সম্মানিত ৬৬ জন
অগ্নিযোদ্ধাদের কুর্নিশ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
সাহসিকতার সম্মান নিতে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে যুবকেরা। সামনে দুই মহিলা। এক জন বৃদ্ধা, অন্য জন তরুণী। বনমালা পুরকায়েত এসেছেন স্বামীর পুরস্কার নিতে, আর সাবিত্রী মাইতি নিলেন ছেলের পুরস্কার।
গত শুক্রবার ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের ভিতরে বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে পুলিশ ও দমকলকর্মীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রোগী ও নার্সদের উদ্ধার করেন পঞ্চাননতলার বস্তির শতাধিক যুবক। তাঁদেরই মধ্যে ৬৬ জনকে সাহসিকতার সম্মান দিল কলকাতা পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে যাদবপুর কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে পুলিশের ‘অলঙ্কার সমারোহ’ অনুষ্ঠানে ওই যুবকদের প্রত্যেকের হাতে মেডেল ও পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই যুবকদের ‘গ্রিন’ পুলিশের পদে নিয়োগ করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
আগুন নেভাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া
তড়িৎ পুরকায়েতের স্ত্রী বনমালা।
শঙ্কর মাইতির মা সাবিত্রীদেবীর হাতে
পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাকিরা এলেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি দুই যুবক। কারণ, শুক্রবার থেকেই শঙ্কর মাইতি ও তড়িৎ পুরকায়েত নামে ওই দু’জন শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তাই তাঁদের হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিলেন তড়িতের স্ত্রী বনমালা ও শঙ্করের মা সাবিত্রী। এ দিন অনুষ্ঠানে ওই দুই যুবকের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন মমতা।
পরিবার সূত্রে খবর, ঘটনার রাত থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন শঙ্কর। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। তাঁর পদক আর চাকরির খবর নিয়ে অনুষ্ঠান শেষের আগেই হাসপাতালে ছেলের কাছে ছুটে গিয়েছেন সাবিত্রী। কিন্তু কথা বলার শক্তি নেই শঙ্করের।
শঙ্করের বাবা ট্রেনে হকারি করেন। উচ্চ-মাধ্যমিক পাশ একমাত্র ছেলে বেকার। এ বার যদি একটি চাকরি হয়, সেই আশায় এখন গোটা পরিবার।
নাকে অক্সিজেনের নল। ডান হাতের কব্জিতে স্যালাইনের সূচ। এসএসকেএম হাসপাতালের বেডে শুয়ে রয়েছেন আর এক ‘সাহসী’ তড়িৎ পুরকায়েত। অক্সিজেন বন্ধ হলেই ঝিমিয়ে পড়ছেন বছর চব্বিশের ওই যুবক। হাসপাতালেই স্বামীর কাছে পুরস্কার নিয়ে গিয়েছেন বনমালা।
দুর্ঘটনার রাতে হাসপাতাল থেকে চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙেছিল পেশায় রিকশাচালক তড়িতের। তখনই উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বিষাক্ত ধোঁয়ার মধ্যেই সকলের আগে দোতলায় উঠে যান তিনি। একাই পাঁজাকোলা করে কয়েক জন রোগী ও এক জন নার্সকে নামিয়ে আনেন।
পুরস্কার পেয়ে কী মনে হচ্ছে জিজ্ঞাসা করতেই নাকের কাছে অক্সিজেনের নলটা হাত দিয়ে ধরে, ভয়াবহ ওই শুক্রবারের কথা বলতে থাকেন তড়িৎ। পরে জানান, অক্সিজেন বন্ধ হলেই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। শরীর ভারী হয়ে যাচ্ছে। মুখটা সামনের দিকে ঝুলে পড়ছে। একটুও খিদে নেই। থামলেন কর্তব্যরত নার্সের ধমকে। কারণ, কথা বলা নিষেধ তাঁর। শুধু স্ত্রীর কাছে শুনতে চাইলেন, ‘মমতাদি’ কী বললেন।
বছর আটেক ধরে পঞ্চাননতলার ওই বস্তিতে ভাড়া থাকেন তড়িৎ। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে। মাধ্যমিক পাশ করে চাকরির আশায় এই শহরে আসেন। চাকরি জোটেনি। বাড়িতে বাবা-মা আর ছোট ভাই। বাবা দিনমজুর। ভাইয়ের নির্দিষ্ট রোজগার নেই। বছর দুয়েক আগে বিয়ে করেছেন। সংসারের অনটনে মাধ্যমিক পাশ যুবক এখন রিকশাচালক।
তড়িতের স্ত্রী বনমালা বলেন, “সে দিন ভোরে বেরিয়ে গিয়েছিল, দুপুরের পরে ফেরে। কিছু খেতে পারছিল না। মুড়ি জল খেয়ে ফের বেরোয়। গভীর রাতে ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়তে থাকে। তখন কাউন্সিলর দাদাকে খবর দেওয়া হয়। তিনিই হাসপাতাল নিয়ে যান।” ৯০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রাক্তন কাউন্সিলর বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাতে আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। তার পরে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করি। আমার উপরে ওঁর চিকিৎসার দায়িত্ব রয়েছে। আজ ওঁর স্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীও কথা বলেছেন।”
আর হাসপাতালে বসে বনমালা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, চাকরি হবে। আমরা সেই আশাতেই আছি।”

ছবি: রাজীব বসু।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.