্ট সুইং। এ দিন যেমন। শিখর ধাওয়ান ম্যাচ বের করে নিচ্ছিলেন বাংলার পকেট থেকে। লক্ষ্মীর সুইং তা হতে দেয়নি। এবং দিল্লির-মসনদে ওটাই দিনের সেরা ধাক্কা।
যা দাঁড়াচ্ছে, তামিলনাড়ু ম্যাচের ভুলের ‘রিপিট টেলিকাস্ট’ আটকানো গিয়েছে আপাতত। ক্যাচ পড়েছে, কিন্তু ক্ষতি হয়নি তত। বিপক্ষের ছুটকো-ছাটকা পার্টনারশিপ হয়েছে, কিন্তু কখনও তাতে দম আটকায়নি বাংলার। বোলাররা নিজেদের কাজ করেছেন, পালা এ বার ব্যাটসম্যানদের।
হবে?
প্রায় অন্ধকার ইডেনের প্র্যাক্টিসে যে ভাবে বোলারদের এ দিক-ও দিক ফেলছিলেন মনোজ, তাতে বুক ঠুকে এক বার বাজি রাখলে মন্দ কী?
সংক্ষিপ্ত স্কোর: দিল্লি ২৫২-৮ (ধাওয়ান ৭৬, ভাটিয়া ৫৯ ব্যাটিং, দিন্দা ৪-৫৫, ইরেশ ২-৩৭, লক্ষ্মী ১-৪২, বীরপ্রতাপ ১-৪৯)। |