আগুন নিয়ে খেলা
দমকলের গাড়ি ঢুকতেই পারবে না হাটে
ড় বড় হাট। প্রচুর মানুষের সমাগম। প্লাস্টিকের ছাউনির তলায় চলছে বিকিকিনি। হুকিং করে এন্তার আলো জ্বলছে। ইলেকক্টিক, জেনারেটরের তারের জাল ছড়িয়ে মাথার ওপর দিয়ে। অথচ, দমকলের কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনাই নেই এই বাজার এলাকাগুলির অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে। ব্যবসায়ীরাও উদাসীন। কলকাতার আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে এতগুলি প্রাণহানির পরেও হুগলির জেলার একাধিক হাটে দেখা গেল এই চিত্র।
হুগলিতে জেলার অন্যতম বড় হাট শেওড়াফুলিতে। মূলত কাঁচা সব্জি, আলু, পেঁয়াজের পাইকারি কেনাবেচা চলে এখানে। হাট চত্বরে বেশ কিছু মুদির দোকানও আছে। হাটের মধ্যেই সেই সব দোকানের মালপত্র রাখার গোডাউন। কাঁচা সব্জির গোডাউনও আছে। এই হাট-লাগোয়া জায়গায় দু’টি তেল মিল রয়েছে। প্রতিদিন ভোর থেকে হাট বসে। কয়েকশো কাঁচা সব্জির ডালা রয়েছে হাটে। হাটের পরিধি বাড়তে বাড়তে এখন শেওড়াফুলি স্টেশন ছুঁয়েছে। প্রতিদিনের এই কেনাবেচার সময় রোদ, বৃষ্টি থেকে বাঁচতে একমাত্র আশ্রয় গরিব সব্জি বিক্রেতাদের সস্তার প্লাস্টিক। আর এই অপরিসর হাটে প্লাস্টিকের ও নানা দাহ্য বস্তু নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এখন আলুর জন্যও প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। বস্তা প্লাস্টিক বা পাটের যা দিয়েই তৈরি হোক না কেন, বিপদের ঝুঁকি কিন্তু থেকেই যাচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা।
শ্যাওড়াফুলি হাট। ছবি: প্রকাশ পাল।
শেওড়াফুলি হাটের কাঁচাসব্জি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মুরারীমোহন কুণ্ডু বলেন, “দমকল থেকে আগুনের ব্যাপারে সাবধানতার ক্ষেত্রে আমাদের কোনও গাইডলাইনই দমকল কর্তৃপক্ষ দেয়নি। যদি সরকারি ভাবে গাইডলাইন দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে আমরা নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করব।” তিনি অবশ্য বলেন, কাঁচা সব্জি কোনও ভাবেই দাহ্য নয়। সবজি আসে যেহেতু পাইকারি বাজারে এবং তা আবার কিনে নিয়ে চলে যান ব্যবসায়ীরা, সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেকটাই কম।”
মহকুমা শহর চন্দননগরে বৌবাজার হাটের অবস্থা সবথেকে করুণ। কাঁচা সব্জির এই হাট রেললাইন-লাগোয়া এলাকায়। হাটে বেশ কিছু দোকান রয়েছে। প্রতিদিন শয়ে শয়ে মানুষ আসেন। কিন্তু কোনও কারণে আগুন লাগলে রেললাইনের তলা দিয়ে দমকলের গাড়ি যেতেই পারবে না। কারণ রেলের যে সাবওয়ে আছে, তা নিতান্তই অপরিসর। দমকলের গাড়ি যেতে হবে বৈদ্যবাটী দিয়ে বেশ কয়েক কিলোমিটার ঘুরে।
জেলাসদর চুঁচুড়ার মল্লিককাশেম হাটের পরিস্থতিও খারাপ। কারণ, মূল রাস্তা থেকে বহু ভিতরে ঘিঞ্জি গলিতে বিস্তৃত এই হাট। প্রচুর দোকানপাট। আগুন লাগার আশঙ্কা থেকেই যায়। কিন্তু হাটের মধ্যে অপরিসর সরু রাস্তা দিয়ে দমকলের গাড়ি কোনও মতেই ঢুকতে পারবে না।
পাণ্ডুয়ায় জিটি রোডের উপর হাটের পরিস্থিতিও একই। খড়, দরমা, বাঁশের কাঠামোর, তাল পাতার অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি দোকান রয়েছে এখানে। সঙ্গে রয়েছে প্রচুর চা, চপের দোকান। প্রতিদিন আগুন জ্বেলেই রান্নাবান্না হয়। যে কোনও সময় বড় ধরনের বিপদ ঘটে যেতে পারে। পাণ্ডুয়ারই এক ব্যবসায়ীর আপেক্ষ, “মাত্র এক কিলোমিটার দূরে থৈ পাড়ায় রেগুলেটেড মার্কেটের মধ্যে সুন্দর সেড দেওয়া হাটের জায়গা রয়েছে। কিন্তু শহর থেকে কিছুটা দূরে বলে সেই হাটের জায়গা ব্যবহার হয় না। পড়ে নষ্ট হচ্ছে।” বৈদ্যবাটি পুরসভা অজয়প্রতাপ সিংহ বলেন,“আগুন-সংক্রান্ত নিরাপত্তা নিয়ে আমরির ঘটনার পরে ভাবনা-চিন্তার সুযোগ আছে। এ ব্যাপারে দমকল ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলব।”
কিন্তু কবে দমকল-প্রশাসন নড়ে বসবে, কবেই বা মানুষের সচেতনতা বাড়বে, তা সময়ই বলে দেবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.