অভিযান শুরু করল দমকল
ফায়ার লাইসেন্স নেই বাঁকুড়া মেডিক্যালেও
মরি-র অগ্নিকাণ্ডের পরে বিভিন্ন নার্সিংহোম ও হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্যের অনেক সরকারি হাসপাতালেও দমকল বিধি মানা হয় না। ব্যতিক্রম নয় বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও। ফায়ার লাইসেন্স তো নেই-ই। হাসপাতাল ঘুরে দেখে চোখে পড়ে জতুগৃহের চেহারা।
কলকাতা ও বর্ধমান সরকারি মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের সঙ্গে একই সারিতে চলে এসেছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাম। এসএসকেএম, এনআরএস কিংবা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মতোই বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজেরও ফায়ার লাইসেন্স নেই। যত্রতত্র ইলেকট্রিকের তার ঝুলছে। কোনও ওয়ার্ডেই অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা নেই। তাই অগ্নিবিধি না মানার কারণে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজেগুলির মতো বাঁকুড়া মেডিক্যালেরও লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। খোদ হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু স্বীকার করেছেন, “এখানে অগ্নি নির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। আমরি-র ঘটনার পরে আমরা হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য ডেপুটি সুপার নিমাইচাঁদ দেবনাথকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে কোথাও আগুন নেভানোর সিলিন্ডার চোখে পড়েনি। এখানে মোট ২৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। শিশু থেকে প্রসূতি, জেনারেল মেডিক্যাল থেকে শল্য বিভাগ- কোথাও আগুন নেভানোর কোনওরকম সরঞ্জাম দেখা যায়নি। স্ত্রী রোগ বিভাগের নীচের তলার বারান্দায় ইলেকট্রিকের তার ঝুলতে দেখা গেল। সুপার ও নার্সিং সুপারিন্টেন্ডেন্টের অফিসের বাইরেও সেই এক ছবি। সিঁড়ির কাছেও চোখে পড়ল ইলেকট্রিকের তার ঝুলছে।
ঝুলে রয়েছে বিদ্যুতের তার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
হাসপাতালের আশপাশে প্লাস্টিকের প্যাকেট, কাগজ, কাপড় ছেঁড়া পড়ে রয়েছে। বিদ্যুতের তারে শর্টসার্কিট ঘটলে এখানেও ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে বলে রোগীরা মনে করছেন। কয়েক সপ্তাহ আগে সদ্যজাত শিশুদের ওয়ার্ডে বিদ্যুতের তারে শট্সার্কিট হয়েছিল। ধোঁয়া বের হওয়ায় হাসপাতাল চত্বরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই ঘটনা থেকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ যে শিক্ষা নেয়নি, হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ইলেকট্রিকের ঝুলে থাকা তার সে কথাই প্রমাণ করে। সুপারের অফিস লাগোয়া নির্গমনের একটি রাস্তা আসবাবপত্র-সহ আবর্জনা ফেলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
দুশ্চিন্তার কারণ আরও রয়েছে। হাসপাতালের নীচের তলায় মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডের পাশেই রয়েছে রান্না ঘর। সেখানে রোগীদের জন্য খাবার রান্না করা হয়। সেখানে একটি মাত্র আগুন নেভানোর সিলিন্ডার রয়েছে। কিন্তু তা ব্যবহার করতে কর্মীরা জানেন না। অপারেশন থিয়েটারগুলিতে কয়েকটি এ রকম সিলিন্ডার রয়েছে। হাসপাতালের প্রয়োজনের তুলনায় সিলিন্ডারের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু কর্মীদের প্রশিক্ষণ না থাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে সিলিন্ডারগুলি কী ভাবে কাজে লাগানো হবে? প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার বলেন, “ফায়ার লাইসেন্স নেই। আগুন নেভানোর সিলিন্ডার কয়েকটি মাত্র রয়েছে। সিলিন্ডারগুলি কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়, কর্মীরা তা জানেন না। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে আমাদের কিছু করার থাকবে না।” তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি কেন? তাঁর জবাব, “এত দিন এ ব্যাপারে সে ভাবে ভাবা হয়নি। তবে এ বার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে।”
এই হাসপাতালে অর্ন্তর্বিভাগে ১১০০ রোগী ভর্তি থাকেন। বর্হির্বিভাগেও প্রতিদিন প্রায় হাজার খানেক রোগী আসেন। এই হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপনের পরিকাঠামো নিয়ে চিন্তিত রোগীর আত্মীয়রা। অরুন পাল, সুমন দে বলেন, “আমরির ঘটনার পরে হাসপাতালে ভর্তি থাকা আত্মীয়দের নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। হঠাৎ আগুন লাগলে কী ভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এর মোকাবিলা করবে?” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, কয়েকশো মিটার দূরে দমকল কেন্দ্র। তাই আগুন লাগলে দমকল কর্মীরা এসে আগুন আয়ত্তে নিয়ে আসবে। বাঁকুড়া দমকল কেন্দ্রের ওসি সুপ্রিয় মণ্ডল বলেন, “শুধু মেডিক্যাল কলেজ নয়, শহরের অধিকাংশ নার্সিংহোমে ফায়ার লাইসেন্স নেই। এ বার আমরা কড়া পদক্ষেপ নেব।” ডেপুটি সুপার অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, শীঘ্রই দমকল বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে অগ্নিনির্বাপণের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ দিন্দা বলেন, “সরকারি হাসপাতালগুলির পাশাপাশি নার্সিংহোমগুলিও যাতে অগ্নিনির্বাপণের পরিকাঠামো গড়ে তোলে সে জন্য তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আর কোনও প্রকার উদাসীনতা বরদাস্ত করা হবে না।”
অন্য দিকে, সোমবার বাঁকুড়ার কাঠজুড়িডাঙা, সিনেমা রোড ও থানা এলাকায় তিনটি নার্সিংহোমে দমকম কর্মীরা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে যান। কিন্তু সেখানকার পরিকাঠামো নিয়ে দমকল কর্মীরা সন্তুষ্ট হননি। বাঁকুড়া দমকল কেন্দ্রের ওসি সুপ্রিয় মণ্ডল বলেন, “দু’টি নার্সিংহোমে অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা নজরে আসেনি। একটিতে সামান্য পরিকাঠামো রয়েছে। অন্যান্য নার্সিংহোম-সহ কয়েকটি বাড়ি পরিদর্শন করে জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট জমা দেব।”
জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি বলেন, “অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে আগামী ১৫ ডিসেম্বর দমকল ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে নিয়ে একটি বৈঠকে বসা হবে।” বাঁকুড়া জেলা নার্সিংহোম মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক নীলাঞ্জন কুণ্ডুও স্বীকার করেন, “নার্সিংহোমগুলিতে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। এ দিন বৈঠক করে নার্সিংহোমগুলির মালিকদের আগুন নেভানোর যাবতীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বলা হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.