হলদিবাড়ি শহরে সারি সারি পাট ও সারের গুদাম থাকলেও আগুন নেভানোর যথাযথ পরিকাঠামো নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় ওই সব গুদাম রয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে আগুন লাগলে তা বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কিত এলাকার লোকজন। পুরসভা সূত্রের খবর, হলদিবাড়ি বাজারের চারপাশ জুড়ে যে কটি গুদাম রয়েছে তার মধ্যে ৭টির আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। এমনকী, পুরসভার কাছে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার সময়ে গুদাম তৈরির বিষয়টি চেপে রাখার অভিযোগও রয়েছে। দমকল দফতরও উদ্বিগ্ন। কারণ, পাটের মতো দাহ্য বস্তু যেকানে মজুত থাকে, সেখানে আগুন নেভানোর যাবতীয় সরঞ্জাম রাখা বাধ্যতামূলক। অথচ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা নেই।
এতদিন বিষয়টি নিয়ে সে ভাবে হইচই হয়নি। কিন্তু, আমরি হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে গিয়েছে। বাসিন্দাদের পক্ষ তেকে দ্রুত ওই সব গুদামে আগুন নেভানোর উপযুক্ত সরঞ্জামের ব্যবস্থা যাতে হয়, সে জন্য পুরসভা-প্রশাসনকে উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। গুদাম মালিকদের একজন মুখপাত্র ভগবান লাহোটি বলেন, “চার বছর আগে অগ্নিনির্বাপক দফতরের একজন আধিকারীক এসে গুদামের মাপজোক নিয়ে গিয়েছিলেন। তার পর অনুমতিপত্র দেওয়ার বিষয়ে আর কিছু আমাদের জানানো হয়নি। আমরা নিজেদের মত কিছু সুরক্ষা ব্যবস্থা করে নিয়েছি।”
অগ্নিনির্বাপক দফতরের বিধি মেনে যে এই গুদামগুলি বানানো জরুরি তা অফিসাররা স্বীকার করেছেন। অগ্নিনির্বাপক দফতরের ডেপুটি ডাইরেক্টর উদয় নারায়ণ অধিকারী বলেন, “ওঁরা (গুদাম মালিকরা) অনেক কথাই বলবেন। আপাতত আমরা নার্সিংহোম এবং হাসপাতালগুলির অগ্নিনির্বাপক ব্যাবস্থা নিয়ে একটু ব্যাস্ত আছি। এরপর এই গুদামগুলির অগ্নিনির্বাপক ব্যাবস্থা খতিয়ে দেখে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।”
হলদিবাড়ির বাজারের এই দুরবস্থা নিয়ে সরব হয়েছেন হলদিবাড়ির বাজার এলাকার পুরসভার কাউন্সিলার, পুরসভার বিরোধী দলনেতা এবং কংগ্রেসের একজন প্রাক্তন কাউন্সিলর। হলদিবাড়ি পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের সীমা দাস বলেন, “গুদামগুলি যে অবস্থায় আছে তা বিপজ্জনক। অবিলম্বে পুরসভার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এতদিন কেন ব্যাবস্থা নেওয়া হয়নি সেটাও প্রশ্নেও তদন্ত হওয়া দরকার।” পাশাপাশি, দমকলের অফিসারদের একাংশের ভূমিকা নিয়েও তদন্তে দাবি তুলেছেন কয়েকজন কাউন্সিলর। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলার স্বপ্না কর্মকার বলেন, “হলদিবাড়ি বাজারটি বিপজ্জনক অবস্থায় আছে। পুরসভার মাসিক সভায় বিষয়টি তোলা হবে।”
হলদিবাড়ির প্রাক্তন কাউন্সিলার এবং কংগ্রেস নেতা সিতাংশু মল্লিক জানান, পুরসভার চেয়ারম্যানের কাছে বহু আগে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ব্যাবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। হলদিবাড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তরুন দত্ত বলেন, “১০০ বছরের বেশি সময় ধরে গুদামগুলি এই অবস্থায় আছে। আমর কেউ উদ্যোগী হইনি। এখন সময় এসেছে। অগ্নিনির্বাপক দফতরের সঙ্গে কথা বলব। বাজারের সুরক্ষার বিষয়ে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।” হলদিবাড়ি ব্যাবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ঘোষ জানান, তাঁরাও আগুন নেভানোর জন্য আগাম ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষপাতি। |