স্কুল পরিচালন সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শাসক জোটের দুই শরিক তৃণমূল ও কংগ্রেস সমর্থকদের সংঘর্ষের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকা। রবিবার রাতে এই সংঘর্ষে জখম হয়েছেন ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও ৩ জন কংগ্রেস সমর্থক। জখম দুই তৃণমূল নেতাকে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কংগ্রেস কর্মীদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। চাঁচলের এসডিপিও সন্দীপ মন্ডল বলেন, “তৃণমূল ও কংগ্রেস দু’তরফে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সবদিক খতিয়ে দেখে দোষীদের গ্রেফতার করা হবে।”
রবিবার হরিশ্চন্দ্রপুর হাই স্কুল পরিচালন সমিতির নির্বাচনে ৬টি আসনে জয়লাভ করেন বামফ্রন্ট প্রার্থীরা। জোট না-হওয়ায় নির্বাচনে কংগ্রেস ও তৃণমূল দু’পক্ষ পৃথক ভাবে প্রার্থী দেয়। শুধু তাই নয়। পৃথক ভাবে ৬টি আসনে প্রার্থী দেয় তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীও। রাত ১১টা নাগাদ ফলাফল প্রকাশ হতেই দু’পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘটনার পরে পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মানিক দাসের নেতৃত্বে তৃণমূল নেতৃত্বের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি তৃণমূলের জখম দুই নেতার বিরুদ্ধে কংগ্রেস কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। নেতাকে পেটানোর ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মাধ্যক্ষ সহ অন্যদের গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার দুপুরে তৃণমূলের তরফে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। পুলিশ ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচনে কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট হয়নি। ফলে কংগ্রেস, তৃণমূল, বিক্ষুব্ধ তৃণমূল ও বামফ্রন্ট মিলিয়ে প্রার্থী ছিল ২৪ জন। রাতে ফল বার হওয়ার পর দেখা যায় ৬টি আসনে জয়লাভ করে পরিচালন সমিতি ফের দখলে রাখতে সফল হয়েছে বামেরা। কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠী নিজেদের প্রকৃত তৃণমূল বলে দাবি করায় জোট করা সম্ভব হয়নি। রাতে ফলাফল প্রকাশের পরে কয়েকজন তৃণমূল নেতা কংগ্রেস কর্মীদের উদ্দেশ্যে করে কেমন শিক্ষা দিলাম বলে টিটকিরি দিতে থাকেন। প্রতিবাদ করায় তাঁরা কংগ্রেস কর্মীদের উপর চড়াও হন বলে অভিযোগ। হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি বিমান বিহারী বসাক বলেন, “তৃণমূল সিপিএমের হয়ে কাজ করেছে। সেজন্য কংগ্রেসকে হারতে হল। আমাদের কেউ মারপিটের ঘটনায় জড়িত নয়। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে অযথা কংগ্রেসকে দোষারোপ করা হচ্ছে। যে কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে ওই শিক্ষক নেতা ঘটনার সময় ছিলেন না।” কংগ্রেস নেতৃত্বের ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, নির্বাচনে পরাজিত হয়ে দলের এক নেতাকে সামনে পেয়ে লোহার রড ও লাঠি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে কংগ্রেস কর্মীরা। মাথা ফেটে যায় ওই নেতা তথা ব্লকের সাধারণ সম্পাদক দ্রোণাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বাধা দিতে গেলে নালায় ফেলে পেটানো হয় ব্লকের কার্যকরী সভাপতি রাধেশ্যাম বড়াইকে। ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কিছু নেই। যারা প্রার্থী দিয়েছিল তাঁরা তৃণমূলের কেউ নয়। কংগ্রেসের জন্য কী আমরা কোথাও ভোটে দাঁড়াব না! আমরা প্রার্থী দেওয়ায় ওঁরা ক্ষোভে তৃণমূল কর্মীদের উপরে হামলা চালায়। দ্রুত অভিযুক্তদের ধরা না হলে আন্দোলন শুরু হবে।” সিপিএমের মালদহ জেলা কমিটির সদস্য জামিল ফিরদৌস অবশ্য বলেন, “তৃণমূলের সাহায্য নিয়ে বামেদের জিততে হয়েছে, কংগ্রেসের এই অভিযোগ হাস্যকর।” |