কর্কট-ক্রান্তি’র (সম্পাদকীয় ৬-১২) মন্তব্য ‘...সি পি আই এম যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দিয়াছিল তাহার বিনাশ নাই’ পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে নিতান্তই হতাশ করে। ৩৪ বছরের পুঞ্জীভূত হতাশাকে বিদায় দেওয়ার ভূমিকায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ প্রথমে ২০০৯ সালে এবং পরে ২০১১ সালে অবতীর্ণ হয়েছিল। এমনকী দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের অধুনা লোকসভার নির্বাচনেও সেই আস্থা প্রদর্শন করেছে। এতৎসত্ত্বেও যদি আপনাদের সম্পাদকীয় নিবন্ধের মন্তব্যটিকে প্রণিধানযোগ্য বলে স্বীকার করে নিতে হয়, তবে তার চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। তবে কি সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলবে? তার থেকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মুক্তি মিলবে না? আমি পেশায় আইনজীবী। পেশায় নিযুক্ত থাকা হেতু বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে ‘বাতচিৎ’ হয়, সেই বাতচিৎ বলে যে, সি পি এম যে ‘মডেল’ তৈরি করে গেছে সেই মডেলেই সব কিছু চলছে। কেবল মাত্র খোলসের পরিবর্তন হয়েছে। কারও কারও ভীরু ক্রন্দনও শোনা যাচ্ছে। এলাকায় এলাকায় আবার একটি ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে। নতুন যাঁরা এলেন তাঁরাও সর্বগ্রাসী এবং সর্বব্যাপক হওয়ার তোড়জোড় লাগিয়েছেন। মহাশ্বেতা দেবীর সাম্প্রতিক কালের অসতর্ক মন্তব্য কেবল তারই অসংলগ্ন বহিঃপ্রকাশ। ব্যবসায়ীরা বলতে শুরু করেছেন যে, আগের জমানায় তো এক জনকে দিলেই কাজ হয়ে যেত, এখন তো বহু জনকে দিয়েও বিরাম নেই। এর জন্যই কি আমরা পরিবর্তন চেয়েছিলাম না এনেছিলাম?
নতুন মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছার প্রতি আমাদের কোনও সন্দেহ নেই। তবে সদিচ্ছাই কি সব? আর শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছাতেই তো সব হতে পারে না, যদিও আমরা জানি যে, তাঁর দলে তাঁর ইচ্ছেই শেষ ইচ্ছে। সর্বগ্রাসী রাজনীতির ঘুণপোকা শেষ তো হয়ইনি, বরং আরও প্রবল প্রতাপে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। আমাদের ভয়ের কারণ তাতেই।
যে হেতু একই দিনের একই পৃষ্ঠায় জয়ন্ত ঘোষাল মহাশয়ের ‘জনপ্রিয়তা বনাম গণতন্ত্র’ প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে, সেই সুযোগে প্রসঙ্গান্তরে আরও দু’একটি কথা বলতে চাই। জয়ন্তবাবু জনপ্রিয়তা এবং গণতন্ত্রের মধ্যে একটা বৈপরীত্য লক্ষ করেছেন। এটা ঠিকই যে, ভোটতন্ত্রের স্বার্থে কোনও রাজনীতিক বা রাজনৈতিক দলই জনগণমনকে চটাতে চান না। সে সাময়িক কারণের জন্যই হোক বা দীর্ঘ কালের জন্যই হোক। কিন্তু এটা সম্ভবত ঠিক নয় যে, জনপ্রিয়তা আর গণতন্ত্র বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। গণতন্ত্রের সমস্ত দাবি রক্ষা করেও বোধহয় জনপ্রিয়তা রাখা সম্ভব। জনপ্রিয়তা রক্ষা করার দায়ে অবশ্যই কখনও কখনও রাষ্ট্রের এবং দেশের স্বার্থরক্ষা-কবচ গণতন্ত্রকে অস্বীকার করার প্রবণতা ধরা পড়ে। কিন্তু সেই প্রবণতা সাময়িকই হয়। যাঁরা কেবল রাজনীতিক, তাঁরাই কেবলমাত্র এই প্রবণতা প্রকাশ করেন। কিন্তু যাঁরা সত্যিকারের দেশনেতা, তাঁরা দেশের স্বার্থে, রাষ্ট্রের স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পিছপা হন না, জনপ্রিয়তার অন্ধ মোহে বৃহত্তর স্বার্থকে ব্রাত্য বলে মনে করেন না। এর উদাহরণ যথেষ্ট রয়েছে। তবে সেই কঠিন সিদ্ধান্ত আখেরে দেশের রাষ্ট্রের পক্ষে শুভ কি অশুভ, তা অবশ্য সময়ই বলতে পারে। কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহসিকতা সেই দেশনেতাদের মধ্যে লক্ষ করা যায়। এবং, সেই দেশনেতাদের জনপ্রিয়তার পারদের সাময়িক ভাবে অবনমন লক্ষ করা গেলেও তা কখনওই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কালক্রমে তাঁদের জনপ্রিয়তা দ্বিগুণতর হয়। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কি প্রস্তুত সেই সব কঠিন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে? গণতন্ত্রের স্বার্থ রক্ষাকারী কঠিনকঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিশ্রুতির বোঝা নিয়ে যেন আমাদের চলতেনা হয়।
বিমলকুমার চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা-১৯
|
প্রতিবেদকের উত্তর: দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলে একের পর এক গাছ কেটে যে রাতের অন্ধকারে পাচার হয়ে যাচ্ছে, সে কথা বন দফতরের আধিকারিক থেকে রাজনৈতিক নেতা সকলেই স্বীকার করে নিয়েছেন। ১৭-১১ প্রকাশিত ‘কাঠ মাফিয়াদের দাপট দক্ষিণ বাঁকুড়ায়’ প্রতিবেদনের পূর্বে বাঁকুড়া জেলা কাষ্ঠ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক হিসেবে আপনার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। মোবাইলে কথা বলার সময়ে আপনি বলেছিলেন, “এই চুরি চক্রের সঙ্গে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা কোনও ভাবেই যুক্ত নয়। স্থানীয় একটি চোরাই চক্র জড়িত। এই গাছ চুরি করার পরে এই চক্রের লোকেরা স্থানীয় কয়েকটি কাঠ চেরাই কলের মালিকের কাছে গিয়ে বিক্রি করে। এর পিছনে বেআইনি ভাবে চলা কয়েকটি স’মিল মালিক জড়িত।” আপনি আরও বলেছিলেন, “দক্ষিণ বাঁকুড়ার রানিবাঁধ, রাইপুর, সারেঙ্গা, বারিকুল-সহ আশপাশের জঙ্গল থেকে যে গাছ চুরি হচ্ছে, সে কথা আমরাই বন দফতরকে আগাম জানিয়ে সতর্ক করেছি। আমাদের সংগঠনের সদস্যরাই দায়িত্ব নিয়ে গাছ চুরি ঠেকানোর চেষ্টা করছে। এ ছাড়াও আপনি আরও কিছু কথা বলেছিলেন, যদিও সেগুলি অপ্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় প্রতিবেদনে লিখিনি। |