কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিলেন, অগ্নি-বিধি মানতেই তাঁরা বেসমেন্টের রান্নাঘর সরাতে চাইছেন। কর্মী সংগঠন তাতে বাধা দিচ্ছে বলে নিরাপত্তার অভাব বোধ করে হাসপাতাল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু সোমবার পার্ক স্ট্রিটের ‘মিশন অফ মার্সি হাসপাতাল’ ঘুরে ও দমকলের নথি ঘেঁটে উঠে এসেছে অন্য তথ্য। দেখা গিয়েছে, মার্সি হাসপাতালের কাছে দমকলের যে সার্টিফিকেট রয়েছে, তাকে দমকল বিভাগই বলছে ‘মূল্যহীন’। অথচ সেই ‘প্রভিশনাল সার্টিফিকেট’ নিয়েই ২০০৯ সাল থেকে হাসপাতাল চলছিল।
ওই সার্টিফিকেট দেওয়ার সময়ে দমকল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালকে জরুরি কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দেড় বছরের বেশি কেটে গেলেও সেগুলি পূরণ করতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য দফতর এবং দমকল সূত্রে বলা হচ্ছে, বেসমেন্টে রান্নাঘর চালানো যে অনুচিত, তা জানতেন কর্তৃপক্ষ। তা-ও এতদিন রান্নাঘর সরেনি। আমরির ঘটনার পর যথাযথ ফায়ার লাইসেন্স না-থাকায় ও বেসমেন্টে রান্নাঘর নিয়ে তাঁরা ঝামেলায় পড়তে পারেন আশঙ্কা করেই সাত তাড়াতাড়ি হাসপাতাল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্যকর্তাদের প্রশ্ন, “এতদিন বেসমেন্টে রান্নাঘর চালানো কেন বিপজ্জনক মনে হয়নি কর্তৃপক্ষের? একটা বড় দুর্ঘটনা না-ঘটা পর্যন্ত কি কারও নিয়ম মানার কথা মনে হবে না?” হাসপাতাল চত্বরে জায়গা থাকা সত্ত্বেও কেন রান্নাঘর অনেক দূরে সরিয়ে নেওয়ার কথা হচ্ছে, সেই প্রশ্নও উঠেছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের সব কাগজপত্রই বৈধ। আগুন-বিধি লঙ্ঘনের ভয়ে নয়, কর্মী সংগঠনের অসহযোগিতার জন্যই তাঁরা হাসপাতাল বন্ধ করতে চাইছেন।
|
হাসপাতালের বেসমেন্টেই রান্নাঘর। ছবি: সুমন বল্লভ |
দমকলের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, ২০০৯-এর মে মাসে মার্সি হাসপাতালকে দমকল থেকে একটি ‘প্রভিশনাল নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) দেওয়া হয়। সঙ্গে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ সংক্রান্ত কিছু জরুরি ব্যবস্থা নিতেও বলে দমকল। বলা হয়েছিল, ওই নির্দেশগুলি পালন করলে তবেই স্থায়ী এনওসি মিলবে। কিন্তু এখনও সব ব্যবস্থা করতে পারেনি হাসপাতাল। দমকলের ডেপুটি ডিরেক্টর বিভাস গুহর কথায়, “প্রভিশনাল এনওসি-র কোনও মূল্যই নেই। তা নিয়ে হাসপাতাল চালানো অবৈধ। অগ্নি-বিধি লঙ্ঘনের দায়ে কোনও হাসপাতাল-মালিক ধরা পড়লে এই নথি দেখিয়ে জামিনও পাবেন না।”
এত দিন এই সার্টিফিকেট নিয়ে হাসপাতাল চলল কী ভাবে? কেন পুরসভা বা দমকলের নজরে তা এল না? দমকল-কর্তাদের স্বীকারোক্তি, “কার কাছে স্থায়ী সার্টিফিকেট আছে, আর কে প্রভিশনাল সার্টিফিকেট দিয়ে চালাচ্ছে, তা জানার মতো তথ্য বিভাগ বা ভাণ্ডার দমকলের নেই। পুরসভারও দেখা উচিত ছিল, কিন্তু তারা দায়িত্ব পালন করেনি।” তবে প্রভিশনাল সার্টিফিকেটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ তাঁদের তরফে দেওয়া উচিত ছিল বলে মানছেন দমকলকর্তারা।
হাসপাতালের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর তথা সিইও সঞ্জয় প্রসাদের বক্তব্য, “আমরা দেড় বছর আগে থেকেই রান্নাঘর সরাব ভাবছিলাম। কিন্তু আমরি-র পরে আমরা আর ঝুঁকি নিতে চাইনি। ট্যাংরায় আমাদের একটি জমিতে রান্নাঘর সরাতে চাওয়ায় কর্মীদের একাংশ বিরোধিতা করছেন। এ ভাবে হাসপাতাল চালানো যায় না।” কিন্তু দমকল থেকে স্থায়ী এনওসি কেন নেওয়া হয়নি? কেন দমকলের নির্দেশিত কাজও শেষ হয়নি? সঞ্জয়বাবুর উত্তর, “৭৫ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। পুরো কাজটা প্রায় কয়েকশো কোটি টাকার ব্যাপার ছিল। তাই টাকা জোগাড় করতে কিছু সময় লেগেছে। আর কিছু দিনের মধ্যে বাকি কাজও শেষ হয়ে যাবে।” |